ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

গুলশানে বিএনপির সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ লন্ডনে

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২০
গুলশানে বিএনপির সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ লন্ডনে

ঢাকা: গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ লন্ডনে পাঠানো হয়েছে। ওই ফুটেজ দেখে এবং গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর দেশের চারটি আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকে বিএনপি। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে বিকাল ৫টা থেকে সাক্ষাৎকার শুরু হলেও দুপুরের পর থেকে সেখানে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নেয়। এর মধ্যে ঢাকা-১৮ আসনের দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ ও এসএম জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

এ ঘটনায় কফিল উদ্দিন ও এসএম জাহাঙ্গীর একে অপরকে দোষারোপ করে বলেন, সংঘর্ষের সময় বহিরাগতরা দলীয় লোকদের ওপর হামলা করে আহত করেছে। ওই সংঘর্ষে একজন গুরুতরসহ আরও ১৫/১৬ জন আহত হন।  

সূত্র জানায়, হামলার দিন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত সংবাদ ও সংগৃহিত ভিডিও ফুটেজ লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী সাত প্রার্থী এ ঘটনায় এসএম জাহাঙ্গীরকে দায়ী করে তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার জন্য তারেক রহমানের কাছে আবেদন করেছেন। ফুটেজে দেখা যায়, একজন দাড়িওয়ালা কর্মীর মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে। তার নাম নাজিম উদ্দিন। তিনি কফিল উদ্দিনের সমর্থক। এসময় কয়েকজনকে টেলিভিশন রিপোর্টারের সঙ্গে বলতে দেখা যায়। তারা বলেন, যারা হামলা করেছে তারা জাহাঙ্গীরের লোক। এদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের শালা ছাত্রলীগ নেতা দীপু সিকদার নেতৃত্বে দেন বলেও অভিযোগ করা হয়।  

ওই চিঠি ও ফুটেজ পাওয়ার পর দলের যুগ্ম-মহাসচিব ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকনকে গত শুক্রবার (০২ অক্টোবর) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরামর্শ ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী চিঠি দিয়ে খায়রুল কবির খোকনকে এই দায়িত্ব দেন।

জানা গেছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরই তারেক রহমান ওই আসনের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন। সেক্ষেত্রে যুবদল ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর দোষী হতে পারেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন। যে ভিডিও ফুটেজটি লন্ডনে পাঠানো হয়েছে, তা বাংলানিউজের কাছেও এসেছে। তাতে দেখা গেছে, এসএম জাহাঙ্গীরের সমর্থকরাই হামলা করেছে। অন্য সব প্রার্থীও এ ঘটনার জন্য এসএম জাহাঙ্গীরকে দায়ী করেছেন। একই সঙ্গে ওই ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ঘটনার সময় টেলিভিশন সাংবাদিকদের সাথে মাঠ পর্যায়ের যেসব কর্মীরা কথা বলেছেন, তারা প্রায় সবাই সংঘর্ষের জন্য জাহাঙ্গীরকে দায়ী করেছেন।

জানতে চাইলে, এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান খায়রুল কবির খোকন বাংলানিউজকে বলেন, “আমাকে দলের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দিয়ে গুলশানের সংঘর্ষের ঘটনার তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আমি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন জমা দেব। ”

তিনি বলেন, “আমি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আশা করি শিগগিরই তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে পারবো। ”

গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছে, খায়রুল কবির খোকনের তদন্ত রিপোর্ট ও ভিডিও ফুটেজ দেখে দলীয় হাই কমান্ড আসনটির মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে।

আসনটিতে ৯ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে সাক্ষাৎকার দিলেও মূলত তিনজন প্রার্থীর মধ্যে থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে জানা গেছে। ওই তিনজন হলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠ উত্তরায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন সাদী ও যুবদল ঢাকা উত্তরের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর।

দলীয় সূত্র জানায়, এসএম জাহাঙ্গীর মনোনয়ন পাওয়ার এক নম্বর স্থানে থাকলেও বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার ভূমিকা, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বর্তমানে সরকারি দলের সঙ্গে তার সখ্য থাকায় তিনি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছেন। গত ১২ বছরে দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার যত মামলা দিয়েছে তার তালিকায় জাহাঙ্গীরও আছেন। এই সরকারের আমলেই আবার সরকারি দলের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে অনেকগুলো মামলার চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, যেখানে দলীয় নেতাকর্মীদের নামে প্রতিনিয়ত মামলা হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে, সেখানে আঁতাত না করলে মামলা থেকে জাহাঙ্গীরের নাম প্রত্যাহার হয় কিভাবে?

এ বিষয়ে এসএম জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, “৩২ বছর ধরে দলীয় রাজনীতি করি। কখনও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করিনি। আগামীতেও করার ইচ্ছা নাই। আমার বিরুদ্ধে ১৩০টির বেশি মামলা আছে। নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে হয়। মামলা প্রত্যাহার বা নাম বাদের তথ্য সঠিক নয়। সংঘর্ষের ঘটনায়ও আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ” 

কফিল উদ্দিন আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, “সেদিন গুলশানে আমার ২/৩ হাজার সমর্থক ছিল। তাদের কাছে কোনো অস্ত্র-বা লাঠি ছিল না। অপরদিকে জাহাঙ্গীরের সমর্থকেরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশীয় অস্ত্র ও বড় বড় লাঠি নিয়ে আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করে। তারা তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড থেকে শ্রমিক লীগের লোকজন নিয়ে আসে। এছাড়া মিরপুর-বাড্ডা থেকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের লোকজন নিয়ে হামলা করে। এতে নেতৃত্ব দেয় জাহাঙ্গীরের শালা ছাত্রলীগ নেতা দিপু সিকদার। জাহাঙ্গীর আওয়ামী পরিবারে বিয়ে করার সুবাদে ইতোমধ্যে ১১টি মামলা থেকে অব্যাহিত নিতে পেরেছে। ”

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, “গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এসএম জাহাঙ্গীর তার নিজের ভোটও দিতে যাননি। তার সেন্টারে ধানের শীষের কোনো এজেন্ট ছিল না। এখন সামনে মনোনয়নের ব্যাপারে হাই কমাণ্ড যা সিদ্ধান্ত দেবে আমি মেনে নেব। ”   

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদ্য সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হয়। নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী ওই আসনে আগামী ১২ নভেম্বর ভোট গ্রহণ করা হবে। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ১৩ অক্টোবর।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২০
এমএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।