ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

গোলমেশিন শিহাব হোসেন!

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫
গোলমেশিন শিহাব হোসেন! ছবি: শোয়েব মিথুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: তখন সে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। হকি খেলার খুব শখ তার।

কিন্তু হকি স্টিক কেনার মত টাকা নেই । তাই বিকল্প পদ্ধতি বেছে নিল। ছোট বাঁশের মাথায় কাপড় শুকানোর হ্যাঙ্গারের ভাঙ্গা বাঁকানো মাথা বেধে তৈরি করে ফেললো একটি হকির স্টিক। এরপরই শুরু হয়ে গেল আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র শিহাব হোসেনের খেলা।

তবে এ ধরনের উন্মাদনা খুব একটা চোখে পড়ে না আজকাল। কিন্তু ঢাকার আরমানিটোলা মাহুদটুলি এলাকার কথা ভিন্ন। হকির খেলোয়াড় তৈরির আঁতুরঘর যে এখানে। এখান থেকেই উঠে এসেছে রফিকুল ইসলাম কামাল, রাসেল মাহমুদ জিমির মতো দেশসেরা  হকি খেলোয়াড়। আর সেই সাথে আরমানিটোলা স্কুল যে হকির ঐতিহ্য লালন করে আসছে তা না বললেই নয়।

চলমান জাতীয় স্কুল হকির ঢাকা ভেনুর বাছাইপর্বে এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম শিহাব হোসেন। সে আরমারিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অধিনায়ক। দুই ম্যাচে তিনি তুলে নিয়েছে ২০ গোল। আর গতকাল (সোমবার) বর্নমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের বিপক্ষে একাই করেছে ১৪ গোল। যার মধ্যে চারটিই হ্যাটট্রিক! একাই রীতিমত তান্ডব চালিয়েছে। শুধু এ বছর নয়, গত বছর ২০১৪ সালে স্কুল হকিতে সেরা খেলোয়াড় এই 'গোলমেশিন' খ্যাত শিহাব। সেবার পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে তার অর্জন ১৬ টি গোল। যার মধ্যে তিনটিই হ্যাটট্রিক। আরমানিটোলার কোচ 'ওস্তাদ ফজলু খ্যাত' হাজী ফজলুল ইসলামের হাতে ধরে অনেক তারকা হকি খেলোয়াড়দের জন্ম। তিনি মনে করেন শিহাব ছাড়িয়ে যাবে অন্য সকলদের।

হকি দ্বিতীয় বিভাগে শিহাবের গোল আছে ২৭ টি। এর ফলে সে ছুঁয়ে ফেলেছে দেশসেরা আরেক হকি খেলোয়াড় কামরুল ইসলাম কিসমতের ২৭ গোলের রেকর্ডটি। শিহাবের চোখ এখন আরেক দেশ সেরা হকি খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামালের সেই ৪০ গোলের দিকে। শুনুন শিহাবের মুখেই হকির প্রতি তার ভালোবাসার ও পথচলা কাহিনী...

ক্রিকেট, ফুটবল থাকতে হকি খেলাকে বেছে নেয়ার কারণ কি?

শিহাব: আমাদের পাড়ায় সবাই তো হকি খেলে। আমি ছোট বেলায় হকি খেলা দেখতে মাঠে আসতাম। খেলাটাও ভালো লাগতো। আর স্কুলে সেই তৃতীয় শ্রেণী থেকেই খেলে যাচ্ছি। তারপর থেকে হকির সাথেই আছি...

তোমার পরিবার সম্পর্কে কিছু বল?

শিহাব: আমাদের ছোট পরিবার। বাবা পেশায় একটি দোকানের ম্যানেজার আর মা গৃহিনী। এক ভাই এক বোনের মধ্যে আমি ছোট।

হকি খেলতে গিয়ে কি ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে?

শিহাব: আমাদের স্বল্প আয়। ঘুমাবার যায়গা থাকলেও খাবার অভাব ছিল। তারপরেও হকি রেখে কখনই দূরে যাইনি।

বাবা-মা হকি খেলতে উৎসাহ দিতেন?

শিহাব: হ্যাঁ, বাবা-মা উৎসাহ ছিল বলেই আমি এখন এখানে দাঁড়িয়ে। তারা কখনও মানা করেনি হকি খেলতে।

হকিতে প্রাতিষ্ঠানিক শুরু কার হাত ধরে?

শিহাব: আরমানিটোলা স্কুল হকি দলের কোচ ফজলু ওস্তাদের (হাজী ফজলুল ইসলাম) হাতেই আমার বেড়ে ওঠা। উনি আমার বাবার মত। কতদিন খালি পেটে অনুশীলনে আসার পরে ওস্তাদ আমাকে ডেকে ভাত খাইয়েছেন। ওনার পরিবারের সকলেই আমাকে খুব পছন্দ করে। আমি তার কাছ থেকে দূরে চলে গেলেও তিনি আমাকে ছেড়ে যাননি।

হকি ক্যারিয়ার নিয়ে তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?

শিহাব: আরো ভালো খেলতে চাই। অনেক বেশী গোল করতে চাই। শ্রদ্ধেয় রফিকুল ইসলাম কামাল ভাইয়ের রেকর্ডটিকে ছুঁয়ে ফেলতে চাই। আর চাই জাতীয় দলে খেলতে। দেশবাসীকে ভালো খেলা উপহার দিতে চাই।

২০১৪ স্কুল হকির সেরা খেলোয়াড় ছিলে, এবার টুর্নামেন্টের বাছাইপর্বেই ২০ গোলে করে ফেলেছো। এ টুর্নামেন্টের তোমার লক্ষ্য কি?

শিহাব: আরো গোল করতে চাই। আরমানিটোলাকে চ্যাম্পিয়ন করাতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।