ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ মে ২০২৫, ২৪ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

সরকারে থেকে বিশেষ দলের পক্ষে কাজের অভিযোগ উঠেছে: নজরুল ইসলাম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০৪, মে ২১, ২০২৫
সরকারে থেকে বিশেষ দলের পক্ষে কাজের অভিযোগ উঠেছে: নজরুল ইসলাম

ময়মনসিংহ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মো. নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমরা যারা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ছিলাম, তারা সবাই মিলে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দায়িত্ব দিয়েছি। বিগত সাড়ে নয় মাস ধরে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আছে।

এসময়ে এখনো আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলি নাই। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে জনগণের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারে থেকে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ভালো লক্ষণ নয়। এটা আমাদের ভালো লাগে না।

তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি জেলা, মহানগর এবং প্রতিটি গ্রামে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম চালাতে হবে। তবে নতুন সদস্য বুঝে শুনে নিতে হবে। জানতে হবে- তারা বিএনপির নীতি আদর্শে বিশ্বাস করে কী-না। যিনি নতুন সদস্য হতে চান- তিনি কি বিপদে এড়ে এসেছেন, না-কি ক্ষমতার লোভে এসেছেন, তাও বিবেচনায় নিতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন সদস্য করার আগে পুরোনোদের মতামত নিতে হবে। যারা দীর্ঘদিন দলে সক্রিয় থেকে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তারা সামনে যাবেন। আর যারা পড়ে আসছেন, তারা পেছনে থাকবেন। কারণ নেতা তাকে মানতে হবে, যার দলে অবদান বেশি।        

বুধবার (২১ মে) দুপুর ২টায় ময়মনসিংহ নগরের তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে বিভাগীয় বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

বিএনপি নেতা ইশরাকের প্রসঙ্গ টেনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল রায় দেওয়ার পরও প্রশানসিক ক্ষমতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে যিনি মেয়র পদে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। যে নির্বাচন কমিশনকে এ সরকার নিয়োগ দিয়েছে, সেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করলেও তাদের হুমকি দেওয়ার জন্য ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি ভালো লক্ষণ না। দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা বিভিন্ন সময় এ অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দেখা করে আমাদের মতামত দিয়েছি। কিন্তু অনেক কথাই কার্যকর হচ্ছে না।    

সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামে দেশের লাখ লাখ মানুষ জেল-জুলুম সহ্য করে যে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল, সেই ক্ষেত্রে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও এখনো আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য পূরণ হয়নি। আংশিক দাবি আদায় হয়েছে। এখন প্রয়োজন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যেখানে আইন প্রণয়ন করে সংস্কার করা যায়। স্থানীয় সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যম হতে পারে না। আমরা বলেছি, ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়া হোক। নির্বাচন কমিশন বলছে, জুনের মধ্যে তারা প্রস্তুত। আবার সংস্কারও চায়। বিএনপির ৩১ দফায় রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের কথা বলা হয়েছে।    

ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আসতে হবে জানিয়েছে তিনি বলেন, বিএনপি যখন সংস্কারের কথা বলেছে, তখন বাংলাদেশের কোনো দল সংস্কারের প্রস্তাব করেনি। তখন অনেক দলের জন্মও হয়নি। কিন্তু তারা এখন আলোচনা করে বিএনপি সংস্কারের পক্ষে না। তাদের জানতে হবে, বিএনপির জন্ম হয়েছে রাষ্ট্রের সংস্কারের জন্য। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যতগুলো সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, সেসবই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফায় আছে। বরং অনেক বাদ পড়েছে। আগামী দিনে বিএনপি জনগণের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতার দায়িত্ব পেলে এসব সংস্কার করবে। বিএনপি থেকে বলা হয়েছে, আমাদের থেকে ভালো কোনো প্রস্তাব কেউ করলে বিএনপি তা সাদরে গ্রহণ করবে।      

বিএনপির কর্মী হিসেবে গর্ববোধ করার অনেক কিছু আছে জানিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপির কর্মী হিসেবে গর্ব করার অনেক কিছু আছে। বিচার বিভাগ স্বাধীন করেছে বিএনপি। মিডিয়ার স্বাধীনতা অবাধ করেছে। রুদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্ত অর্থনীতিতে পরিণত করেছে। খাদ্য উৎপাদনের সূচনা, পোশাক, রেমিটেন্সের সূচনা বিএনপির হাত ধরে। পল্লীবিদ্যুৎ, সমুদ্রে মাছ আহরণ, নারী শিক্ষা, উপবৃত্তি, শিক্ষার জন্য খাদ্য, সমবায় প্রতিষ্ঠা, গ্রাম সরকার গঠন সব করেছে বিএনপি।  

বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা একটু পড়াশোনা করেন। বিএনপির কার্যক্রম সর্ম্পকে অনেক জানার আছে। তাহলে বিএনপি নিয়ে কারো কথা বলার সাহস হবে না।  

এসময় নজরুল ইসলাম খান বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। কিন্তু কেউ কেউ সরকারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষার দিকে তাকান। বুঝুন, তারা কী চায়।  

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলম বলেন, পতিত স্বৈরাচারের কোনো লোক বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। তারা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তারা খুনি, তাদের হাতে রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে। তাদের কোনো সদস্যের ঠাঁই বিএনপিতে হতে পারে না। যদি কেউ জেনে বা না জেনে ভুলে ফ্যাসিস্ট দোসরদের দলের সদস্য করেন এবং তা নিয়ে যদি অভিযোগ ওঠে, সেই অভিযোগ প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কারণেই সতর্কতার সঙ্গে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ এবং নবায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

এসময় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ওয়ারেস আলী মামুন এবং আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোষাধক্ষ মো. রাশিদুজ্জামান মিল্লাত।  

এছাড়া বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন বাবলু, উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক একেএম এনায়েত উল্লাহ কালাম, সদস্য সচিব মোতাহার হোসেন তালুকদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর মাহমুদ আলমসহ নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর এবং শেরপুর জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।

উদ্বোধন শেষে উপস্থিত বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও মহিলা দলসহ বিএনপির সব অঙ্গ সংগঠনের নেতারা অতিথিদের কাছে সদস্য ফরম ও ২০ টাকা করে জমা দিয়ে তাদের সদস্য পদ নবায়ন করেন। পর্যায়ক্রমে ময়মনসিংহ মহানগরসহ বিভাগের প্রতিটি জেলায় অনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কার্যক্রম চলবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।  

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।