ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

সরকার পতনের পর কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০৮, আগস্ট ২৮, ২০২৫
সরকার পতনের পর কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত ফাইল ফটো

বরিশাল: ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দীর্ঘদিন অনুমোদনহীন ছুটি কাটিয়ে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পৌরনীতি ও সুশাসন বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক সাহেদা পারভিন।

এরইমধ্যে এ ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

কমিটির প্রতিবেদন শিক্ষিকার বিরুদ্ধে গেলে চূড়ান্ত বরখাস্ত হবেন তিনি।

কলেজ সূত্র জানিয়েছে- ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর কেবল সাধারণ ছুটির জন্য একটি দরখাস্ত দিয়ে কলেজে আসা বন্ধ করে দেন শিক্ষিকা সাহেদা পারভিন। ৪ মাস পর সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দেন। এতে চিকিৎসার প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন উল্লেখ করে আরও ২ মাসের ছুটি চান। মানবিক দিক বিবেচনায় ওই আবেদন গ্রহণ করে তাকে বাড়তি ২ মাসের ছুটি দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।  আবেদন অনুযায়ী জুন মাসে কলেজে যোগদানের কথা থাকলেও আসেননি তিনি। উপরন্তু নতুন একটি দরখাস্তে ছুটি বাড়ানোর আবদার করেন সাহেদা। কিন্তু সেই ছুটি আর মঞ্জুর করেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে ৬ মাস পরে সাহেদা বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করেন।

কলেজের এক শিক্ষক জানান, ছুটির নামে সাহেদা পারভিন নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। এতে করে তিনি নিয়মানুযায়ী বেতনভাতাও পাচ্ছিলেন। তবে তার বিদেশে অবস্থান বৈধ পন্থায় না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ শেষ ছুটির আবেদন মঞ্জুর করেনি। এমনকি বিদেশে অবস্থান করে ছুটি দেখিয়ে অবসরে যাওয়ার আবেদনও করেছিলেন সাহেদা। না হলে বিভিন্ন অজুহাতে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত ছুটি বাড়ানোর আবদার করেন কীভাবে তিনি। কারণ তার তো ওই বছরের জুনে চাকরির বয়স ২৫ বছর হবে সাহেদার। সেক্ষেত্রে অবসরকালীন পূর্ণ ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদী পাওয়ার উপযুক্ত হবেন তিনি।

কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে থেকে অবসর পর্যন্ত ছুটি কাটিয়ে বেতনসহ অন্যান্য সুবিধাদি নেওয়ার উদ্দেশে কৌশল অবলম্বন করেছিলেন সাহেদা। তবে বর্তমান পরিস্থিতি সেই আশা আর পূরণ হচ্ছে না তার।

চাঁদপাশা মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার বলেন, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বিদেশে গেছেন সাহেদা পারভিন। তারপরও চিকিৎসার কথা শুনে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। যে কারণে ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে আবেবদন মঞ্জুরের প্রেক্ষিতে তিনি ৬ মাসের ছুটিও কাটিয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় আবেদনে যখন তিনি ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত ছুটি চান, তখনই সন্দেহ হয় আমাদের। পরে খোঁজখবর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে তার স্থায়ী হওয়া এবং নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রাথমিক তথ্য পাই।

বেতন স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায়, তাই বেতনভাতা আটকানোর কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতিত সাহেদার যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বিষয়টি সামনে আসার পরে তার নতুন ছুটির আবেদন মঞ্জুর করা হয়নি। বরং কাজে যোগদানের জন্য পরপর ৩টি নোটিশ দেওয়া হয় তাকে। সেসব নোটিশের কোনো উত্তর দেননি বা দেশেও ফেরেননি তিনি। সর্বশেষ ১১ আগস্ট অনুষ্ঠিত কলেজ গভর্নিং কমিটির সভায় সশরীরে উপস্থিত থাকতে বলা হয় তাকে। তারপরও তিনি না আসায় ও বিনা ছুটিতে আরও ২ মাস অনুপস্থিত থাকায় ২০ আগস্ট সাহেদা পারভিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে কেন তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, কমিটির প্রধান নিয়মানুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়তো তার মনোনীত ব্যক্তি থাকবে। সেখানে উপজেলো নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুর রউফকে মনোনীত করেছেন। আমরা তাকে এরই মধ্যে পত্র দিয়েছি। তিনি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করলে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড ব্যবস্থা নেবেন। এক্ষেত্রে সাহেদা পারভিনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে চূড়ান্ত বরখাস্তের সিদ্ধান্তও দেবে বোর্ড। এখানে আমাদের কারও কিছু করার সুযোগ নেই।

এদিকে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সাহেদার নাগরিকত্ব গ্রহণ সংক্রান্ত সব প্রমাণ কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে এসেছে জানা গেছে। পাশাপাশি সাহেদা পারভিন তার চাকরি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার খবর শুনে বাংলাদেশে এসেছেন বলে খবর পাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়ীন।

এ বিষয়ে চাঁদপাশা মাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাহমিনা আক্তার বলেন, আমরাও শুনেছি চাকুরি চলে যেতে পারে এই খবের সাহেদা পারভিন বাংলাদেশে এসেছেন। তবে সে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় নিয়মানুযায়ী এ বিষয়ে তিনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

অপরদিকে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি এইচএম তসলিম উদ্দিন বলেন, প্রায় এক বছর এভাবে অননুমোদিত ছুটি কাটানোর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি আমরা বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে জানাই। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশে গঠিত ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি বিষয়টির অনুসন্ধান করে। তদন্তে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন এবং সেখানকার নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রমাণ মেলার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে এক বছরে বেতনভাতা বাবদ প্রায় ৫ লাখ টাকা নিয়েছেন সাহেদা পরভিন।

এমএস/জেএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।