কলকাতা থেকে: আইপিএল যতোই ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ হোক না কেন, চ্যাম্পিয়নশিপ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখবেন বিদেশি ক্রিকেটাররা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আইপিএল-৮ এর একেবারে শুরুর দিকে সেটা আরও স্পষ্ট করে দিলেন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, ক্রিস গেইল, মরনে মরকেল, এবি ডি ভিলিয়ার্সরা।
বিরাট কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুকে নাইট রাইডার্সেরও বিপক্ষে জেতালেন ক্রিস গেইল। ৫৬ বলে ৯৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেললেন তিনি। অন্য দিকে ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসকে সান রাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে জেতালেন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম সেঞ্চুরি করে। আবার উদ্বোধনী ম্যাচে কলকাতা নাইট রাইডার্স জিতলো মরকেলের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। সব মিলিয়ে বিদেশিরাই আইপিএলের ভাগ্য গড়ে দিচ্ছেন। সঙ্গে কাড়ি কাড়ি টাকাও নিচ্ছেন তারা। একটু ভুল বলা হচ্ছে। শুধু টাকা নয়, সঙ্গে আগামী টি-টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ‘অভিজ্ঞাতা’ নামক পুঁজিও।
২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ হবে ভারতের বিভিন্ন শহরে। এবং ঠিক এই সময়ে। ভারতীয় কন্ডিশনে খেলা হবে মানে উপমহাদেশের দলগুলো এগিয়ে থাকবে এই তত্ত্ব অচল হওয়ার দিনও এসে যাচ্ছে। কারণ, উপমহাদেশের ক্রিকেটারদের চেয়ে অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা ভারতীয় কন্ডিশন ও উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ কোনো অংশে কম পাচ্ছেন না। আগামীতে দেশের হয়ে খেলার সময় এটা কাজে দেবে। সেটা মানছেন মরনে মরকেল থেকে ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, ক্রিস গেইল সবাই।
গত টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ থেকে ট্রফি জিতেছিল শ্রীলংকা। তার পেছনে বড় একটা কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দেখছিলেন, লম্বা সময় ধরে শ্রীলংকা দলটার বাংলাদেশে খেলা। সোজা কথায়, অন্য দলগুলোর তুলনায় ঢাকার উইকেট, পরিবেশ অনেক বেশি চেনা ছিল কুমার সাঙ্গাকারা-মাহেলা জয়াবর্ধনে-তিলকরতেœ দিলশানদের। পরের চ্যাম্পিয়নশিপটা যখন ভারতে সেখানে শ্রীলংকান ক্রিকেটাররা পিছিয়ে থাকবে অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররদের চেয়ে।
বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের এক ঝাঁক ক্রিকেটার খেলছেন আইপিএলে। শেন ওয়াটসন, স্টিভেন স্মিথ, জেমস ফকনার, জর্জ বেইলি, মিচেল জনসন, ডেভিড ওয়ার্নার, কে খেলছেন না আইপিএলে! জশ হ্যাজেলউড অবশ্য নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। বলেছেন দেশের হয়ে গত কয়েক মাসে প্রচুর ক্রিকেট খেলে তিনি ক্লান্ত। কিন্তু ম্যাককালাম, ক্রিস গেইল ,এবি ডি ভিলিয়ার্স, মরকেল ভাইদের দেখে কে বলবেন গত কয়েকমাসে এরা প্রচুর ক্রিকেট খেলেছেন! টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পাওয়ার যেখানে শেষ কথা ক্লান্তিকে সেখানে বিসর্জন দিয়েছেন তারা অনেক আগেই।
আইপিএল এইটের প্রথম সেঞ্চুরিটা করলেন ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। ২৯ মার্চ রাতে মেলবোর্নে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে আসা ম্যাককালাম যেভাবে ব্যাট করলেন চেন্নাইয়ের প্রচণ্ড গরমে, তাতে বলতেই হবে, বর্তমান ক্রিকেটে মানিয়ে নেয়ার জন্য বাড়তি সময়ের দরকার হয় না ক্রিকেটারদের। ওদের শরীরে অটো অ্যাডাপটেশন পাওয়ার আছে! তা না হলে নিউজিল্যান্ড থেকে এসে ওরকম ইনিংস খেললেন কীভাবে ম্যাককালাম! বিস্ময় মহেন্দ্র সিং ধোনির কাছেও। ‘
ম্যাককালাম দারুণভাবে সাজিয়েছিল ওর ইনিংসকে। নিউজিল্যান্ড থেকে এসে এই গরমে এভাবে মানিয়ে নেয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। কিন্তু ও সেটা করলো খুব সহজে!’ বলছিলেন এম এস ধোনি। আর যিনি সেঞ্চুরিটা করলেন সেই ম্যাককালাম বলছিলেন,‘ নিউজিল্যান্ডে প্রথম বল থেকে আগ্রাসী ব্যাট করা যায়। কিন্তু এখানে সেটা করতে পারলাম উল্টো দিকে ডয়েন স্মিথ থাকায়। হ্যাঁ, স্মিথ, গেইল, স্যামিরা টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত দল সেটা আইপিএলেও বুঝিয়ে দিচ্ছেন নিজেদের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স দিয়ে।
পারফরম্যান্সের মাত্রাটা তারা কোন পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা বোঝানোর জন্য আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার মরনে মরকেলের বোলিং ফিগারটা যথেষ্ট। মাত্র ১৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন ইডেনে। প্রচণ্ড গরমে ইডেনের উইকেট থেকে ফাস্ট বোলাররা বাড়তি কিছু আশা করতে পারেন না। কিন্তু সেখানেই দুর্দান্ত বল করেছিলেন মরকেল। ব্যাটিং-বোলিং সবকিছু মিলিয়ে বিদেশিরাই ঠিক করছেন ম্যাচের ভাগ্য। যদিও রবি শাস্ত্রীর মতো কেউ কেউ বলছেন;‘ স্থানীয় ছেলেরাই ঠিক করে দেবে চ্যাম্পিয়নশিপ!’ কিন্তু আপাতত তার কোন লক্ষণ কি দেখা যাচ্ছে! গেইল, ম্যাককালামদের ব্যাট আর মরকেল-জনসনদের বল কিন্তু বরি শাস্ত্রীর উল্টো কথাই বলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৫
এএ/