ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

করোনা ঠেকাতে সর্বদলীয় কমিটি চান রাজনৈতিক নেতারা

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২০
করোনা ঠেকাতে সর্বদলীয় কমিটি চান রাজনৈতিক নেতারা

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য গড়ে তুলতে সর্বদলীয় বৈঠকের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা। সব দলকে নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের দাবি তাদের। 

এ ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তথা দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তারা।

বিশ্বজুড়ে করেনা ভাইরাসের তাণ্ডব চলছে।

এখন পর্যন্ত এই ভাইরাস ১ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১৭ লাখের বেশি মানুষ। প্রতিদিনই আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এই করেনা ভাইরাস বাংলাদেশেও আঘাত হেনেছে। ইতোমধ্যে ৪৮২ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন। বিশ্ব পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই সংকট বাংলাদেশেও আরও তীব্র হতে পারে বলে সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। মানুষের জীবনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটও তীব্র হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন।

তাদের মতে, করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষা এবং অর্থনীতিসহ যেসব সংকট তৈরি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সমন্বিত প্রয়াস জরুরি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রাজনৈতিক দল ও সামাজিক শক্তির মতামত নেওয়া জরুরি হয়ে উঠেছে। সবার মতামতের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে বলেও তারা মত দেন।

এর জন্য তারা সরকারকে সর্ব দলীয় বৈঠকের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও এই জোটের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা প্রত্যেকেই এ দাবি করেন।

তাদের মতে, এই সংকট মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে  আওয়ামী লীগের বড় ভূমিকা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বৈঠক আহ্বান করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীকেই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।  

ইতোমধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে সর্ব দলীয় বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৩ এপ্রিল এ বৈঠকে সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ১৪ দলের অন্যতম নেতা রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, ‘সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সংকট মোকাবিলায় কাজ করতে হবে। মানুষের মধ্যে একটা অনুভূতি যাতে তৈরি হয় যে সবাই মিলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করছে। এ জন্য সব দলের বৈঠক দরকার। সবাই মিলে বসে মতামত দিলে কী করা যায় তার একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে। এক করা না হলে যে সংকট তৈরি হয়েছে তার সুযোগ অনেকেই নেওয়ার চেষ্টা করবে। ’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই সংকট মোকাবিলায় একটা জাতীয় ঐক্যমত তৈরি করা দরকার। দল মত নির্বিশেষে রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতি সব শক্তিকে একত্রিত করে এই সংকট মোবিলায় তড়িৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা সরকারে আছে তাদেরকে এই উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আওয়ামী লীগকে এ বিষয়ে জানিয়েছি। তারা বলেছে আলোচনা করে জানানো হবে। ’

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি ও ১৪ দলের নেতা শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সংকট আরও জটিল হতে পারে। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে না দাঁড়ালে মানুষকে বাঁচানো যাবে না, ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম বন্ধ হবে না। এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল দলকে নিয়ে বৈঠক করে একটা কমিটি গঠন করতে হবে। সেই কমিটি সব কিছু মনিটরিং করবে। সবাইকে নিয়ে বসার জন্য প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিতে পারেন। ’

বাসদের সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এটা একটা জাতীয় দুর্যোগ। জাতীয়ভাবে এই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সরকারি দলের দায়িত্ব সবাইকে নিয়ে বসা, সবার মতামত নেওয়া। আমরা সরকারের কাছে এ দাবি জানিয়েছি। তারা কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আমরা সব দলকে নিয়ে আগামী ১৩ এপ্রিল বসছি। সেখানে আমরা জামায়াতকে বাদ দিয়ে সব দলকে আহ্বান জানিয়েছি। ’

ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ও ১৪ দলের নেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে এক সঙ্গে বসে এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে ভাবা দরকার। এ ব্যাপার সরকারি দলের বড় ভূমিকা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ ধরনের একটা উদ্যোগ নিতে পারেন। তাহলে একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে। ’  

বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২০
এসকে/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।