ঝালকাঠি: বাড়ির পাশে পৌর শহরের সবথেকে বড় খেলার মাঠ। যে মাঠে শৈশব থেকেই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলার শুরু।
তবে একটা সময় ভবিষ্যতে বড় মাপের ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্নে পড়াশুনায় বেশি মনোযোগী হয়ে ওঠেন। তারপরও ফুটবলকে ঘিরে এমন কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। আর সেই চিন্তাভাবনা থেকেই কাঁধের ওপর ফুটবল নাচিয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখিয়েছেন ঝালকাঠি জেলা সদরের মসজিদ বাড়ি রোড এলাকার বাসিন্দা ও বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র রহমান জুবায়ের (২২)।
ঠিকাদার জালাল আহম্মদ ও রোকসানা আহম্মদ দম্পতির চার ছেলে সন্তানের মধ্যে সবার ছোট জুবায়ের। পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়ায় পরিবার কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ২০১৪ সালে ঝালকাঠি সরকারি হাই স্কুল থেকে কমার্স বিভাগে ‘এ প্লাস’ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন জুবায়ের। এরপর ঢাকার মোহাম্মদপুরের রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে ‘এ’ গ্রেডে এইচএসসি পাশ করে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন।
পড়াশুনার পাশাপাশি ফুটবলের প্রতি আগ্রহ থাকায় টেলিভিশন, মোবাইলে পৃথিবীর নামীদামী খেলোয়াড়দের খেলা দেখতেন। যেখান থেকে ভক্ত হয়ে যান ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদিনহোর। আর ফেসবুকসহ নানান সামাজিক মাধ্যমে ফ্রি স্টাইল ফুটবলের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন প্রায় ৩ বছর আগে। এরপর শারীরিক কসরত শুরু করেন ফ্রি স্টাইল ফুটবলে দক্ষতা আনার জন্য। পড়াশুনার ফাঁকে ফাঁকে সময় দিতে থাকেন ভিন্ন ধারার ফুটবলের এই খেলায়।
রহমান জুবায়ের বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ১ বছর আগে ‘নিক থ্রো অ্যান্ড ক্যাচ’ অর্থাৎ কাঁধ দিয়ে ফুটবলকে শূন্যে ভাসিয়ে আবার কাঁধের ওপর নিয়ে আসার ফ্রি স্টাইলটির গিনেস রেকর্ড ভাঙার আবেদন করি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে। পরবর্তীতে তাদের নিয়মানুযায়ী ১ মিনিটে ৬৫ বার কাঁধের ওপর ফুটবল ওঠানামার ফ্রি স্টাইলের একটি ভিডিও পাঠাই। তারপর কমিটি থেকে বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে আমার পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেখানে বিশ্বের মধ্যে আমি এক মিনিটে সবচেয়ে বেশিবার কাঁধে ফুটবল নাচানোর রেকর্ড গড়ি। যার মধ্য দিয়ে তিন বছর আগে গড়া অপর এক বিদেশি খেলোয়াড়ের রেকর্ড
ভেঙে যায়।
তিনি জানান, গত ৩০ জুলাই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কমিটি অর্জনের সনদটি ডাকযোগে আমার হাতে পৌঁছে দেয়। এর আগে যদিও মেইলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা। এ রেকর্ড গড়তে পেরে রহমান জুবায়ের উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ নাম লেখানোটা শুধু ঝালকাঠি কিংবা বৃহত্তর বরিশালবাসীর নয়, আমি মনে করি গোটা দেশের অর্জন।
পরিবারের সকলে বিশেষ করে লন্ডন প্রবাসী বড় ভাই জিয়াউর রহমান এবং বন্ধু-বান্ধব শুভাকাঙ্ক্ষীরা সবাই এখবর জানতে পেরে খুশি হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কাজটি যতটা সহজ মনে হয়েছিলো ততটা নয়, এটি করতে বেশ শ্রম দিতে হয়েছে। ইচ্ছে রয়েছে আরো কিছু রেকর্ড গড়ার সেজন্য শ্রম দিয়ে যাচ্ছি।
জুবায়েরের বন্ধু ও একই এলাকার বাসিন্দা খান মো. তোহা ও ইসতিয়াক আহম্মেদ জানান, ফ্রি স্টাইল ফুটবল প্রতিটি ধাপ আয়ত্তে আনতে জুবায়েরকে অনেক শ্রম ও মেধা দিতে হয়েছে। অনেক সময় ব্যর্থ হয়ে বিষণ্ণ হয়ে পড়েছে, তারপরও বন্ধু হয়ে আমরা সাহস যুগিয়েছি, হাল ছাড়তে বারণ করেছি। জুবায়েরও কষ্ট করে গেছে। আজ তার এই কষ্টের অর্জন আমাদের সবাইকে গর্বিত করেছে। আজ আমরা বলতে পারছি আমাদের সবথেকে ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিনেস রেকর্ড গড়েছে। ঝালকাঠির মুখ উজ্জ্বল করেছে।
জুবায়েরের বাবা জালাল আহম্মদ বলেন, খেলাধুলা করে দেশে খুব বেশি সাফল্য পাওয়া যায় না। এমন ধারণা থেকেই ছেলেকে পড়াশোনার প্রতি বেশি মনোযোগী হতে বলি। কিন্তু সে লুকিয়ে লুকিয়ে এসব প্র্যাকটিস চালিয়েছে। এখন সে একটি বিশ্বরেকর্ড করেছে। এ থেকে কী হবে জানি না। তবে চাই সে করুক। পড়াশুনার পাশাপাশি চালিয়ে যাক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২০
এমএস/এমএইচএম