ফরিদপুরে মোটর ওয়ার্কার্স শ্রমিক ইউনিয়নের (১০৫৫) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত পৌর বাস টার্মিনাল এলাকায় দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজিত শ্রমিকরা বেলা ১২টা থেকে ফরিদপুর থেকে সব রুটের আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
জানা যায়, সকাল ১১টার দিকে নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ফরিদপুর পৌর বাস টার্মিনালে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করে শ্রমিকদের একটি পক্ষ। এ সময় অপরপক্ষ সেখানে হামলা চালিয়ে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং মাইক ভাঙচুর করে। লাঠিসোঁটা নিয়ে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকদের ভাষ্যমতে, ইউনিয়নের ৭ হাজার ২০০ সদস্যের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ২ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়। এরপর গত ১৭ জুলাই ২১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি পদে ইয়াছিন মোল্যা ও সাধারণ সম্পাদক পদে মেহেদী হাসানকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। এই নির্বাচনকে ‘প্রহসন’ বলে দাবি করে তা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করে একপক্ষ।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শ্রমিকদের অভিযোগ, কোনো তফসিল ঘোষণা ছাড়াই, ভোটার তালিকা প্রকাশ না করেই নির্বাচন করা হয়েছে।
তারা জানান, প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের দোসর বলে স্লোগান দেওয়া হয়। পাল্টা স্লোগানে হামলাকারীদেরও একই নামে অভিযুক্ত করে সমানতালে জবাব দেন মানববন্ধনকারীরা। সংঘর্ষে আহত অন্তত আটজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের সদ্য নির্বাচিত সভাপতি ইয়াছিন মোল্যা বলেন, আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করেই কমিশনার নির্বাচন আয়োজন করেছেন। যারা আজ মানববন্ধন করেছেন, তারা আওয়ামী লীগের দোসর। তারা এখনও চাঁদাবাজি চালিয়ে যেতে চায়। তাই শ্রমিকরা বাধা দিয়েছেন।
অন্যদিকে সাধারণ শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ইসমাইল হোসেন লাভলু ও আজাদ শেখ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অধিকাংশ শ্রমিকদের না জানিয়ে একতরফা নির্বাচন করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য আমরা মানববন্ধন করছিলাম, সেখানেও হামলা করা হয়েছে। আমরা হামলাকারীদের বিচার চাই এবং একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে বাস বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। মাদারীপুরের টেকেরহাট থেকে ফরিদপুরে আসা রাহাত শিকদার বলেন, জরুরি কাজে এসেছিলাম। এখন দেখি বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিকরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মারামারি করছেন। বাস বন্ধ, তাই ফিরতে পারছি না। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, শ্রমিকদের নির্বাচনে উত্তেজনা তৈরি হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে আলোচনা চলছে। আমরা দ্রুত সমাধানের আশা করছি।
এসআরএস