ক্ষমতাসীন দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজার মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। আগামী নির্বাচনে এ বিষয়টিকেই প্রধান ইস্যু করে প্রচারণায় নামবে আওয়ামী লীগ।
নেতাদের মতে, দলের শীর্ষ দুই নেতা এখন আদালত স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ। প্রথম শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে কারাবরণের পর একই দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত দলের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে। যিনি দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে পালিয়ে আছেন। সাজাপ্রাপ্ত ও বিদেশে পলাতক আসামি এখন বিএনপির প্রধান নেতা। এ বিষয়গুলো নির্বাচনী প্রচারে বড় করে তুলে ধরা হবে এবং ব্যাপক প্রচারণায় আনা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়ে খালেদা জিয়ার সাজাপ্রাপ্ত হওয়া আগামী নির্বাচনে অবশ্যই প্রভাব ফেলবে। মানুষের কাছে তার দুর্নীতি প্রমাণিত হলো। এর আগেও তার ছেলে কোকোর দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। সিঙ্গাপুর থেকে সেই টাকা দেশে ফেরত এসেছে। তারেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে। এতদিন আমরা যে অভিযোগ করেছি সেটা প্রমাণ হলো। এতে আমাদের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে। নির্বাচনে এ বিষয়গুলো ব্যাপক হারে প্রচারে আনা হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার ৫ বছর এবং তারেক রহমানের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়। রায় ঘোষণার পর পরই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে তার আইনজীবী ও বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। উচ্চ আদালতে জামিন পেলে খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না তা নিয়েও নানা গুঞ্জন চলছে।
তবে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আপিলে খালেদা জিয়ার জামিন হলেও তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি পারবেন না সেটা আইনি প্রক্রিয়া ও পরিবেশ পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। জেল থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পাবেন বা পেতে পারেন। তবে এ প্রক্রিয়াটাও একটু বিলম্বিত হতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, কোনো কিছু রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে গেলে সেটাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে করা হয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিএনপি সেই চেষ্টা করতে শুরু করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো তাদের দলের প্রধানের দুর্নীতি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আদালতে প্রমাণ হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় থেকে ঢালাওভাবে দুর্নীতি করেছে যা এতদিন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে। এখন সেটা আদালতে প্রমাণ হলো।
আওয়ামী লীগের এই নেতাদের মতে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের এই ত্রুটি ও দুর্বলতা আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করবে। খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারুক আর না পারুক অথবা অংশগ্রহণ করুক বা না করুক নির্বাচনী প্রচারে তার এই দুর্নীতির বিষয়টিই প্রাধান্য পাবে। রাজনৈতিক সুফল নিতে আওয়ামী লীগ এটাকে ব্যবহার করবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতি করেছেন, জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছেন, এটা আদালতে প্রমাণ হয়ে জেল খাটছেন। তিনি জনগণের জন্য কোনো আন্দোলন করতে গিয়ে কারারুদ্ধ হননি। এটা জনগণ বুঝবে, বিএনপির নেতা-কর্মীর মধ্যেও উপলব্ধি আসবে। আমরা এতদিন বলে এসেছি বিএনপি ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি করেছে। সেটা এখন একে একে প্রমাণ হচ্ছে। আমাদের নির্বাচনী প্রচারে এটা প্রাধান্য পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
এসকে/এমজেএফ/এমআরএম/এসআইএস