ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সামনে কঠোর আন্দোলন আসছে: ফখরুল

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৯
সামনে কঠোর আন্দোলন আসছে: ফখরুল মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল

রাজশাহী: ‘৭৪ বছর বয়সে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের খালেদা জিয়া কারাবাসে আছেন। ১৮ মাস থেকে তাকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা অনেক চেষ্টা করে দেখলাম কিন্তু তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত করতে পারলাম না। তাই এবার আন্দোলনে নামতে হবে। এটাই একমাত্র পথ। আন্দোলনের মাধ্যমেই তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে হবে। আপনার প্রস্তুত হোন। সামনে এবার কঠোর আন্দোলন আসছে।’

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পূর্বপাশের পাকা রাস্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল আলমগীর একথা বলেন।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে।

তাই এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি দরকার। তিনি মুক্তি পেলেই গণতন্ত্র মুক্তি পাবে।

ক্যাসিনোর টাকা প্রতি মাসে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে যায়  তথ্যমন্ত্রীর এমন অভিযোগের ভিত্তি নেই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, আগে নিজেদের দিকে তাকান। কী চমৎকার আবিষ্কার আপনার? এই কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। আপনারা যে লুকিয়ে লুকিয়ে টাকা পাচার করছেন তা ফাঁস হয়ে গেছে।  

‘দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। আপনাদের (সরকারের) সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে গেছে। ক্ষমতা দিয়ে আর টিকে থাকা যাবে না। তাই এখনও সময় আছে সংসদ ভেঙে দিয়ে অবিলম্বে নিরপেক্ষ কমিশনের অধীনে নির্বাচন দিন। ’  

তিনি বলেন, আপনারা জনগণকে বোকা ভাবেন। জনগণকে বিশ্বাস করেন না। আর করবেন বা-ই কেন আপনার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে যাচ্ছেন। ক্যাসিনো তো ক্যাসিনোই ছাড়া কত হাজার কোটি টাকা গেছে? এক বছরে ২৭ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। তারচেয়েও বড় অপরাধ আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২৬ লাখ লোককে আসামি করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১ লাখ মামলা করা হয়েছে। তালিকা করে ১শ জনের নাম দিয়েছে। বাকি ৭শ হলো অজ্ঞাতনামা। সে অজ্ঞাতনামায় একজনকে ধরে এনে বলে, দাও। তা না হলে থাকো। এখানে যারা উপস্থিত আছেন, তাদের অর্ধেকের বেশি মানুষের নামে মামলা আছে। এভাবে চিরতরে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আজ না দেন কাল দিতেই হবে।  

বিএনপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আজকের সমাবেশে আমরা সবাই একটি প্রাণের দাবি নিয়ে এসেছি। জনগণের ভোটে তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সরকার কারাবন্দি করে রেখেছে। তাকে নির্জন কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে যেখানে কেউ থাকে না। আজ অসুস্থাবস্থায় হাসপাতালের একটি ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে আছেন। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে যে কোনো মূল্যে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দীর্ঘ ১৮ মাস সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। খুবই অসুস্থ হওয়ার পরও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি নাকি এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।  

মির্জা আব্বাস বলেন, জনগণ এই সরকারের সঙ্গে নেই। আজ দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। লুটপাট করে শেয়ার মার্কেটকে ধ্বংস করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে টাকা আত্মসাতের অভিযোগের কথা হয়েছে তা ফান্ডেই আছে, বরং দিন দিন আরও বাড়ছে।  

সমাবেশে তাদের বাধা দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে প্রেসিডিয়াম সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনের এ সমাবেশে আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে আসার পর সবদিকে খালি মনে হয়েছে। রাস্তায় যানবাহন নেই, দোকানপাট বন্ধ। বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীকে ভুতুড়ে শহরে পরিণত করা হয়েছে। সমাবেশ যেন সফল হতে না পারে সেজন্য আগে থেকে সমাবেশের অনুমতিও দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের নেতা-কর্মীরা বাধা পাচ্ছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশের ফিরিয়ে আনতে আমাদের সামনে একটা পথ খোলা আছে। অধিকার আদায়ের জন্য আমাদের রক্ত দিতে হবে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মতো আমাদের রক্ত দিতে হবে। আমাদের এবারের আন্দোলন রক্ত দেওয়ার আন্দোলন, এবারের আন্দোলন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও স্বৈরাচারী অবৈধ সরকারকে বিতাড়নের আন্দোলন।  
 
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল মনির, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা উপস্থিত আছেন। এছাড়া বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষকদলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।  

মহাসমাবেশ পরিচালনা করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন।

মহাসমাবেশক কেন্দ্র করে রাজশাহী মহানগরীতে ব্যাপক নিরাপত্তা নেয় রাজশাহী মহানগর পুলিশ। রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই মহানগরীর মোড়ে মোড়ে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা দেখা গেছে। সমাবেশস্থলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কুইক রেসপন্স টিমের (কিউআরটি) সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। প্রস্তুত রাখা হয় জলকামান ও এপিসি কার।

এর আগে শনিবার ২২টি শর্তে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠের পূর্বপাশের পাকা সড়কে বিএনপিকে বিভাগীয় মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেয় রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি)।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
এসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।