ঢাকা: ভাগ্যটা বেশ সুপ্রসন্ন ছিল বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল দলের বালিকাদের। কাঠমান্ডুতে চলমান এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে চলতি মাসের ১৯ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে দলটি।
২৫ এপ্রিল ফাইনালে তাদের মাঠে নামার কথা ছিল স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে। কিন্তু সে দিনই স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় নেপাল।
রাজধানী কাঠমান্ডুতে অবস্থানরত ২৫ সদস্যের বাংলাদেশ দলটি যে হোটেলে ছিল সেখান থেকে দ্রুত অবস্থান নেয় একটি খোলা যায়গায়। এতো বড় একটি ভূকম্পনে নেপালের ২ হাজারেরও বেশি মানুষ হতাহত হলেও বাংলাদেশ দলের কেউ আহত হয়নি।
রাতভর হোটেলের সামনে অবস্থান করে দলটি। সকালের আলো ফুটতেই (২৬ এপ্রিল) তারা প্রস্তুত হয় দেশে ফেরার জন্য। তবে তখনও চলছিল মৃদু ভূকম্পন। দুপুর নাগাদ দলটি পৌঁছে যায় কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে। বাংলাদেশ থেকে ত্রাণ নিয়ে যে বিশেষ বিমান গিয়েছিল নেপালে, দুপুর ২টা নাগাদ ভূকম্পনের কারণে ল্যান্ড করতে ব্যর্থ হয় বিমানটি। সেই বিমানেই ফেরার কথা ছিল দলটির।
বাংলাদেশ দলের সাথে ছিলেন মিডিয়া ম্যানেজার আহসান আহমেদ অমিত। তিনি জানালেন সেই সময়ে বাংলাদেশ দলের অবস্থা, 'বিশেষ বিমানটি ল্যান্ড করেত না পারার ফলে খানিকটা চিন্তিত হয়ে যাই আমরা। তবে বিকেল ৫টা নাগাদ বাংলাদেশি একটি ত্রাণবাহী বিমান ল্যান্ড করতে সক্ষম হয়। সেই বিমানে করেই সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে আমরা রওনা হই। রাত ৮.৩০ মিনিটে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছে যাই। '
দেশে ফিরে দলের সদস্য সানজিদা আক্তার জানালেন নেপালে তাদের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। অনেকটা শিশুসুলভ কণ্ঠে বললেন, ‘মারা গেলেও যেন দেশে গিয়ে মরতে পারি। এ কথাই বার বার মনে করছিলাম। কারণ নেপালে মারা গেলে দেশে লাশ না নেওয়াও হতে পারে। আমার লাশ পরিবারের দেখার সুযোগ হবে না। ’
সেই ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলার আরেক জন সাক্ষী দলের আরেক সদস্য মার্জিয়া বলেন, ‘কি যে ভয় পেয়েছিলাম তা বলে বুঝাতে পারবো না। প্রথমে তো বুঝতে পারিনি, যখন বুঝতে পারলাম তখন দ্রুত সবাই নিচে নেমে খোলা জায়গায় চলে গেলাম। স্থানীয় এবং বিদেশী অনেকেই সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। কেউ কেউ তাবু পেতে সারারাত অবস্থান করেছে সেখানে। ’
দলটির অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার বলেন, ‘নেপালে যাওয়ার পর থেকে বাড়িতে কারো সাথে যোগাযোগ হয়নি। আমাদের ফোনে কথা বলার সুযোগ ছিল না। খেলা চালাকালীন সময়ে সব ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু ভূমিকম্পের পর ভেঙে পড়েছিলাম। ঢাকা বিমানবন্দরে নেমে পরিবারে সবার সাথে কথা হয়েছে। মনে হলো দেশে ফিরে নতুন করে জীবন পেলাম। ’
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৫ ঘণ্টা, ২৭ এপ্রিল ২০১৫
ইয়া/এমআর