ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

টেকনাফে ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দি ৩ হাজার পরিবার  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৪৮, জুলাই ৭, ২০২৫
টেকনাফে ভারী বৃষ্টিতে পানিবন্দি ৩ হাজার পরিবার   পানিবন্দি ৩০ হাজার পরিবার

অব্যাহত ভারী বর্ষণে কক্সবাজার-টেকনাফে অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ৩ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

 

কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হলেও সোমবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে বৃষ্টির মাত্রা বেড়ে গেছে। ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা।  

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মানুষের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। সোমবার সকাল থেকে অনেক পরিবার চুলোয় আগুন জ্বালাতে পারেনি।  

টেকনাফ পৌরসভা সংলগ্ন কলেজ পাড়ার অধিকাংশ বসতবাড়ি, শীলবনিয়া পাড়া, ডেইলপাড়া, জালিয়াপাড়া, অলিয়াবাদ, খানকারডেইল, চৌধুরীপাড়া, কেকে পাড়ার প্রায় অংশ পানিতে ডুবে গেছে।  

এছাড়া টেকনাফ সরকারি কলেজ, আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরো প্রাঙ্গণ পানিতে নিমজ্জিত অবস্থায় রয়েছে। হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী, চৌধুরী পাড়া, কোনারপাড়া, ওয়াব্রাং, মৌলভীবাজার, ফুলের ডেইল, হোয়াইক্যং ইউনিয়নের খারাংখালী, লম্বাবিল, কানজর পাড়া, মিনাবাজারের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।  
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জামাল হোসাইন বলেন, ভারী বৃষ্টিতে অনেক বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে বাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। মূলত কিছু দুষ্কৃতকারী কর্তৃক খাল দখলের পাশাপাশি ড্রেন পরিষ্কার না থাকায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে।  

সাবরাং উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, এভাবে একটানা বৃষ্টি খুব কম সময়ে দেখা গেছে। চারদিকে পানি থৈ থৈ করছে। অধিকাংশ বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। খাওয়া-দাওয়া, ঘুমের কষ্ট তো আছেই, প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদন করতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জনজীবন অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে।

সাবরাং ইউনিয়নের কুরাবুইজ্জা পাড়া, ফতেহলিয়া পাড়া, মুন্ডার ডেইল, চান্দলী পাড়ার একাংশ, হাদুর ছড়া, খুরের মুখের অধিকাংশ বসতবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। এছাড়া ওই ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ মাঝের পাড়া, হাজীর পাড়া ও দক্ষিণ পাড়ার দেড় শতাধিক পরিবার পানিতে ডুবে গেছে।  

উত্তর পাড়ার মাঝের ডেইল, ডাঙ্গর পাড়ার পূর্ব পাশ, কোনার পাড়ার পশ্চিম পাশের শতাধিক পরিবার চরম বিপাকে পড়েছেন।  
এছাড়া ক্যাম্প পাড়া, বাজার পাড়ার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে।  

স্থানীয় বাসিন্দা সাংবাদিক ছৈয়দ আলম বলেন, পূর্ব রঙ্গিখালী এলাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৩০০টি পরিবার দীর্ঘ সময় পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করেন। প্রতি বছর বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে এই এলাকায় জীবন-জীবিকা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাভাবিক চলাচল চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।  

উক্ত সমস্যাগুলো কেবল স্বল্পমেয়াদি ত্রাণ বা সহায়তা দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। বরং এ অঞ্চলের জন্য প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা, যার আওতায় নিচু জায়গা ভরাট, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়ন, রাস্তা নির্মাণ ও উঁচু প্ল্যাটফর্মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, টানা বৃষ্টির প্রভাবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অনেক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি পরিবারগুলোর কাছে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।  

এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে মাইকিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি পৌরসভার আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষের মাঝে তিন বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।