ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

খেলাই দেখাবে সাফল্যের পথ

ইয়াসির উবাইদ জিকো, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫
খেলাই দেখাবে সাফল্যের পথ ছবি: শোয়েব মিথুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘জীবনের একটি লক্ষ্য থাকতে হয়। ভালো করার ইচ্ছা থাকতে হয়।

না হলে সাফল্য ধরা দেয় না। টাকা পয়সা নয়, খেলাকে ভালোবেসেছি। খেলাই আমাকে দেখিয়েছে সাফল্যের পথ। ’

'আমার মায়ের অনুপ্রেরণাতেই তো আমি আজ এখানে আছি। মা আমার জীবনের সব কিছু। খেলা নিয়ে কথা বলতে কোনো বাধা নেই। কি জানতে চাও বল ভাই...’ কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ নারী দলের প্রথম নারী কোচ পারভীন নাছিমা নাহার পুতুল।

দেশের গুণী ও বৈচিত্র্যের অধিকারী এ ক্রীড়াবিদের সঙ্গে কথা হলো সম্প্রতি। বললেন তার জমানো নানান কথা। বাদ দিলেন না বিয়ের মজার অভিজ্ঞতাও, ‘খেলার মাঠ থেকেই পাত্র পক্ষ আমাকে দেখে গিয়েছিল। পরে দু’পক্ষের পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে হয় আমার। ’

একাধারে ছিলেন হকি, ক্রিকেট, ভলিবল ও হ্যান্ডবল খেলোয়াড়। কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ক্রিকেট, ভলিবল, হ্যান্ডবলসহ আরো অনেক ফেডারেশনের হয়ে। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক সহকারী কোচ হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত।

শুধু তাই নয়, দীর্ঘ ১৮ বছর শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক হিসেবে লেক সার্কাস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন পুতুল। দায়িত্ব পালন করেছেন বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের ম্যানেজার হিসেবেও। ছিলেন ফ্রিল্যান্সার ক্রীড়া সাংবাদিক। এখনও হকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ভলিবল ও হ্যান্ডবলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধনটাও এখনও অটুট। বিশ্বে আলোড়ন তোলা বাংলাদেশে নবাগত রাগবি ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে কর্মরত তিনি।

পুতুলের শুরুর গল্পটা বেশ মজার। স্কুল পর্যায় থেকেই খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। কলেজে পড়ার সময় শুরু হয় হকি স্টিকের সঙ্গে পথচলা। হকির গোলরক্ষক হিসেবে খেলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। একটি টুর্নামেন্টে অংশ নিতে পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যাওয়া হলো না। বলা চলে সেখানেই ইতি টানা হয়েছে পারভীন পুতুলের হকি খেলার (১৯৭৭-১৯৮৫)।

এরপর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে একদিন সৈয়দ আলতাফ হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন ওই দলের নারী হকি খেলোয়াড়রা। বললেন ক্রিকেটে খেলতে চান তারা। তাদের আবেদন মঞ্জুরও করেন আলতাফ হোসেন। শুরু হয়ে গেলো ক্রিকেট ব্যাট হাতে অনুশীলন। বেশ আগ্রহ নিয়েই খেলাটি চালিয়ে গেছেন তারা। তারাই বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রিকেট দল।

প্রথমবারের মতো বিদেশের মাটিতে খেলতেও যায় এই দলটি। ১৯৯৩ সালে ইডেন গার্ডেনে একটি প্রীতি ম্যাচে অংশ নিতে ঢাকা আবাহনীর হয়ে ভারত যায় দলটি। তবে ক্রিকেট খেলা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে খুব বেশি দিন খেলতে পারেননি তারা।

তারপরে ভলিবল ও হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সঙ্গে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। এখনও ফেডারেশনের বড় কোনো টুর্নামেন্ট হলে ডাক পড়ে তার।  

পুতুল ২০০০ সালে শুরু করেন ক্রিকেট কোচিং। দেশসেরা অন্যতম কোচ সৈয়দ আলতাফ হোসেনর সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘ ৫ বছর (২০০০-২০০৫)। তিনিই বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম নারী কোচ। এমনকি ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে প্রশিক্ষণও নেন তিনি।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের বর্তমান দৈন্যদশা সম্পর্কে সবশেষে তিনি বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে অর্থ বড় বিষয় নয়। সাংগঠনিক দক্ষতা আর খেলার প্রতি ভালোবাসাই বড়। এক্ষেত্রে অর্থের অবস্থান ৩ নম্বরে। ৭০ দশকে খেলতে গিয়ে আমরা যে সংগ্রাম করেছি তা আর এখন নেই। তবে খেলার প্রতি ভালোবাসা কমে গেছে সবার। খেলাকে ভালোবাসতে হবে এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। খেলাই আপনাকে পথ দেখাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।