ঢাকা: আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রেসিডেন্ট পদ থেকে আ হ ম মুস্তফা কামালের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে সংস্থাটি। তবে, মুস্তফা কামাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে দাবি করছে আইসিসি।
বুধবার (১ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মিডিয়া ও কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান সামি উল হাসানের পাঠানো এক বার্তায় বাংলানিউজকে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।
বার্তায় দাবি করা হয়, আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসনের প্রতি লেখা অব্যাহতিপত্রে মুস্তফা কামাল বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করছেন এবং এ কারণে আইসিসি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। একইসঙ্গে কারও বিরুদ্ধে তার কোনো অভিযোগ নেই বলেও অব্যাহতিপত্রে উল্লেখ করেছেন। অব্যাহতিপত্রে মুস্তফা কামাল বলেন, প্রত্যেক ক্রিকেটপ্রেমীর মন ও মনন ছুঁয়ে যাওয়া এ খেলা আইসিসির নেতৃত্বে এগিয়ে যাক।
আইসিসির মিডিয়া ও কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান জানান, মুস্তফা কামালের পদত্যাগে আইসিসির প্রেসিডেন্ট পদ শূন্য হয়ে পড়ায় তা অবিলম্বে পূরণ করতে আগামী ১৫-১৬ এপ্রিল দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় সংস্থাটির বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা হবে।
পদত্যাগের কারণ হিসেবে আইসিসির পক্ষ থেকে অসত্য তথ্য দেওয়া হলেও মূলত সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপে কিছু অনিয়মের প্রতিবাদেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুস্তফা কামাল।
বিশ্বকাপ শেষে বুধবার সকালে দেশে ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সেখানে পদত্যাগের ঘোষণা দেন মুস্তফা কামাল।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারের বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত এবং ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে আইসিসি প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে চেয়ারম্যানের ট্রফি তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
ক্ষুব্ধ মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আইসিসি’র ভেতরে কী হয় তা বিশ্ববাসীকে জানাতেই এই পদত্যাগ। এখন থেকে আমি যে বক্তব্য দেবো তা হবে আইসিসি’র সাবেক প্রেসিডেন্টের বক্তব্য।
নয় মাস আইসিসির প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব পালনের পর পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমি যা বলেছি (কোয়ার্টার ফাইনালের পর সংবাদমাধ্যমে দেওয়া ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া) তা ষোলো কোটি মানুষের বক্তব্য। আমি তা প্রত্যাহার করবো না, আমি পদত্যাগ করবো।
মুস্তফা কামাল বলেন, আইসিসি এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে যে আচরণ করেছে তা সংগঠনটির সংবিধানের পরিপন্থি। আমি সংবিধানবিরোধী কোনও সংস্থার সঙ্গে থাকতে পারি না।
কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়ে জালিয়াতি করে হারিয়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি এর বিচার যেন আমরা পাই।
মুস্তফা কামাল বলেন, কোয়ার্টার ফাইনাল-সেমিফাইনাল চলাকালে স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে ‘জিতেগা রে জিতেগা ইন্ডিয়া জিতেগা’ দেখে আইসিসি চেয়ারম্যানকে (এন শ্রীনিবাসন) বলেছিলাম।
শ্রীনিবাসনের ওপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মুস্তফা কামাল বলেন, ক্রিকেট খেলার নির্দিষ্ট একটি সংবিধান আছে। কিন্তু তিনি (এন শ্রীনিবাসন) কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে সংবিধানের ৩.৩ (বি) ধারা লঙ্ঘন করে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সাবেক প্রধানের কড়া সমালোচনা করে মুস্তফা কামাল বলেন, শ্রীনিবাসনের সমস্ত শরীর কলুষিত। তার পুরো শরীরে দুর্গন্ধ। তিনি যখন কথা বলেন তখন তার মুখ থেকে বিশ্রি গন্ধ বের হয়। এমন একটি মানুষের নাম উচ্চারণ করতে আমার ঘৃণা হয়। ভারতের মানুষও তাকে ভালো চোখে দেখে না। তার কুকীর্তির বিচারও হচ্ছে দেশটিতে। এমন একজন কলঙ্কময় ব্যক্তি কীভাবে আইসিসি’তে আছেন আমার বোধগম্য নয়।
সদ্য পদত্যাগী আইসিসি প্রেসিডেন্ট বলেন, শ্রীনিবাসন ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করেছেন। আমি তাকে বলেছিলাম ক্রিকেটকে কলঙ্কিত করবেন না, তিনি আমার কথার তোয়াক্কা করেননি। তিনি কোনো আইন মানেন না। এমন একটি ব্যক্তির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয় না। এমনকি উঠাবসা করাও সম্ভব নয়।
শ্রীনিবাসনের ওপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মুস্তফা কামাল বলেন, তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমি যে কথা বলেছি (বাজে আম্পায়ারিং) তা তুলে নেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে পারি না। তাই ১৬ কোটি মানুষের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে আমি পদত্যাগ করলাম।
মুস্তফা কামাল এ সময় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি জগমোহন ডালমিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ডালমিয়া বাংলাদেশের ক্রিকেট উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কামাল।
সংবাদ সম্মেলনের পর সন্ধ্যায়ই মুস্তফা কামাল আইসিসি সদরদপ্তরে ইমেইলের মাধ্যমে পদত্যাপত্র পাঠিয়ে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৫/২১৪০ ঘণ্টা
** পদত্যাগপত্র পাঠালেন মুস্তফা কামাল