ঢাকা: চার বছর ঘুরে আসে বিশ্বকাপ। শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলো স্বপ্নের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করে বিশ্বকাপের জন্য।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ। একেবারেই ভিন্ন কন্ডিশন। দেশের মাটিতে বল করে ব্যাটসম্যানের ঘাড় বরাবর বাউন্স উঠাতেই পেসারদের নাভিশ্বাস ওঠে! আর ওখানকার উইকেটে হরহামেশাই বল আসে মাথা কিংবা ঘাড় বরাবর। উইকেট আর কন্ডিশনের ভিন্নতায় এমনটা সহজাতই।
২০০৮ সালে শেষবার অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছিল বাংলাদেশ। সে দলের কয়জন ক্রিকেটারই বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ছিলেন। সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফিরাই তো। এবারও ভরসার তালিকায় ঘুরে-ফিরে ছিলেন তারাই। প্রস্তুতি ম্যাচে আবার চারটিতেই হার। কী স্বপ্ন দেখবে টাইগারসমর্থকরা তা নিয়েও টানাপোড়েন। অস্ট্রেলিয়ার নামকরা মাঠগুলোতে ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ-এটাই যেন তৃপ্ত করছিল টাইগারভক্তদের।
বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ শুরু হতেই সব পাল্টে দিলেন ক্রিকেটাররা। প্রথম ম্যাচেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্যুতি ছড়ালো টাইগাররা। নতুন-পুরণো সবাই মিলে ধরলেন বাংলাদেশের হাল। দিন বদলের হাওয়ায় ভাসলো বাংলাদেশ দল। আরেক সহযোগি দেশ স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপে একটা ধাপ পেরোলো বাংলাদেশ। দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার প্রাথমিক ধাপ পূরণ হতেই সামনে এল ইংল্যান্ড। ইংলিশদের বিপক্ষে অসাধারণ জয় তুলে স্বপ্ন সত্যি করে দিল বাংলাদেশ দল।
শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচেও অদম্য সাহস নিয়ে লড়ে বাংলাদেশ। রোমাঞ্চকর এক লড়াইয়ের পর ম্যাচ হারে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচের আত্নবিশ্বাসে বলীয়ান হওয়া বাংলাদেশ শেষ চারে উঠার মঞ্চ সাজিয়েছিল মেলবোর্নে। আম্পায়ারদের তিনটি বড় ভুল সিদ্ধান্ত বদলে দেয় ম্যাচের পটভূমি। শেষ হয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপ।
আফসোস আর আক্ষেপ নিয়ে দেশে ফেরেন ক্রিকেটের বীরেরা। বিশ্বকাপ মিশনে বাংলাদেশের গল্পটা এমনই। তবে এই বিশ্বকাপ যে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আমূল পরিবর্তনের, আরো বড় স্বপ্ন দেখার উদ্দীপক শক্তি হয়ে যাবে-তা কে ভেবেছিল।
হ্যা, বদলে গেছে বাংলাদেশ দল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এখন এক বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। ক্রিকেটারদের শারীরিক ভাষা, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস, স্ট্রোক খেলতে কার্পন্য না করা কিংবা ম্যাচের মোমেন্টাম পাল্টে দেওয়ার লড়াকু মনোভাব সামনের দিনে অনেক বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রতিপক্ষের খারাপ দিনে হঠাৎ করে ‘আপসেট’ নয়। গেম-প্ল্যান করেই ম্যাচ জিততে শিখেছে টাইগাররা।
বড় দল হয়ে ওঠার প্রায় সকল উপাদানই উপস্থিত এখনকার বাংলাদেশ দলে। বিশ্বকাপ না জিতেও বিশ্ব জয় করেছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সব প্রান্তের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে একটি বার্তা-বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলে। মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকদের পর আজ মাহমুদউল্লাহ-রুবেল-তাসকিন-সৌম্য-সাব্বিররাও পাচ্ছে তারকা ক্রিকেটারের তকমা।
এবারের বিশ্বকাপে নতুন এক বাংলাদেশকে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। টাইগাররা এই আত্নবিশ্বাস সামনের দিনগুলোতে ধরে রাখতে পারলেই ক্রিকেটে বাংলাদেশের সুদিন নিশ্চিত। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে নিজেদের প্রমাণ করার উপলক্ষও পাচ্ছে বাংলাদেশ দল।
আগামি মাসেই (এপ্রিল) পূর্নাঙ্গ সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে পাকিস্তান দল। এর পর জুন-জুলাইয়ে আসবে দক্ষিণ আফ্রিকা। এ বছরই ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফর করার কথা। এই সিরিজগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে পারলে অনন্য এক উচ্চতায় চলে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৭ ঘণ্টা, ২৩ মার্চ ২০১৫