সিলেট: আলোচিত রায়হান উদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
রোববার (১০ আগস্ট) বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘উচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত হয়ে জামিনের কাগজ রোববার আমাদের কাছে পৌছানোর পর যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল সন্ধ্যায় কারাগার-২ থেকে আকবর মুক্তি পান।
কারাগারে রায়হান হত্যা মামলায় একমাত্র আকবরই ছিলেন। এ মামলায় অন্য কোনো আসামি কারাগারে আছেন কিনা, জানা নেই।
কারা সূত্রে জানা গেছে, এসআই আকবর প্রথমে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার-২ চালু হলে গত ২৫ মার্চ তাঁকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়। মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি এখানেই ছিলেন।
রায়হানের মা সালমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যাকারীদের মধ্যে একমাত্র আশিক এলাহি কারাগারে রয়েছে। অন্য সবাই জামিন পেয়ে গেছে।
বিচার বিলম্ব হওয়ার কারণে জামিন পেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘটনার পর আসামি রোমান পালিয়ে ফ্রান্সে চলে গেছে। হাসানও জামিনে বেরিয়ে ফ্রান্সে গেছে। হা্সানের সাথে টিটু, হারুন এখন আকবর, সবাই পালিয়ে যাবে। এরা যাতে দেশের বাইরে না যেতে পারে, সেই নিষেধাজ্ঞার দাবি জানাচ্ছি।
অ্যাডভোকেট আবুল ফজল বলেন, মামলায় এখন পর্যন্ত কেবল এএসআই আশিক এলাহী কারাগারে বাকিরা সব জামিনে রয়েছেন। এরমধ্যে বরখাস্তকৃত এসআই হাসান উদ্দিন জামিনে গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, তিনি পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। নোমান আগে থেকেই পালিয়ে দেশের বাইরে চলে গেছেন। পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, হারুনুর রশিদ সদস্য জামিনে গিয়ে ২ তারিখের একটিতে হাজিরা দিয়েছেন। এখন প্রধান আসামি বরখাস্তকৃত পুলিশের সাবেক এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার জামিন হয়েছে। জামিনপ্রাপ্তরা অন্যরাও পালিয়ে দেশের বাইরে চলে যেতে পারেন। আর উচ্চ আদালত থেকে জামিন হওয়ায় আমরা কোনো কিছু জানতে পারিনি। তবে আগামি ৩ সেপ্টেম্বর ধার্য্য তারিখে আদালতে দরখাস্ত দেওয়া যায় কিনা, চিন্তাভাবনা রয়েছে।
২০২০ সালের ১০ অক্টোবর গভীর রাতে সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে রায়হান উদ্দিনকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। পরদিন সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনেই তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে রায়হানের স্ত্রীর করা মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করে।
তারা ফাঁড়িতে নিয়ে রায়হানকে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চারজনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। এরপর পুলিশী হেফাজত থেকে কনস্টেবল হারুনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আকবরকে ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট ডোনা সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
২০২১ সালের ৫ মে আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে পিবিআই। অভিযোগপত্রে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করা হয়। অন্যরা হলেন- সহকারী উপপরিদর্শক আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), সাময়িক বরখাস্ত এসআই মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও এসআই আকবরের আত্মীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমান (৩২)।
এনইউ/জেএইচ