বিশটি নতুন জাতীয় রেকর্ডের জন্ম শুনতে নিঃসন্দেহে আনন্দের, গর্বেরও। কিন্তু সেই রেকর্ডগুলোর নির্ভরযোগ্যতা নিয়েই থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন।
চার দিনব্যাপী এই আসরে মিরপুরের জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে ঝলমল করেছে নৌবাহিনীর সাঁতারুরা। ৩৫ স্বর্ণ, ২৩ রৌপ্য ও ১১ ব্রোঞ্জসহ মোট ৬৯টি পদক জিতে তারা হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। রানার্সআপ হয়েছে সেনাবাহিনী (১০ স্বর্ণ, ২১ রৌপ্য, ২৯ ব্রোঞ্জ) এবং তৃতীয় হয়েছে বিকেএসপি (৪ স্বর্ণ, ৫ রৌপ্য, ৯ ব্রোঞ্জ)। ওয়াটারপোলোতে চ্যাম্পিয়ন সেনাবাহিনী, রানার্সআপ নৌবাহিনী এবং ডাইভিংয়ে শীর্ষে নৌবাহিনী।
শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় নয়টি ইভেন্ট, যেখানে গড়ে পাঁচটি নতুন জাতীয় রেকর্ড। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন নৌবাহিনীর কাজল মিয়া। একদিনে দুটি নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়ে শেষ দিনে বাজিমাত করেন তিনি। সব মিলিয়ে এবারের আসরে চারটি রেকর্ড তার দখলে। তবুও সেরা সাঁতারু নির্বাচিত হয়েছেন তার সতীর্থ সামিউল ইসলাম রাফি। তিনি ৬টি স্বর্ণ ও ১টি রৌপ্য জিতেছেন, যার মধ্যে ৬টি রেকর্ড রয়েছে। নারী বিভাগে সেনাবাহিনীর রোমানা আক্তার হয়েছেন সেরা, ৫ স্বর্ণ ও ৩ রৌপ্য জিতে, যার মধ্যে ৩টি নতুন রেকর্ড।
সব মিলিয়ে এবারের জাতীয় সাঁতারে মোট ২০টি নতুন জাতীয় রেকর্ড গড়েছে। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও ব্যবহার করা হয়নি ইলেকট্রনিক টাইমিং সিস্টেম। সব রেকর্ডই নির্ধারিত হয়েছে হ্যান্ড টাইমিংয়ে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্বীকৃত নয়। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড ছাড়া কোনো রেকর্ডকে পূর্ণ স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের সাঁতার অঙ্গনে এটি দীর্ঘদিনের সমস্যা। বারবার প্রতিশ্রুতি এলেও জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে এখনো আধুনিক ইলেকট্রনিক টাইমিং ব্যবস্থা চালু হয়নি। ফলে স্থানীয় প্রতিযোগিতায় রেকর্ড গড়লেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তা যাচাইযোগ্য থাকে না।
বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “হ্যান্ড টাইমিংয়ে খুব সূক্ষ্ম পার্থক্যে সময়ের ভুল হতে পারে। ইলেকট্রনিক বোর্ড না থাকলে রেকর্ডের নিখুঁততা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ”
সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের সভাপতি ও নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, “আমাদের সাঁতারুরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে, এবারে ২০টি রেকর্ড হয়েছে, এটি গর্বের বিষয়। তবে আরও উন্নত প্রশিক্ষণ ও আধুনিক সরঞ্জাম পেলে আমরা আরও ভালো করতে পারব। ”
সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি ও ম্যাক্স গ্রুপ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শাহীন।
রেকর্ডের বন্যা নিঃসন্দেহে আনন্দের সংবাদ, তবে ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ডের অনুপস্থিতি সেই আনন্দে ছায়া ফেলছে।
এআর/আরইউ