জামালপুর: ‘হত্যার বিচার চাই আমি। আমার ছোট ছেলে—তাকে আমি অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছি।
১৩ জুলাই জামালপুরে জুলাই-আগস্টের মাসব্যাপী আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে এমন বিষাদের সুরে কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমার ছোট ছেলে আমার খুব কাছের ছিল। আমাদের সংসারও সেই চালাত। আমি তো আর রোজগার করতে পারি না। ভ্যান চালিয়ে অনেক কষ্টে তাকে লেখাপড়া করিয়ে ডিগ্রি পাস করিয়েছি। ঢাকায় চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর সে আমাদের টাকা পাঠাত—আমরা চলতাম সেই টাকায়, তার স্ত্রী চলত সেই টাকায়। আমার বাবাকে যেভাবে মারা হয়েছে, এভাবে মানুষ মানুষকে মারে না। আমি এই হত্যার বিচার চাই। ’
সাড়ে তিন বছর বয়সী রবিউলের একমাত্র মেয়ে মোবাশিরাকে নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তার স্ত্রী নাজমুন নাহার লাবনী। কোলের শিশুটি এখনো বাবার অপেক্ষায় আছে—ভাবছে, বাবা উপহার নিয়ে ফিরে আসবে।
নাজমুন নাহার লাবনী বলেন, ‘আমরা খুব ছোট পরিবার নিয়ে থাকি। তিনি পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। শুরু থেকেই জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। তিনি চাইতেন, আমরা যেন স্বাধীনভাবে চলতে পারি। আমরা পরিবার থেকে মানা করেছিলাম, কিন্তু সে শোনেনি। আন্দোলনে গিয়ে সে মারা যায়। তার মৃত্যুতে আমাদের সংসার একদম ভেঙে পড়েছে। তার শূন্যতা কোনোভাবেই পূরণ করার মতো না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন আমাদের কিছু আর্থিক সহায়তা করেছে, সঞ্চয়পত্রও দিয়েছে। আমার স্বামী নির্দোষ তার কোনো দোষ ছিলো না। শুধু দেশের বিজয়ে উদযাপন করতে গিয়েছিলো। তাই আমরা চাই তার হত্যার বিচার এবং শহীদ সনদ। বিচার ও স্বীকৃতির দিকটা এখনো অগ্রসর হচ্ছে না। আমরা চাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করুক। ’
জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। জেলার সব শহীদ পরিবার ও আহত পরিবারের সদস্যদের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ’
প্রসঙ্গত: রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে জামালপুর জেলার ১৭ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে শহীদ রবিউল ইসলাম একজন। তিনি ৫ আগস্ট গাজীপুরের বাসন থানা এলাকায় বিজয় মিছিল থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং একসঙ্গে ১০–১২টি গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন।
জেএইচ