ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৬ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন জামালপুরের ১৭ জন

সাগর ফরাজী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৫৭, জুলাই ৩১, ২০২৫
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন জামালপুরের ১৭ জন জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে উত্তাল ছিল জামালপুর

জামালপুর. বৈষম্যের কোটা থেকে এক দফা। ২৪ এর জুলাইয়ে দেশজুড়ে আন্দোলন সংগ্রামে ঝরেছে অনেক প্রাণ।

পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন অনেকে। সারাদেশের মতো এ আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন জামালপুরের ছাত্র-জনতাও। রাজধানীর সঙ্গে মিল রেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলায় পালন করেছেন নানা কর্মসূচি।  

এমন জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দল-মত নির্বিশেষে আন্দোলনে অংশ নেন সবাই। সেদিনের কথা মনে এখনো আঁতকে ওঠেন তারা।  

জামালপুর জেলায় আন্দোলনে কেউ শহীদ হননি, তবে আহত হয়েছেন ৩৮ জন। আর জেলার মানুষ হিসেবে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছেন ৮১ জন ও শহীদ হয়েছেন ১৭ জন।

জামালপুরে জুলাই আন্দোলনে ফ্রন্টলাইনে নেতৃত্ব দেন ব্রক্ষ্মপুত্র ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সারা আমিন।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রত্যাশাটা খুব স্পষ্ট। মেধার মূল্যায়ন, মানুষের প্রাণের নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা। আমরা অধিকাংশ প্রত্যাশাগুলোই নিশ্চিত করতে পেরেছি আবার কিছু কিছু জায়গায় পারিনি। ১৭ বছর ধরে শোষিত লুণ্ঠিত একটি দেশে হুট করেই পরিবর্তন আসবে না, সময় লাগবে। আমাদের সব চেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে তরুণরা প্রশ্ন করতে শিখেছে, প্রতিবাদ করতে শিখেছে।

ছাত্রনেতা আমিমুল ইহসান বলেন, আমরা যে মনোভাব বা প্রত্যাশা নিয়ে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম সেটি একদমই পূরন হয়নি। আওয়ামী লীগের কারণে আমরা সবাই ঘরে বন্দি ছিলাম। কেবল মাত্র এখান থেকেই মুক্তি পেয়েছি। এছাড়া চোখে পরার মতো কোনো পরিবর্তন আসেনি। যেমন ডিসি, এসপি ও কয়েকটি থানার ওসি পরিবর্তন হয়েছে- এর বেশি কিছু না। এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে আওয়ামী লীগের দোসররা। আমরা দেশের পরিবর্তন চেয়েছিলাম। কিছু পুরোনো ও নতুন নেতার ভাগ্য পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই হয়নি।

আশেক মাহমুদ কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আফরিন জান্নাত আখি বলেন, আমরা স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে দিয়েছি। কিন্তু তাদের দোসরা এখনো আছে। এর প্রমাণ গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলা। আমরা ছাত্র-জনতা সব সময় দেশের হয়ে কাজ করব। আর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি, যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের পরিবারের পাশে থাকতে হবে ও আহতদের সুচিকিৎসা দিতে হবে। এছাড়া শহীদদের হত্যার বিচার দ্রুত করতে হবে।

রাজধানীর উত্তরা ৬ নম্বর সেক্টরে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মো. রিপন। তার ভাই সরকার আক্তার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আসলে আমরা দ্রুত বিচারের আশা করেছিলাম। কিন্তু এখনো বিচারের কোনো নমুনা পাচ্ছি না। এ আন্দোলনে স্বৈরাচার পালাইছে, কিন্তু আমরা বিচার পাইনি। দেশে তেমন কোনো পরিবর্তনও আসেনি। সরকার থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বিচার চাই।

শহীদ রবিউল ইসলামের স্ত্রী নাজমুন নাহার লাবনী বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী পোশাক কারখানার শ্রমিক হলেও তিনি দেশের জন্য চিন্তা করত। প্রথম থেকেই জুলাই আন্দোলনের সাথে ছিল। সে চাইতো যেন আমরা স্বাধীনভাবে দেশে থাকতে পারি। দেখুন আমাদের সংসার স্বচ্ছল না। সরকার থেকে মোটামুটি সহয়তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা তো আর তাকে (রবিউল) ফিরে পাবো না। তাই আমার স্বামীর হত্যার বিচার চাই। দ্রুত যেন বিচার হয়।

জেলার বাইরে জামালপুরের ছয় উপজেলার শহীদরা হলেন
 
জামালপুর সদরের সাফোয়ান আক্তার সদ্য, ফারুক হোসেন, সুমন মিয়া ও জাহিদ হোসেন।
  
মেলান্দহের মো. সবুজ, আবুজর শেখ, জসিম উদ্দিন ও আমজাদ।

মাদারগঞ্জের মিজানুর রহমান, মো. মোস্তফা ও মো. শহীদ হোসেন।

বকশীগঞ্জের রিপন মিয়া ও ফজলুল করিম।

সরিষাবাড়ীর রবিউল ইসলাম, মো. মোখলেছুর রহমান ও রাব্বি মিয়া।  

ইসলামপুরের মো. লিটন ওরফে লিমন। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হন জামালপুরের ১৭ জন, এখানে ১৬ জনের ছবি আছে

জামালপুর জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, আমরা নিয়মিত শহীদদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা দেখছি। ১৭ শহীদের পরিবারকে সম্প্রতি অর্থিক সহয়তা করা হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচিগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে।

জামালপুরে ৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহ  
সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ। শুরুর দিকে ৮ জুলাই কোটাবিরোধী ব্যানারে আন্দোলনে নামেন জামালপুরের ছাত্র-জনতা। এরপর শহরের ১১ জুলাই ট্রেন বন্ধ করা হয়, ১৪ জুলাই ডিসি অফিসে স্মারকলিপি দেওয়া হয়, ১৬ জুলাই কলেজে শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের কর্মীরা মারধর করেন, ১৮ জুলাই গেটপারে পুলিশের সঙ্গে হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে উত্তাল ছিল জামালপুর

এরপর অগ্নিশিখায় রূপ নেয় ৩ আগস্টের বিশাল মিছিল। বাইপাস থেকে বিজয় চত্বরে এসে পুলিশের বাঁধা পেরিয়ে হাইস্কুল সড়কে আওয়ামী লীগের নেতাদের মারধরে আহত হন অনেকে। আটকও হন শিক্ষার্থীরা। শেষে ৫ আগস্ট আসে চূড়ান্ত বিজয়, সেদিন করা হয় বিশাল বিজয় মিছিল।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।