ফলে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি ও কৃষক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ ছেড়ে দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আর দলের যুগ্ম মহাসচিবের পদ পাওয়ার পর জাতীয়তাবাদী যুব দলের সভাপতির পদ ছেড়ে দেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
শুধু এই দুই নেতা নন, দলের অসংখ্য নেতা আছেন, যারা নতুন কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সর্বশেষ পাওয়া ‘মযার্দাপূর্ণ’ পদটি রেখে আগের পদ ছেড়ে দেন। কেউ কেউ আবার আগের পদটিকে শ্রেয় মনে করে ছেড়ে দেন নতুন পাওয়া পদটি।
তবে এ ক্ষেত্রে রুহুল কবির রিজভী ছিলেন একটু ব্যতিক্রম। দলের গুরুত্বপূর্ণ ‘সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব’ পদটি পাওয়ার পরও দফতর সম্পাদক’র পদটি ছাড়েন নি তিনি। এ নিয়ে দলের মধ্যে নানা আলোচনা, সমালোচা ও হৈ চৈ হয়। বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরা প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। সব কিছুই নীরবে সয়ে যান রিজভী।
এবার আর তিনি একা নন। সঙ্গে পেয়ে গেছেন যোগ্য সঙ্গী। দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খান সোহেলকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির দায়িত্ব। এখন থেকে কেন্দ্রের যুগ্ম মহাসচিব পদটির পাশাপাশি বিএনপির মহাগুরুত্বপূর্ণ আরেকটি পদ ‘ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সভাপতিও তিনি।
এখন প্রশ্ন উঠছে, ‘এক নেতার এক পদ’ ইস্যুতে অন্যদের বেলায় কঠোর অবস্থান নিলেও রিজভী-সোহেলের ক্ষেত্রে এতোটা নমনীয় কেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া? এই দুই নেতাকে কেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে বসালেন তিনি?
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, রিজভীকে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার পর তারেক রহমানের আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত সাবেক সহ দফতর ম্পাদক আব্দুল লতিফ জনিকে দফতর সম্পাদকের পদে বসানোর সিদ্ধান্ত হয়।
এ খবরে ‘মাথায় আকাশ ভেঙে’ পড়ে রুহুল কবির রিজভীর। তিনি ছুটে যান খালেদা জিয়ার কাছে। কাকুতি-মিনতি করে বলেন, অনেক ঝড়-ঝাপ্টার মধ্যেও তিনি নয়াপল্টন কার্যালয় ছাড়েন নি তিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের সদর দফতরকে আগলে রেখেছেন। যতোদিন রাজনীতি করবেন, ততোদিন নয়াপল্টন কার্যালয় ছাড়বেন না।
জানা গেছে, নাছোরবান্দা রুহুল কবির রিজভীর এই আবদার উপেক্ষা করতে পারেন নি খালেদা জিয়া। ফলে নিজের নেওয়া ‘এক নেতার এক পদ’ সিদ্ধান্ত রিজভীর ক্ষেত্রে শিথিল করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। অবশ্য দলের বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা মনে করেন, দফতর সম্পাদকের পদটি ধরে রাখার জন্য খালেদা জিয়াকে ‘মেন্টাল ব্ল্যাকমেইল’ করেছেন রিজভী।
তবে ওই সময় এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রুহুল কবির রিজভী বাংলানিউজকে বলেছিলেন-ম্যাডামের দেওয়া দায়িত্ব আমি পালন করছি। ম্যাডাম যদি মনে করেন, এ দায়িত্ব অন্য কাউকে দেবেন, তাহলে আমি সরে যাবো।
দলীয় সূত্রমতে, হাবীব উন নবী খান সোহেলের বিষয়টি একটু ভিন্ন মাত্রার। ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক এ সভাপতিকে অত্যন্ত স্নেহ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন এবং তার সাংগঠনিক দক্ষতাকে দলের জন্য কাজে লাগাতে চান তিনি।
তাছাড়া তরুণদের নেতৃত্বে আনার মিশনে যাদেরকে তিনি যোগ্য মনে করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন হাবীব উন নবী খান সোহেল। দক্ষ এ সংগঠককে নিয়ে খালেদা জিয়ার পরিকল্পনাও নাকি দীর্ঘ দিনের।
সূত্রমতে, সোহেলের মধ্যে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বগুণ দেখে তরুণ বয়সে রংপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব করেছিলেন খালেদা জিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব’র পাশাপাশি ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি করেছেন সোহেলকে। সরে এসেছেন ‘এক নেতার এক পদ’ সিদ্ধান্ত থেকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এক নেতার এক পদ’ সিদ্ধান্ত তো দলের প্রয়োজনেই। আবার দলের প্রয়োজনেই যদি এ সিদ্ধান্তের নড়চড় করতে হয়, সেটি করার এখতিয়ার দলীয় প্রধান সংরক্ষণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৭
এজেড/বিএস