ঢাকা: সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপে মহাবিতর্কিত কাণ্ড ঘটিয়ে বিশ্বক্রিকেটে তুমুল সমালোচিত হয়ে পড়া আইসিসির চেয়ারম্যান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন এবার তার দেশেই সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছেন। এবারের সংঘাতটা লেগেছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বন্ধু বলে পরিচিত ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রধান জগমোহন ডালমিয়ার সঙ্গে।
শ্রীনিবাসন ও ডালমিয়ার মধ্যকার সম্পর্কে সংঘাতের এ খবর দিয়েছে ভারতের একটি বাংলা দৈনিক। মূলত মাত্র তিন দিন পর অনুষ্ঠেয় আসরের আগে আইপিএলের চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ালেও আরও অনেক বিষয়ে দু’জনের সংঘাত ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠেছে।
দৈনিকটি বলছে, আইপিএল চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের দুই হেভিওয়েট প্রশাসকের মধ্যে সংঘাত ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। অথচ চেন্নাইয়ের বোর্ড নির্বাচনে এরা দু’জনই হাত মিলিয়ে শারদ পাওয়ার গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতেছিলেন। কিন্তু স্বার্থের দ্বন্দ্বে দু’জনের মধুর সম্পর্ক এখন দা-কুড়াল সম্পর্কে বিবর্তিত হয়েছে। শ্রীনিবাসনের ক্ষোভ হলো- ডালমিয়া তাকে উপেক্ষা করে এখন বিজেপির আশীর্বাদপুষ্ট বোর্ডের সচিব অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
কেবল এখানেই শেষ নয়, মেলবোর্নে আইসিসির সংবিধান লঙ্ঘন করে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট আ হ ম মুস্তফা কামালকে বঞ্চিত করে নিজের হাত দিয়ে চ্যাম্পিয়নদের ট্রফি তুলে দেওয়ার অনুষ্ঠানে শ্রীনিবাসন তার ঘনিষ্ঠ মহলে ডালমিয়া সম্পর্কে উষ্মা প্রকাশও করেন।
দৈনিকটির খবরে বলা হচ্ছে, শ্রীনিবাসন চাইছেন তার অনুসারী রঞ্জীব বিসওয়ালকেই আইপিএলের চেয়ারম্যানের চেয়ারে রেখে দিতে। কিন্তু অনুরাগ ঠাকুরদের প্রার্থী অজয় শিরকে; যে শিরকে স্পট ফিক্সিং এবং গুরুনাথ মাইয়াপ্পান কাণ্ডে শ্রীনির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে পদত্যাগ করেছিলেন। শিরকে ক্রিকেট মহলে আবার শারদ পাওয়ারের লোক বলেই পরিচতি বিধায় ডালমিয়া হয়তো তার ব্যাপারেও খানিক অসন্তুষ্ট থাকতে পারেন। কিন্তু, শ্রীনির পছন্দের বিসওয়ালকে যে তিনি আইপিএল চেয়ারম্যানের আসনে চাইবেন না এ নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই। সেক্ষেত্রে অনুরাগ ঠাকুরের প্রতি ডালমিয়ার দুর্বলতায় শিরকে পার পেয়ে যেতে পারেন, আর তাতে পরাজয় হতে পারে শ্রীনি বলয়ের।
বিসিসিআইয়ের মধ্যকার সম্পর্কের ব্যাপারে দৈনিকটি বলছে, ডালমিয়া এখন বিশেষ কোনো ভূমিকায় নেই। মিটিং ডাকছেন বোর্ড সচিব অনুরাগই। আর তার প্রতি ঝুঁকে কাজ করছেন ডালমিয়া। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো- আইপিএল’র আর মাত্র তিন দিন বাকি থাকলেও চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো বৈঠকই ডাকা হয়নি। যদিও কলকাতায় বোর্ডের টেকনিক্যাল কমিটির একটি বৈঠক হওয়ার কথা। এখন কোনো বৈঠকেই যদি আইপিএল চেয়ারম্যানের নাম ঠিক না করা যায়, তবে বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডালমিয়া তার পছন্দের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে ফেলতে পারেন। সেক্ষেত্রে অনুরাগের প্রার্থীর প্রতি দুর্বল থাকতে পারেন তিনি। ঘোষণার পর ওয়ার্কিং কমিটিতে সেই নাম পাশ করাতে গেলে ডালমিয়া-অনুরাগ গোষ্ঠীকে শ্রীনির প্রভাব খণ্ডাতে হবে। সে কাজটি যদি সফল হয়ে যায় তবে, তা ডালমিয়া-অনুরাগ সমর্থকদের পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্যও বড় সুখবর হয়ে আসতে পারে।
কারণ, এই শ্রীনিই যে সাবেক আইসিসি প্রেসিডেন্ট মুস্তফা কামালের প্রতিবাদী সিদ্ধান্তে পুড়ে টাইগার ক্রিকেটের ওপর প্রতিশোধের জ্বালা নিতে উদ্ধ্যত হয়ে আছেন। শ্রীনি দমে গেলে বাংলাদেশসহ পুরো ক্রিকেটবিশ্ব যেমন ভারতীয় বলয়ে পড়ে থাকার শঙ্কা থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। তেমনি বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখা ডালমিয়া ও তার গোষ্ঠীর অবস্থান পোক্ত হলে সেটা টাইগার ক্রিকেটের জন্য ‘লাভের ওপর লাভ’ বলেই বিবেচিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৫