ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বিশৃঙ্খলা-দ্বন্দ্বে স্থবির না’গঞ্জ জেলা-মহানগর বিএনপি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০১৭
বিশৃঙ্খলা-দ্বন্দ্বে স্থবির না’গঞ্জ জেলা-মহানগর বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে চলছে চরম বিশৃঙ্খলা। দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদাসীনতা ও নেতাকর্মীদের ওপর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার অভাবেই এমনটি হচ্ছে বলে দাবি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের।

বিএনপির নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কর্মীদের সঙ্গে  তার শ্রমিকসুলভ আচরণ, তাদেরকে নিয়ন্ত্রণের অক্ষমতা, তাকে মানতে কর্মীদের অনীহা, দলের কার্যক্রম জেলায় না করে রূপগঞ্জ কেন্দ্রিক করাসহ নানা কারণেই তার থেকে দূরে থাকছেন নেতাকর্মীরা। প্রথমদিকে জেলার অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকলেও নিজের কর্মকাণ্ডেই তিনি সে অবস্থান হারিয়েছেন বলেও দাবি করছেন কর্মীরা।

তৃণমূলের অভিযোগ, দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানও করতে পারেননি কাজী মনিরুজ্জামান। আর এ নিয়ে একটি থানা বিএনপির কর্মসূচিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সামনেই তাকে ভর্ৎসনা করেন দলের নেতারা।
 
জেলা বিএনপির কর্মিসভায় সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানকে হেনস্থা ও গালিগালাজ করেন এক‍াংশের নেতাকর্মীরা। সভায় চরম হই-চই, বিশৃঙ্খলা ও নেতায় নেতায় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। সভার মাঝেই ফতুল্লা থানা বিএনপির নেতা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ বিশ্বাসকে মারধর করে ‘সরকারের দালাল’ দাবি করে ধাওয়া দেন নেতাকর্মীরা। ধাওয়ার মুখে পড়েন ফতুল্লার অন্য কয়েকজন নেতাও।
 
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ পদ পাওয়ার পরই গাড়ি উপঢৌকন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। দলের কার্যক্রম থেকেও একেবারে দূরে সরে গেছেন। তার অনুগত সিদ্ধিরগঞ্জের কিছু নেতাকর্মী ছাড়া আর কেউই কখনোই তাকে মানেন না। জেলার কোনো থানার ওপর নিয়ন্ত্রণও নেই তার।
 
একই অবস্থা মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালামেরও। পদ পেয়ে মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে নিয়ে একক পথে হাঁটছেন তিনি। সবাইকে নিয়ে ঐক্যের চেষ্টা করলেও তার অনুগত নেতাকর্মী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তার চেয়ে কিছুটা বেশি বুঝে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া তাকে আরো পেছনে ফেলে দিচ্ছেন।

ফলে তার সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে মহানগরের একাধিক বলয়ের, যাদেরকে নিয়ে ডেকে বসে তিনি দলে ঐক্য আনতে পারতেন। কিন্তু আরো দূরে সরিয়ে দলের বিশৃঙ্খলাকে আরো জোরালো করছেন আবুল কালাম।
 
মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামালও দলের কার্যক্রম অনেকটা কমিয়ে এনেছেন পদ পাওয়ার পর থেকে। নতুন কমিটিতে পদে এসে তিনি রাজপথের কর্মসূচি থেকে একেবারেই দূরে রাখছেন মহানগর বিএনপিকে। দলের হয়ে নেতাকর্মীদের এক হতেও তেমন কোনো কাজ করছেন না।

সম্প্রতি দেওভোগে মহানগরের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানকে নিয়ে জাকির খানের সমর্থকদের মহানগর বিএনপির ব্যানারে কর্মসূচি আয়োজন নিয়ে এ টি এম কামালের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জাকির খানের সমর্থকরা হুমকিও দিয়েছেন কামালকে।

তবে সাখাওয়াত হোসেনের কর্মসূচি আয়োজনকে দলের শৃঙ্খলার পরিপন্থী বলে দাবি করেছেন কামাল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে মহানগর বিএনপির ব্যানারে তিনি একা কর্মসূচির আয়োজন করতে পারেন না। দায়িত্বশীল পদে থেকে দলের নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা তার দায়িত্বের মধ্যেও পড়ে।
 
এর আগে মহানগর বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানে জেলা ছাত্রদলের কর্মী আকাশের সঙ্গে মহানগর ছাত্রদলের নেতাদের সংঘর্ষ হয়। তারও আগে একই কর্মসূচিতে এক নেতার নামে স্লোগান দেওয়া নিয়ে মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই হাতাহাতিতে লিপ্ত হন। মহানগর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম সেখানে উপস্থিত থাকলেও পরে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
 
অন্যদিকে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুকে আদালত চত্বরে মারধর করেন একটি অংশের কর্মীরা। তাকে লাঞ্ছিত করার পরও কোনো পদক্ষেপই নেননি মহানগর সভাপতি আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক এ টি এম কামাল।
 
নেতাদের এহেন অবস্থায় দলের কর্মীরা মনে করছেন, এমন বিশৃঙ্খলা চলতে থাকায় কর্মীদের মধ্যেও আরো বিভেদ তৈরি হচ্ছে। নেতারা যদি দ্রুত নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে এমন পরিস্থিতির অবসান না ঘটান, তাহলে নিজেদের খোঁড়া গর্তে নিজেদেরই একদিন পা পিছলে পড়বেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।