সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের পর্যটন এলাকা ‘সাদাপাথর’-এ সংঘটিত নজিরবিহীন পাথর লুটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মোট ৫২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা শনাক্ত করেছে। এতে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাদাপাথর লুটের ঘটনায় চারজন সাবেক ইউএনও, পুলিশ, বিজিবি ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকর্তাদের অবহেলার প্রমাণ রয়েছে। এই দুর্নীতির পেছনে স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু যোগসাজশ এবং রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিএনপির ২০ জন, আওয়ামী লীগের ৭ জন এবং জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ২ জন করে নেতা সরাসরি পাথর চুরির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া আরও ১১ জন স্থানীয় ব্যক্তি, মাদ্রাসা শিক্ষক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নামও তালিকায় রয়েছে।
দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম ১৩ আগস্ট সাদাপাথর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় সেখানে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর লুটপাটের তথ্য উঠে আসে। একই দিন রাতে স্থানীয় প্রশাসন জরুরি সভার আয়োজন করে এবং যৌথবাহিনী লুট হওয়া পাথর উদ্ধারের উদ্যোগ নেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পাথর লুটের মাধ্যমে সুবিধা পেয়েছে, তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তদন্তে উঠে আসা আরও কিছু সাংবাদিক ও পেশাজীবীর নাম যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে।
বিএনপির নেতারা এই প্রতিবেদনকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ উল্লেখ করে এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী অভিযোগ করেন, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়াই তাদের নাম তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে, যা তাদের রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্র।
একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতারাও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, তাদের দলের কেউ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়। বরং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
দুদক সূত্রে জানা যায়, বিস্তারিত অনুসন্ধানের জন্য কমিশনের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কমিশন অনুমোদন দিলে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত শুরু হবে এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তালিকাভুক্ত নেতাদের নাম
বিএনপি (২০ জন):
রেজাউল হাসান কয়েস লোদী – সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
ইমদাদ হোসেন চৌধুরী – সাধারণ সম্পাদক
সাহাব উদ্দিন – কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি
হাজী কামাল – পাথর ব্যবসায়ী
লাল মিয়া – সাবেক শ্রমিকদল সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান
সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু – যুবদল নেতা
রুবেল আহমেদ বাহার – জেলা যুবদল নেতা
মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ – সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক
মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলা
রজন মিয়া
জসিম উদ্দিন
সাজন মিয়া
জাকির হোসেন
মোজাফর আলী
মানিক মিয়া
মো. মকসুদ আহমদ
রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরাণ
শাহ আলম ওরফে স্বপন (বহিষ্কৃত)
আবুল কাশেম
আমজাদ বকস – পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি
আওয়ামী লীগ (৭ জন):
বিলাল মিয়া – নিষিদ্ধ ঘোষিত নেতা
শাহাবুদ্দিন – পাথর ব্যবসায়ী
গিয়াস উদ্দিন – পাথর ব্যবসায়ী
আবদুল ওদুদ আলফু – কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগ সহসভাপতি
মনির মিয়া – কর্মী
হাবিল মিয়া – কর্মী
সাইদুর রহমান – কর্মী
জামায়াত ও এনসিপি (৪ জন):
মো. ফখরুল ইসলাম – সিলেট মহানগর জামায়াত আমির
জয়নাল আবেদীন – সেক্রেটারি
নাজিম উদ্দিন – এনসিপি প্রধান সমন্বয়কারী
আবু সাদেক মো. খায়রুল ইসলাম চৌধুরী – এনসিপি মহানগর সমন্বয়কারী
অন্যান্য ১১ জন:
আনর আলী
উসমান খাঁ
ইকবাল হোসেন আরিফ
দেলোয়ার হোসেন জীবন
আরজান মিয়া
জাকির (দুলা মেম্বারের ছেলে)
আলী আকবর
আলী আব্বাস
মো. জুয়েল
আলমগীর আলম – ইউপি চেয়ারম্যান
মুকাররিম আহমেদ – মাদরাসা শিক্ষক
এনইউ/এসআইএস