ভদ্রলোক নাকি কারো কথা শোনেন-টোনেন না। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মাঝখানের বাইশ গজে যে যা-ই করুক না কেন লম্বা একটা সময় ধরে ঐ জায়গাটার জমিদারি তাঁরই।

নেই। তাই ভারতীয়দের চাহিদাপত্রে সম্ভাবত দুটো অপশন থাকতে পারে। টিপিক্যাল সিডনি উইকেট। যেখানে স্পিনাররা কিছুটা সুবিধা পাবেন। না হয়, ব্যাটিং উইকেট। যেখানে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা রাজত্ব করতে পারবেন। কিন্তু টম পার্কার যদি টিপিক্যালি তার মতোই থাকেন, তাহলে অস্ট্রেলিয়ানরা কিছু মনে করবেন বলে মনে হলো না। কারণ, এই মাঠে তারা খেলে অভ্যস্থ। এ মাঠের ঘাস তাদের হাতের তালুর মতো চেনা। মাইকেল ক্লার্ক একবার উইকেটের কাছে গিয়ে দেখেও নিলেন। তারপরও তার মুখের হাসিটা এতটুকু ম্লান হয়নি। বরং হাসিমুখে শ’খানেক অটোগ্রাফ দিলেন। যাদের মধ্যে নব্বই শতাংশ-ই ভারতীয়। শুধু অটোগ্রাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। হাসিমুখে ফটোও তুলতে হলো ভারতীয় সমর্থকদের সঙ্গে। তার আগে দলের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন, জেমস ফকনার। সেখানেও সেই উইকেট নিয়ে অনেক কথা। কিন্তু তাকে দেখে এবং তাঁর কথা শুনে মনে হলো না, উইকেট নিয়ে খুব একটা ভাবছে অস্ট্রেলিয়া। যা ভাবার তার দায়িত্ব যেন ভারতীয়দের উপর ছেড়ে দিয়ে তারা নির্ভার থাকতে চাইছেন।
কিন্তু ভারতীয়দের হাবভাব এমন যে, ‘ বাবা, ‘টম’ তুমি যা করো তাতেই আমরা খুশি! টিম ডিরেক্টর শাস্ত্রী থেকে অধিনায়ক এম এস ধোনি সেরকম একটা শরীরী ভাষা বজায়ে রেখে নেট প্র্যাকটিস করে গেলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার কতাবার্তা হচ্ছে: ভারত গত চার মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ায়। হয়তো অনেক কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। বিশ্বকাপে টানা সাতটা ম্যাচ জিতেছে। তাদের বোলারার সাত ম্যাচে সত্তরটা উইকেট নিয়েছে। কিন্তু এখনো অস্ট্রেলিয়ার পেস অ্যাটাককে ঠিকঠাক চিনতে পারেনি। অতএব উইকেটের উপর যদি একটু সবুজের আভা থাকে, তাহলে..!
কিন্তু উইকেটে ঘাস থাকবে তেমন কোন নিশ্চয়তা কি পাচ্ছেন তাঁরা? মনে হয় না। না থাকলেও নাকি চিন্তার কিছু দেখছে না অস্ট্রেলিয়া। উইকেট যদি ব্যাটিং সহয়াক হয়, তাহলে টস বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। সেটা তো দুটো দলের জন্যই সমান। নিছক ভাগ্য। এখানে বোধহয় আইসিসিরও কোনো হাত থাকবে না! কারণ, টসটাও যে টেলিভিশনে সরাসরি দেখানো হয়। আর আইসিসি’র প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী টম পার্কার যদি একটা ব্যাটিং উইকেট বানিয়ে দেন, তাহলেও ভারতের দুশ্চিন্তা থাকবে। মাইকেল ক্লার্ক যে ম্যাচটাকে ফাইনাল ম্যাচ মনে করছেন! তিনি সিডনির এই ম্যাচটকে জোহানেসবার্গের ২০০৩ এর ফাইনাল বানিয়ে ফেলতে চাইবেন। রিকি পন্টিং সেই ম্যাচে বড় একটা সেঞ্চুরি করে ভারতীয়দের কাপ জয়ের স্বপ্নকে ভারত মহাসাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। মাইকেল ক্লার্ক কি পারবেন?
উত্তরটা আপাত শুধু টম পার্কার-ই জানেন। কারণ,আইসিসি কি চাহিদাপত্র দিয়েছে তাঁর কাছে এবং তিনি কি করতে যাচ্ছেন, তার উপর অনেক কিছু নিভর্র করছে সিডনির সেমিফাইনালের ভাগ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৫