ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

প্রতিবন্ধী হলেও ওরা অদম্য

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৬
প্রতিবন্ধী হলেও ওরা অদম্য ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: স্বাভাবিক মানুষের কাতারে ওদের গণ্য করা হয় না। ছোটবেলা থেকে ওদের বেড়ে উঠা আট-দশটি শিশুর মতো হয়নি।

সমাজের কিছু মানুষও ওদের আলাদা চোখে দেখে। কারণ ওরা প্রতিবন্ধী। বলছিলাম মুশফিকা নাজনিন ফুল আর ফারহানা তানজিয়া ইথু’র কথা।

রাজধানীর ‘সুইট’ স্কুলের ছাত্রী ফুল ও ইথু দু’জনই এসেছিলেন সদ্য সমাপ্ত শেখ রাসেল স্কুল টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। টুর্নামেন্টে তারা অংশ নিয়েছিলেন প্রতিবন্ধী কোটায়। এখানে খেলেছেন তিন রাউন্ড, যেখানে জিতেছেন একটিতে। তবে এই ফলাফল দিয়ে ওদের মেধার মূল্যায়ন করাটা ভুল হবে।

কেন জানেন? টেবিল টেনিসে ওরা দু’জনই অলিম্পিকে দেশের হয়ে স্বর্ণ জয়ী। ২০০৭ সালে চীনে বিশেষ অলিম্পিকের আসরে মেয়েদের এককে বাংলাদেশকে স্বর্ণ জয়ের গৌরব এনে দিয়েছেন। অলিম্পিকের পাশাপাশি জাতীয় টেবিল টেনিসেও আছে ওদের চ্যাম্পিয়নের বীরত্বগাঁথা।

সঙ্গত কারণেই ফুল’র মতো স্বর্ণ কণ্যার মা হতে পেরে গর্বিত মিসেস মাহমুদা করিম। একথা ঠিক ফুল অন্য ছেলে-মেয়েদের মতো স্বাভাবিক না, তাতে কী? কিছুটা অস্বাভাবিক হয়েও দেশকে এনে দিয়েছে গৌরব, তাইতো মা হয়ে এমন গর্ব তার, ‘খুব গর্ব বোধ করি এটা ভেবে যে আমার এরকম একটি সন্তান আছে। কারণ ও কোনোভাবেই পিছিয়ে নেই। স্বাভাবিক বাচ্চাদের চেয়েও সে অনেক ভাল। ছোটবেলা থেকে যদি তাকে সঠিক শিক্ষা ও উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া যেত, আমার বিশ্বাস সে আরও ভালো করতে পারতো। ’

উল্লেখ করার মতো হলো প্রতিবন্ধী সন্তানের মা হওয়ার প্রথম দিকে মাহমুদা করিমের কিছুটা আফসোস থাকলেও মেয়ের স্বর্ণ জয় তার সেই আফসোস-হতাশা দূর করে দিয়েছে। তাই এখন তিনি মেয়ের ভবিষ্যত পারফরমেন্স নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। মেয়ের খাওয়া, ঘুম, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ভাবনা ভেবেই কাটে তার প্রহর। ‘আগে কিছুটা অসন্তোষ ছিল কিন্তু এখন আর নেই। ছোটবেলায় আমার মেয়ে দেরিতে হেঁটেছে, কথা বলেছে যা আস্তে আস্তে ভালো হয়। ওগুলো নিয়ে আর ভাবি না। এখন আমি ভাবছি ওর প্রশিক্ষণ নিয়ে। কেননা সেরকম প্রশিক্ষণ সে পাচ্ছে না। স্কুলে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা খুবই অপ্রতুল। বাসায় সেরকম ব্যবস্থাও নেই। তবে ওর আগ্রহ ও চেষ্টা আছে। ঘুম থেকে উঠেই খেলতে নেমে যায়। ’ যোগ করেন মাহমুদা।

মাহমুদা করিমের সাথে আলাপচারিতার মাঝে ইথু’র কাছে প্রতিবন্ধী হয়েও তার এমন অভূতপূর্ব সাফল্যের অনুভুতি জানতে চাইলাম। খুব বেশি কিছু বলতে পারলেন না ইথু। যতটুকু বললেন তার সারমর্ম হলো, ‘প্রতিবন্ধী হওয়ায় কখনও কখনও ভীষণ খারাপ লাগে। তবে স্বাভাবিক হলে আরও ভালো খেলতে পারতাম। দেশকে আরও সম্মান এনে দিতে পারতাম। ’

এ কথা প্রকাশ্য দিবালোকের মতো সত্য যে বুদ্ধিমত্তার বিচারে ফুল ও ইথুরা অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে। কিন্তু তারপরেও ওদের হাত ধরে লাল-সবুজের এই দেশ যে সাফল্য পেয়েছে সেটা অমূল্য। যেহেতু ওরা পিছিয়ে সেহেতু ওদের জন্য প্রয়োজন একটু বাড়তি যত্ন, পরিচর্যা ও উন্নত প্রশিক্ষণ যা পেলে ওরা দেশকে আরও বড় বড় সাফল্য এনে দিতে পারবে। এজন্য প্রয়োজন বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশনের সহযোগিতা, যা এখনও পর্যন্ত অদৃশ্য।

অভিযোগ আছে টেবিল টেনিস ফেডারেশন প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করে থাকে। অংশ গ্রহণকারীদের জন্য নাস্তার ব্যবস্থা দূরে থাক, এক গ্লাস পানিরও ব্যবস্থা থাকে না! এটা কী করে হয়? ফেডারেশন কর্মকর্তারা একথা নিশ্চয়ই জানেন এদেশের ক্রীড়াবান্ধব সরকারের নেয়া যুগোপযোগী পদক্ষেপের জন্যই ক্রীড়ায় বাংলাদেশ আজ অনন্য এক উচ্চতায় অবস্থান করছে। আর প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এই সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলোও শ্রদ্ধার দাবিদার।

তারপরেও যদি তারা প্রতিবন্ধীদের প্রতি এমন আচরণ করে থাকেন তাহলে তো একথা বলাই যায়, সংগঠক হয়েও তারাই ক্রীড়াবান্ধব এই সরকারের উন্নয়নের পথে সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধক।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর ২০১৬
এইচএল/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।