ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

কেউ জানেই না, আমি একটি পদক পেয়েছিলাম

ইয়াসির উবাইদ জিকো, স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০১৫
কেউ জানেই না, আমি একটি পদক পেয়েছিলাম ছবি : শোয়েব মিথুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান বিচ গেমস অংশ নেয় বাংলাদেশী দুই সার্ফার জাফর আলম ও আব্দুল আজিজ। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটায় বসেছিল সে আসরটি।



কথা ছিল সেখানে অনুষ্ঠিত সার্ফিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন তারা। কিন্তু আসরে উপস্থিত হয়ে অংশগ্রহণকারীদের চক্ষু চড়ক গাছ। জানতে পারলেন এখানে তারা অংশ নিতে পারবেন রেসকিউ বোর্ড রেইসিংয়ে। বোর্ড রেইসিং হলো অনেকটাই ভিন্ন ধরণের খেলা সার্ফিংয়ের থেকে। কিন্তু এখানেও বাজিমাত বাংলাদেশী সার্ফার আব্দুল অজিজের!

এ ইভেন্টে অংশ নিয়ে একটি রুপা জিতে নিলেন তিনি। তবে দেশ সেরা অন্যতম সার্ফার জামাল আলম অংশ নিতে পারেনি এ আসরে। বেশ খুশী মনে দেশে ফিরে আসেন আজিজ। তবে চার বছর আগের সেই প্রাপ্তিকে ২৬ বছর বয়সী সার্ফার দু:খ করে জানালেন, কেউ জানেই না, আমি একটি পদক পেয়েছিলাম। একটি সংবাদপত্রও নিউজ করেনি। '

তবে কেন গণমাধ্যকে খবরটি জানানো হয়নি তা জানা নেই আজিজেরও!

শুধু বঙ্গপোসাগরের ঢেউয়ের সাথেই খেলা করেননি তিনি। ভারতে মহাসাগর থেকে শুরু করে তিনি খেলেছেন সুদুর আমেরিকার আটলান্টিক মহাসাগরে জল রাশির সাথেও। মাছের ব্যবসা দিয়েই ক্যারিয়ার শুরু করেছিল আজিজ। আর এখন সার্ফিং করে তার মাসিক আয় ২০০ ডলার!

সমুদ্রের পাড়েই তার বাড়ি। তাই সাগরের জলধারার সাথে তার সখ্যতা বেশ পুরানো। চার ভাই বোনের মধ্যে মেঝ ছেলেটি জীবিকার তাগিদে মাছের ব্যবসা শুরু করে ছোট বেলা থেকেই। কিন্তু তার জন্ম যে অন্য কিছুর জন্য, আর পরের গল্পটা শুধুই ইতিহাস। ২০০৫ সালে ১৬ বছরের যুবকের মনে ধরে যায় সার্ফিং।   দেশ সেরা সার্ফার জাফর আলমের কাছ থেকে ধার করে বোর্ড নিয়েই শুরু করেন অনুশীলন। সার্ফার জাফর সম্পর্কে তার আত্নীয় হয়।

ঐ ৭ মিটার লম্বা সাফিং বোডের সাথে শুরু হয়ে যায় আজিজের ভালোবাসা। তারপরে তার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্রের সার্ফার ক্রিষ্টিয়ান ক্লেন। তিনি ছোট ভাইয়ের মতো জানতেন আজিজকে। তার দিক নির্দেশনায় সার্ফিংয়ের সাথে পুরোপুরি ধাতস্থ হয়ে যান তিনি। আর ক্লেনই তাকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার সাথে তাকে যুক্ত করেন। আজিজের মুখেই শোনা যায়, 'ক্লেন আমাকে ছোট ভাইয়ের মতো ভাবতো। আমার এ উঠে আসার পিছনে তার অনেক অবদান রয়েছে। আর 'সার্ফিং দ্যা নেশন্স' (সার্ফিং ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান) আমাকে এখনও অনেক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। '

তিনি জানালেন তার পেশা ও নেশা দুটই সাফিং। তিনি এ খেলায় বাংলাদেশের বিশাল সম্ভবনা দেখছেন। তিনি মনে করেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ আর সুযোগ সুবিধা পেলে আরো এগিয়ে যাবে এদেশের সার্ফিং।

ক্যারিয়ার হিসেবে সার্ফিং কেমন? এ প্রশ্নের উত্তের তিনি বলেন, 'আসলে এখনও এ ক্ষেত্রে তেমন অর্থ সংযোগ নেই। ভালো করতে পারলে বড় ধরণের পৃষ্ঠপোষকরা এগিয়ে আসে সহজেই। ফলে অর্থনৈতিক সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আসলে খেলাটাকে ভালোবাসাই বড় বিষয়। '

ব্যাক্তিগত ভাবে কি ভাবছেন ভবিষ্যত সার্ফিং নিয়ে? 'অবশ্যই ভালো করতে চাই। আরো ভালো ভাবে খেলাটি চালিয়ে যেতে চাই। দেশের জন্য খেলতে চাই'

মাছের ব্যবসা করা ছেলেটি কথা ছিল বঙ্গপো সাগরের জলসীমার মেধ্যই সীমাবদ্ধ থাকার। কিন্তু সেই ছেলেটি সার্ফিংকে পুজি করেই আমিরেকা, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও ভারত সফর করে ফেলেছেন ইতি মধ্যেই। এখন তার সামনে এক সম্ভবনাময় ভবিষ্যতের হাতছানি।

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, ১১ এপ্রিল ২০১৫
ইয়া/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।