ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

মাটির ব্যাংক সম্বল হলেও লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নের মুকুট

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
মাটির ব্যাংক সম্বল হলেও লক্ষ্য চ্যাম্পিয়নের মুকুট

ঢাকা: ছোট ছোট মাটির ব্যাংক, যেখানে অসুখ-বিসুখ থেকে মুক্তির নিয়তে অর্থ দান করেন এই সমাজেরই কিছু মানুষ। সেই মাটির ব্যাংকে জমানো টাকায় চলে একটি স্কুল! আর এমন একটি স্কুলের চৌকশ কিছু ছেলে মেয়ে সুদূর বান্দরবন থেকে ঢাকায় এসেছেন শেখ রাসেল স্কুল টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতার প্রথম আসরে অংশ নিতে।

 

মাটির ব্যাংকের টাকাকে সম্বল করে তারা টুর্নামেন্টে এলেও দেশের বড় বড় ব্যাংকে লক্ষ লক্ষ টাকা সঞ্চয় করে পড়াশোনা করা দেশের নামিদামি স্কুলকে টপকে চ্যাম্পিয়নের মুকুট পড়ে তবেই ঢাকা ছাড়বে বলে জানান স্কুলটির টেবিল টেনিস মেন্টর ক্রিস্টোফার নাং মিনজে।
 
স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গে ক্রিস্টোফার আরও জানান, এখানে যারা পড়ে, তারা সবাই দুস্থ। কারো বাবা আছে তো মা নেই,বাবা থাকলেও সন্তানের পড়োশোনার খরচ চালাতে পারছেন না। আবার কারো মা আছে, বাবা নেই। জুম চাষ করে সংসারের ঘানি টেনে মা পারছেন না সন্তানের দায়িত্ব নিতে।

কারো বাবা-মা’র মাঝে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। আপন বলতে কেউ নেই। এই স্কুলের গন্ডিতেই তারা বেড়ে উঠছে।

এমন অসহায় সব ছেলে মেয়েদের নিয়ে বান্দরবনের লামায় গড়ে উঠেছে দেশের ভিন্নধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম কসমো স্কুল। সেবামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে লামার ১৯টি সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫’শ অনাথ ও এতিম ছেলেমেয়েদের নিয়েই প্রতিষ্ঠানটিকাজ করছে। তাদের থাকা-খাওয়া, পড়াশোনা এবং খেলাধুলার খরচ এই প্রতিষ্ঠানটিই বহন করছে। প্রতিষ্ঠানটির আয়ের উৎস মাটির ব্যাংকে সঞ্চিতটাকা। যা দিয়ে নিজস্ব তহবিল গড়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। আর সেই তহবিলেই চলছে স্কুলটি।
 
আপনাদের লক্ষ্যগুলো কেমন? আর এই পর্যন্ত আপনারা লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু সফল হয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে টেবিল টেনিস মেন্টর ক্রিস্টোফার জানান, ‘পড়ালেখার কথা যদি বলি; ২০১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের স্কুল থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। আমাদের লক্ষ্য এই ১০ জনই ‘এ’ প্লাস পাবে এবং দেখবেন এটাই হবে। খেলাধুলার কথা যদি বলি, ২০১৬ সালে যতগুলো খেলাধুলায় আমরা অংশ নেব প্রতিটিতেই আমরা প্রথম হবো। ’
 
‘বিগত দিনগুলোতেও তাই হয়েছে। যেমন ২০১৫ সালে জাতীয় স্কুল ও মাদ্রাসা টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। খোখো জাতীয় স্কুল টুর্নামেন্টে গেল ১০ বছর টানা আমরাই চ্যাম্পিয়ন। জিমন্যাসটিক্সসে-প্রতি বছরই ঢাকায় যে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয় সেখানে ২৭টির মধ্যে ২০ থেকে ২২টি পদকই আমরা জিতি। হ্যান্ডবলে স্কুলে আমরা গত দুই বছরের টানা চ্যাম্পিয়ন। ’ যোগ করেন ক্রিস্টোফার।  
 
কোয়ান্টম কসমো স্কুলের ছেলে-মেয়েদের কোচিংয়ের ক্ষেত্রেও বেশ যুগোপযোগী ও কার্যকরব্যবস্থার কথা জানালেন ক্রিস্টোফার, যা অনুকরণীয় হতে পারে দেশের যে কোনো ফেডারেশনের জন্য, ‘টেবিল টেনিস, আর্চারি, খোখো, কাবাডি, বাস্কেটবল, ফেন্সিং ও জুডোসহ মোট ১৯টি ইভেন্টে আমাদের ছেলে-মেয়েরা খেলে থাকে। তাদের কোচিংয়ের জন্য আমরা ঢাকা থেকে কোচ নেই। ১৫-২০ দিন ধরে তারা প্রশিক্ষণ দেয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি প্রশিক্ষণটা আমরাও নেই। এরপর সারা বছর আমরাই প্রশিক্ষণ দেই। ’
 
স্কুলের বিষয় আরও পরিষ্কার হতে জানতে চাওয়া হয়েছিল  ক্রিস্টোফারের কাছে। তিনি জানান, ‘দেশের প্রতিটি জেলায় আমাদের সদস্যদের কাছে একটি করে ব্যাংক পৌঁছে দেই এবং প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর ব্যাংকগুলো সংগ্রহ করি। ওই টাকা আমরা আমাদের তহবিলে রাখি আর সেটা দিয়েই আমাদের ছেলে-মেয়েদের সকল খরচ চলে। কিছু স্বেচ্ছাসেবক ব্যাংকগুলো নিয়ে নেয় এরপর রোগ-বালাই থেকে মুক্তির জন্য নিয়ত করে মানুষ ওই মাটির ব্যাংকে অর্থ দান করেন। অনেক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের এখন সহযোগিতার হাত বাড়াতে চায়, কিন্তু আমরা তা গ্রহণ করি না। ’
এমন সুযোগ পেয়েও কেন আপনারা তা গ্রহণ করছেন না-এমন প্রশ্নে ক্রিস্টোফার জানান, ‘দাতাদের কাছ থেকে টাকা নিলে আমাদের নিজস্বতা থাকবে না। আমাদের মূল ভিতটি দুর্বল হয়ে পড়বে। আমরা আমাদের মতো করে কাজ করতে পারবো না। কারণ দাতারা চাইবে সব কিছু তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী হোক। সেটা হলে আমোদের প্রতিষ্ঠান লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, ১৯ অক্টোবর ২০১৬
এইচএল/এমআরপি/এসকে

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।