ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২, ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৭ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত: যা হচ্ছে যশোর মেডিকেল কলেজে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৬, জুলাই ২, ২০২৫
সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত: যা হচ্ছে যশোর মেডিকেল কলেজে

যশোর: পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার শংকায় যশোর মেডিকেল কলেজে (যমেক) সকল প্রকার রাজনৈতিক (সাংগঠনিক) কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। আগামী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

গত ৩০ জুন সোমবার এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

যমেক এর সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি দেশে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর যেভাবে ক্যাম্পাসে ‘রাজনৈতিক পল্টিবাজি’ শুরু হয়েছে তাতে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে। সেই সাথে ফ্যাসিস্ট উত্তর ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু রাজনীতির যে ধারা তৈরি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তাও নস্যাৎ হওয়ার শংকায় পড়েছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর যশোর মেডিকেল কলেজে রাজনৈতিক পালাবদল শুরু হয়। এর আগে এই ক্যাম্পাসে এককভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ। তাদের পৃষ্টপোষক ছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকেরা।  

সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া বিগত হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিলেন যশোর মেডিকেল কলেজের শিক্ষকরা।  

তারা ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’র স্লোগান দিয়ে প্রকাশ্যে সরকারি দলের ‘লোক’ বনে গিয়েছিলেন। এসব শিক্ষক যশোর মেডিকেল কলেজকে স্বাচিপ’র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যান। যমেক এর এমন কোনো কাজ ছিল না যা তাদের মতামতের বাইরে পরিচালিত হয়েছে।  

একইভাবে পুরো ক্যাম্পাসে একাধিপত্য কায়েম করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। রাজনীতির নামে শিক্ষকদের দলাদলিতে ভূমিকা রাখা, টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্যেও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল একচেটিয়া। ক্যাম্পাসে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব রাখতে দেয়নি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তাদের নানা অপকর্মের কারণে বার বার মিডিয়ার শিরোনাম হয়েছে যশোর মেডিকেল কলেজ।  

কথিত স্বাধীনতাপন্থীদের দৌরাত্মে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক মনোভাবাপন্নরা চরম অন্যায়ের শিকার হলেও প্রতিবাদ করার সাহস পেতেন না। সামান্য মতের মিল না হলেই বিএনপি, জামায়াতপন্থী অনেক শিক্ষক (চিকিৎসক) হয়রানিমূলক বদলীর শিকার হয়েছেন স্বাচিপ আর ছাত্রলীগ নেতাদের নগ্ন হস্তক্ষেপে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের পর পুরো পাল্টে গেছে এখানকার দৃশ্যপট। যারা এতদিন আওয়ামী লীগের সামনের সারিতে বসার জন্য ‘কামড়াকামড়ি’ করতেন তারাই এখন বিএনপিপন্থী ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)’ এর পতাকাতলে সমবেত হওয়ার জন্য অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অনেকে ভোল পাল্টে ভীড় করছেন ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে।  

মূলত ফ্যাসিস্টের দোসর শিক্ষক ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের ক্ষমতার প্রভাব ও বলয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার বলি হতে যাচ্ছে যশোর মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস। এদের ইন্ধনেই মেডিকেল শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সন্ধানী’র পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা পালন করছে পৃথক কর্মসূচিও। এসব ঘিরে শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে চরম উত্তেজনা শুরু হয়েছে। বুঝে বা না বুঝে ড্যাবের অনেক নেতাই ‘এই পালে হাওয়া দিচ্ছেন’ বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

সন্ধানীর এই পাল্টাপাল্টি কার্যক্রম নিয়ে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠার শংকা থেকেই কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে মত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।  

বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন যশোর মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক ও যশোর ড্যাব নেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কিছু সুযোগ সন্ধানী ভালো থাকার জন্য বা নিরাপদ থাকার জন্য চেষ্টা করছে এটা ঠিক। তবে, আওয়ামী লীগ পন্থী শিক্ষকরা ড্যাব এ বা ছাত্রলীগাররা ছাত্রদলে আশ্রয় নিচ্ছেন বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তাও মানতে নারাজ তিনি।

এই নেতা বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই সরাসারি রাজনীতির সাথে জড়িত থাকেন না। অনেকে সংগঠন করলেও ভয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রমে যুক্ত হতে পারেননি। তাদের কেউ কেউ ক্ষমতাসীনদের কারণে বাধ্য হয়েছেন তাদের মিছিল মিটিং এ যেতে। দীর্ঘ প্রায় দশ বছর পর ছাত্রদল নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পাওয়ায় অনেকে তাদের ছাত্রলীগ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ডাক্তারদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা-উল্লেখ করেছেন তিনি।

তবে, যশোরে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর দুটি গ্রুপ রয়েছে স্বীকার করে এই চিকিৎসক ও চিকিৎসক নেতা বলেন, এটা উল্লেখ করার মতো না।

যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ এইচ এম আহসান হাবিব সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানীর পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির কারণে কলেজের পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। সে কারণে ক্যাম্পাসে যে কোনো সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  

এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা গত ৩০ জুন কলেজের নোটিস বোর্ডে টাঙানো হয়েছে। নোটিসে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সন্ধানীসহ সকল সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করা হলো। ’

এসএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।