ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

যতো আলোচনা এখন সিডনির উইকেট নিয়েই

অঘোর মন্ডল, সিডনি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৫
যতো আলোচনা এখন সিডনির উইকেট নিয়েই

ভদ্রলোক নাকি কারো কথা শোনেন-টোনেন না। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মাঝখানের বাইশ গজে যে যা-ই করুক না কেন  লম্বা একটা সময় ধরে ঐ জায়গাটার জমিদারি তাঁরই।

তিনি যা বলবেন তা-ই সই। তাঁর কথাই নাকি শেষ কথা। কিন্তু সেই ভদ্রলোককে দেখলাম অনেকটা সময় ধরে নিজের জমিদারিতে দাঁড়িয়ে একজনের কথা শুনছেন! আর সেটা দেখতে দেখতে মনে হলো, বাংলাদেশে যে এখনো আইসিসি’র বিরুদ্ধে ক্ষোভের উথাল-পাতাল ঢেউ বইছে, তা কি একেবারে অযৌক্তিক! হয়তো তাই। আবার হয়তো না। ক্রিকেটবিশ্ব মোটামুটি এ ব্যাপারে দুই ভাগে বিভক্ত। এক দিকে শাসক। অন্যদিকে শোষিত। বাংলাদেশ তো দ্বিতীয় পক্ষে। কিন্তু এবার শাসকমোর্চার মধ্যে কি কোনো বিভক্তি দেখা দিতে পারে! ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড মিলেই তো আইসিসি’র শাসক। ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের বিদায় করে দেয়ায় একটু কি মনোকষ্ট ছিল  বাকি দুই শরিকের! কিন্তু এবার যে দুই শরিকের একজনকে বিদায় নিতেই হবে বিশ্বকাপ থেকে! সেখানে সিডনির উইকেট কি কোনো ভূমিকা রাখবে? এই উইকেট নিয়ে কি টানাপোড়েন শুরু হয়ে গেলো!

বিষয়টা এখনো পরিষ্কার নয়। যেমন পরিষ্কার নয় সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের মাঝখানের বাইশ গজ ২৬ মার্চ কেমন হবে। ওহ, হ্যাঁ, ঐ মাঝখানের বাইশগজের মালিকের নামটাই তো বলা হয়নি। টম পার্কার। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের কিউরেটর। উইকেট নিয়ে কারো কথা শুনতে যিনি কখনো রাজি নন। কারো চাহিদাপত্র অনুয়ায়ী তিনি উইকেট তৈরি করেন না। সে আপনি রিকি পন্টিং হোন কিংবা মাইকেল ক্লার্ক-ই হোন। কিন্তু সেই লোকটা যে লম্বা সময় ধরে খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন অ্যান্ডি অ্যাটকিনসন নামের এক ভদ্রলোকের কথা। আর এই অ্যাটকিনসন হচ্ছেন আইসিসি’র কর্মকতা। যিনি বিশ্বকাপের উইকেট কেমন হবে না হবে সেই  প্রেসক্রিপশনটা দিয়ে বেড়ান। সিডনির প্রেসবক্স থেকে যতোটুকু যা দেখা গেলো; তাতে মনে হচ্ছে, টম-কেও এবার বশ মানতে হবে। উইকেটটা ব্যাটিং উইকেট-ই বানিয়ে দিতে হতে পারে। দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকা কোয়ার্টার ফাইনালে সিডনির এই মাঠে শ্রীলংকা কিন্তু অল আউট হয়েছিল মাত্র ১৩২ রানে! হ্যাটট্রিক করেছিলেন ডুমিনি। ৪ উইকেট নিয়েছিলেন ইমরান তাহির নামের এক লেগ স্পিনার। সেরকম চরিত্রের উইকেট যদি সেমি ফাইনালের জন্য থাকে, তাতে ভারত খুব অখুশি হবে বলে মনে হয় না! কারণ, তাদের দু’জন স্পিনার আছেন। রবি চন্দন আশ্বিন আর রবীন্দ্র জাদেজা। ভারতীয়দের বিশ্বাস তারা দু’জনেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন গুঁড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনের কাঁপুনি যদি এবারের বিশ্বকাপে দেখেন সেটাতো দুটো ম্যাচে। একটা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অন্যটা পাকিস্তানের বিপক্ষে! এবং অকল্যান্ড আর অ্যাডিলেড দুটো জায়গাতেই তাদের নাচিয়েছেন ফাস্ট বোলাররা! কিন্তু সেই ট্রেন্ট বোল্ট কিংবা ওহাব রিয়াজের মতো বাঁহাতি ফাস্ট বোলার কি আছেন ভারতীয় দলে?

নেই। তাই ভারতীয়দের চাহিদাপত্রে সম্ভাবত দুটো অপশন থাকতে পারে।   টিপিক্যাল সিডনি উইকেট। যেখানে স্পিনাররা কিছুটা সুবিধা পাবেন। না হয়, ব্যাটিং উইকেট। যেখানে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা রাজত্ব করতে পারবেন। কিন্তু টম পার্কার যদি টিপিক্যালি তার মতোই থাকেন, তাহলে অস্ট্রেলিয়ানরা কিছু মনে করবেন বলে মনে হলো না। কারণ, এই মাঠে তারা খেলে অভ্যস্থ। এ মাঠের ঘাস তাদের হাতের তালুর মতো চেনা। মাইকেল ক্লার্ক একবার উইকেটের কাছে গিয়ে দেখেও নিলেন। তারপরও তার মুখের হাসিটা এতটুকু ম্লান হয়নি। বরং হাসিমুখে শ’খানেক অটোগ্রাফ দিলেন। যাদের মধ্যে নব্বই শতাংশ-ই ভারতীয়। শুধু অটোগ্রাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেননি অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। হাসিমুখে ফটোও তুলতে হলো ভারতীয় সমর্থকদের সঙ্গে। তার আগে দলের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন, জেমস ফকনার। সেখানেও সেই উইকেট নিয়ে অনেক কথা। কিন্তু তাকে দেখে এবং তাঁর কথা শুনে মনে হলো না, উইকেট নিয়ে খুব একটা ভাবছে অস্ট্রেলিয়া। যা ভাবার তার দায়িত্ব যেন ভারতীয়দের উপর ছেড়ে দিয়ে তারা নির্ভার  থাকতে চাইছেন।

কিন্তু ভারতীয়দের হাবভাব এমন যে, ‘ বাবা, ‘টম’ তুমি যা করো তাতেই আমরা খুশি!  টিম ডিরেক্টর শাস্ত্রী থেকে অধিনায়ক এম এস ধোনি সেরকম একটা শরীরী ভাষা বজায়ে রেখে নেট প্র্যাকটিস করে গেলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার কতাবার্তা হচ্ছে: ভারত গত চার মাস ধরে অস্ট্রেলিয়ায়। হয়তো অনেক কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। বিশ্বকাপে টানা সাতটা ম্যাচ জিতেছে। তাদের বোলারার সাত ম্যাচে সত্তরটা উইকেট নিয়েছে। কিন্তু এখনো অস্ট্রেলিয়ার পেস অ্যাটাককে ঠিকঠাক চিনতে পারেনি। অতএব উইকেটের উপর যদি একটু সবুজের আভা থাকে, তাহলে..!

কিন্তু উইকেটে ঘাস থাকবে তেমন কোন নিশ্চয়তা কি পাচ্ছেন তাঁরা? মনে হয় না। না থাকলেও নাকি চিন্তার কিছু দেখছে না অস্ট্রেলিয়া। উইকেট যদি ব্যাটিং সহয়াক হয়, তাহলে টস বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। সেটা তো দুটো দলের জন্যই সমান। নিছক ভাগ্য। এখানে বোধহয় আইসিসিরও কোনো হাত থাকবে না! কারণ, টসটাও যে টেলিভিশনে সরাসরি দেখানো হয়। আর আইসিসি’র প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী টম পার্কার যদি একটা ব্যাটিং উইকেট বানিয়ে দেন, তাহলেও ভারতের দুশ্চিন্তা থাকবে। মাইকেল ক্লার্ক যে ম্যাচটাকে ফাইনাল ম্যাচ মনে করছেন! তিনি  সিডনির এই  ম্যাচটকে জোহানেসবার্গের ২০০৩ এর ফাইনাল বানিয়ে ফেলতে চাইবেন। রিকি পন্টিং সেই ম্যাচে বড় একটা সেঞ্চুরি করে ভারতীয়দের কাপ জয়ের স্বপ্নকে ভারত মহাসাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। মাইকেল ক্লার্ক কি পারবেন?

উত্তরটা আপাত শুধু টম পার্কার-ই জানেন। কারণ,আইসিসি কি চাহিদাপত্র দিয়েছে তাঁর কাছে এবং তিনি কি করতে যাচ্ছেন, তার উপর অনেক কিছু নিভর্র করছে সিডনির সেমিফাইনালের ভাগ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।