কৃষির উর্বর ভূমি খ্যাত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি যে কোনো ফসল চাষাবাদের জন্য আদর্শ অঞ্চল। এ অঞ্চলের ভূমিকে সোনাফলা মাটি বলে অবহিত করে কৃষি গবেষকরা।
উর্বর ভূমি, অনুকূল পরিবেশ, কম পরিশ্রম এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বিলাতি ধনেপাতা চাষে নিজেদের মনোনিবেশ করছেন। এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে বর্তমানে চমক সৃষ্টি করেছে বিলাতি ধনেপাতা চাষ। দেশজুড়ে বিলাতি ধনেপাতার ব্যাপক চাহিদা বাড়ায় রাঙামাটিতে উৎপাদিত বিলাতি ধনেপাতার বাজার দু’শো কোটি টাকা ছুঁয়েছে।
জেলার কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্যা ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে বাঁশের মাচা। দেখে মনে হতে পারে পানের বরজ রাখা হয়েছে। এই ছাউনির নিচে তাকালে চোখে পরবে লম্বা পাতা বিশিষ্ট এক জাতীয় সবুজ উদ্ভিদ। এটিই হলো বিলাতি ধনেপাতা। কৃষকরা সকলে মিলে বিলাতি ধনেপাতা বাছাই করে আঁটি বেধে নিয়ে হাটে নিয়ে যাচ্ছে। এসব হাট থেকে বেপারীরা পাইকারী মূল্যে বিলাতি ধনেপাতা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাহিদা মতো পাঠাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু কাপ্তাই উপজেলায় নয়; জেলার কাউখালী, বিলাইছড়ি উপজেলায়ও বিলাতি ধনেপাতা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
রাঙামাটি কৃষি বিভাগ বলছে, পাতা জাতীয় ফসলটি সুগন্ধযুক্ত, উচ্চ পুষ্টি ও ভেষজগুণ সমৃদ্ধ এই সবজিটির এখন সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। তবে এই ফসল জলাবদ্ধতা সইতে পারে না। এগুলো চাষের জন্য জমিতে যেমন রস থাকতে হয়, তেমনি পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হয়। এসব বিবেচনায় পার্বত্যাঞ্চলের মাটিতে এই ধনেপাতা চাষের আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে। ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিলাতি ধনেপাতা এখন পার্বত্যাঞ্চলের অন্যতম অর্থকরী ফসল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি জানান, এ সবজি উৎপাদনে আলো ছায়ার প্রয়োজন হয়। ফলে মাচা দিয়ে একইসঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে বিভিন্ন সবজিও চাষ করা যায়। অধিক লাভজনক হওয়া বিলাতি ধনেপাতা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্যা ইউনিয়নের কৃষক অমিও চাকমা বলেন, এবার এক একর জমিতে বিলাতি ধনেপাতা চাষ করেছি। বাজারে এখন এক কেজি ধনেপাতা ৮০ থেকে ৯০ টাকা ধরে বিক্রি করা হচ্ছে। সে হিসাবে আমার জমিতে উৎপাদিত ধনেপাতা দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার বিক্রি করা যাবে।
এ কৃষক আরো বলেন, এই ধনেপাতার বীজ এক সাথে গজায় না। একবার রোপণ করলে কম করে চারবার ধনেপাতা সংগ্রহ করা যায়।
একই এলাকার কৃষাণী সজনি চাকমা বলেন, এই বিলাতি ধনেপাতা চাষ করতে হলে আলো ছায়ার প্রয়োজন হয়। তাই এগুলো চাষ করলে মাচা দিতে হয়। সেই মাচাতেই লাউ, বরকটি, চিচিঙ্গা চাষ করতে পারি। এতে আমাদের বাড়তি আয় হয়।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পাহাড়ি বিলাতি ধনেপাতার চাহিদা বেড়েছে সারা দেশে। ফলে এ অঞ্চলে উৎপাদিত বিলাতি ধনেপাতার সারাদেশে দু’শো কোটি টাকার বাণিজ্য সৃষ্টি হয়েছে।
আর্থিক দিক বিবেচনা করে এ ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে যোগ করেন কৃষি কর্মকর্তা।
এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, জেলায় এ বছর ৫০ হেক্টের জমিতে বিলাতি ধনেপাতার চাষ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার মেট্রিক টন।
এএটি