ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

কোন পথে বাংলাদেশের হকির ভবিষ্যত?

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
কোন পথে বাংলাদেশের হকির ভবিষ্যত?

ঢাকা: একদিকে হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতউল্লাহ। আরেকদিকে প্রভাবশালী ক্লাবগুলোর অনড় অবস্থান।

আর মাঝখানে হকি খেলোয়াড়রা, সমর্থক এবং শুভানুদ্বায়ীরা। এটি বাংলাদেশ হকির ফেডারেশনের বর্তমান গল্প।

যেদিন থেকে হকি ফেডারেশনের বর্তমান কমিটি দ্বায়িত্ব গ্রহণ করে এরপর থেকে প্রভাবশালী মোহামেডান, মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাবের মতো দলগুলো ফেডারেশনের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে। আর সর্বশেষ আবাহনী, ওয়ান্ডারার্স এবং উষার মতো ক্লাবগুলোর লিগে অংশ নিতে নানা শর্ত জুড়ে দেয়া!

দুই দফা পিছিয়ে গেছে হকির দলবদল। ফলে অনেকটাই নিজ গৃহে পরবাসী হকি ফেডারেশনের নতুন কমিটি। আর খেলোয়াড়দের আয়ের অন্যতম উৎস ঘরোয়া লিগ বন্ধ। তাই তাদের কপালে চিন্তার রেখা। কারণ হকি ফেডারেশনের সাথে ক্লাবগুলোর এ বিরোধ তাদের আয়ের প্রধার খাতকে বন্ধ করে দিয়েছে।

এবার সমাধানের খোজে যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী নিজেই মাঠে নামলেন। বুধবার দুপুর প্রিমিয়ার লিগের সব ক্লাবের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে বসেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। কিন্তু বিদ্রোহী ক্লাবগুলোর মূল কথা 'হকি ফেডারেশনের কমিটি পুনর্গঠন' । শুধু মাত্র এ ধরণের আশ্বাস পেলেই লিগে অংশ নেবে বিদ্রোহী দলগুলো।

বিদ্রোহী ৪ ক্লাব মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারী, ঢাকা মেরিনার্স ইয়াং ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাব সভার শুরুতেই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। মেরিনার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রানা হাসান মনে করেন নানা করণে এ কমিটি অবৈধ ও বিতর্কিত।

'ফেডারেশনের নির্বাচনে প্রিমিয়ার লিগ ও প্রথম বিভাগের ক্লাবগুলোর ১০ জন করে কাউন্সিলর থাকার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ১১ জন কাউন্সিলর ভোট দেয়। একজন সদস্য নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন। পরে তিনি মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করেন নি, কিন্তু তা সত্বেও তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার দেখিয়ে বাকিদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনে আম্পায়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাউন্সিলর থাকার কথা থাকলেও নির্বাচনে তাদের কোনো কাউন্সিলরশিপ পায়নি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত কোনো সরকারী কর্মকর্তার কোনো ফেডারেশনে নির্বাচন করা আইনত অবৈধ। কিন্তু নির্বাচনে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) একজন কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন। ' বলে জানালেন মেরিনার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রানা হাসান।

এসব কারণে তারা কমিটিকে অবৈধ মনে করছেন। তাই এই কমিটির অধীনে কোনো টুর্নামেন্টে তারা অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাই বিকল্প হিসেবে বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে একটি এ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন ক্লাবগুলো।

তবে গত মৌসুমে খেলা আবাহনী লিমিটেড ও উষা ক্রীড়াচক্র সহ বাকি সাতটি ক্লাব নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে এবং হকির স্বার্থে নিজেদের অবস্থান থেকে উভয় ছাড় দিতে অনুরোধ করে। তবে ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় ও ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক খাজা রহমতউল্লাহর বৈঠকের সময়টুকু ছিল রুদ্ধদ্বার।

বৈঠক শেষে ক্রীড়া উপমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানালেন, ‘আমরা যে কোন মূল্যে সব দলের অংশ গ্রহণে লিগের খেলা শুরু করতে চাই। এ জন্য প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর জন্য খুব দ্রুত আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করা হবে। এরপরই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। '

আর হকি ‍ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য হল, ‘আমরা সবাইকে নিয়ে লিগ করতে চেয়েছি। এখনও আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা। আমরা ক্রীড়া উপমন্ত্রীর দিকে চেয়ে আছি। আমি ফেডারেশনের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করেছি। তারা কমিটি ভেঙে দেওয়ার পক্ষে সম্মতি দেয়নি। ’

বিদ্রোহী ক্লাবের মুখপাত্র ও মেরিনার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রানা হাসান জানালেন, ‘আগামী ৭/৮ দিনের মধ্যে কমিটি ভেঙে দিয়ে এ্যাডহক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিলে আমরা নির্ধারিত সময়ে দলবদলে অংশ নিব। এখনো আমরা বর্তমান কমিটির অধীনে লিগে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় আছি। আর ক্রীড়া উপমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। ’
 
 তাই বোঝাই যাচ্ছে ফেডারেশনের বর্তমান কমিটি ও বিদ্রোহী ক্লাবগুলোর রাস্তা আলাদা। আর হকির এ ক্রান্তি লগ্নে একমাত্র আমাদের আলো দেখাচ্ছেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। এখন দেখার বিষয় কতটুকু সফল হবেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
ইয়া/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।