গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ ও সহিংসতায় চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন বেশ কজন।
নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ভেড়ারবাজার এলাকার আজাদ তালুকদারের ছেলে ইমন তালুকদার (১৮), টুঙ্গিপাড়ার ইদ্রিস মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা (৩৫), থানার পাড়ার কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (২২) এবং শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫)। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শেখ মো. নাবিলও এ তথ্য জানান।
এদিন গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা চালায় ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এমনকি গোপালগঞ্জ কারাগারেও হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির ক্যাডাররা। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বুধবার রাত ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৬টা পর্যন্ত এই কারফিউ বলবৎ থাকবে।
এনসিপির পূর্বঘোষিত পদযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন ছিল গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে। এ নিয়ে সেখানে সার্বিক প্রস্তুতির পাশাপাশি সমাবেশ মঞ্চ তৈরি করা হয়। কিন্তু আগের দিন রাত থেকেই আওয়ামী লীগের লোকদের এনসিপির কর্মসূচি পণ্ড করতে অনলাইন-অফলাইনে সংগঠিত হতে দেখা যায়।
এর মধ্যে সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে টহলরত পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালের সমর্থকেরা।
এরপর সদর উপজেলার কংশুর এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। দুপুরে তারা গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুর করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে এনসিপির নেতা-কর্মীরা সেখানে যায় এবং সমাবেশ করেন। কিন্তু সমাবেশ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা আবার এনসিপির গাড়িবহরে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোকেরা। তখন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। এসময় অনেক সাংবাদিকও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মাঠে নামে সেনাবাহিনী।
পরে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় বের হয় এনসিপির নেতাদের গাড়িবহর। রওয়ানা হয় খুলনার উদ্দেশে।
এদিকে এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ জেলা রিপোর্টার্স ফোরামের অফিসে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের লোকেরা। এতে যমুনা টিভির সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোজাম্মেল হোসেন মুন্না ও ডিবিসি টেলিভিশনের রিপোর্টার সুব্রত সাহা বাপিসহ অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
তাদেরসহ এ ঘটনায় আহত অনেককে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না যে কতজন হতাহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
জুলাই মাসজুড়ে জেলায় জেলায় পদযাত্রা করছে কেন্দ্রীয় এনসিপি। এরই অংশ হিসেবে আজ তারা গোপালগঞ্জে লং মার্চ ও সমাবেশ করেন।
এসআই