ঢাকা, সোমবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০২ সফর ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

জুলাই ঘটনাপ্রবাহ-১২

জুলাই বিপ্লবে অপরাধে জড়িত যেসব পক্ষ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:৩৪, জুলাই ২৮, ২০২৫
জুলাই বিপ্লবে অপরাধে জড়িত যেসব পক্ষ জুলাই ঘটনাপ্রবাহ-১২

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে নৃশংসভাবে আন্দোলনকারীদের দমন করার জন্য অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

গত বছরের জুলাই আন্দোলনের নৃশংস ঘটনাগুলোর সঙ্গে এমন তথ্যও তুলে ধরা হয়েছে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে।

যে মামলায় আসামি করা হয়েছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। যদিও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ইতোমধ্যে রাজসাক্ষী হয়েছেন।

ফরমাল চার্জ মোট ১৩৫ পৃষ্ঠার। এই ফরমাল চার্জ আদালতে তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মো. আব্দুস সোবহান তরফদার, মো. মিজানুল ইসলাম। যেটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

নথি ও গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত অভিযুক্ত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, বিশেষ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী যুবলীগ ইত্যাদি বিভিন্ন সময় নির্যাতন, সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে। বিশেষ করে জুলাই বিপ্লবের সময় আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলো দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে নৃশংসভাবে আন্দোলনকারীদের দমন করার জন্য অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র সহকারে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।

২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনকে দমন করতে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের মাঠে থেকে সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিহত করার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত তার জনশক্তিকে মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে ২০২৪ সালের ১৭ জুলাইয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ ওবায়দুল কাদেরের’ শীর্ষক একটি সংবাদের সূত্র দেওয়া হয়।

সেই সংবাদে বলা হয়, ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেন, “আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান। ”

১৭ জুলাই দুপুরে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত হয়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কেন রাস্তাঘাট দখল করতে যাবে, সহিংসতায় জড়াবে? এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে অশুভ শক্তির হাতে চলে গেছে। সেই অবস্থায় আমরা নিশ্চুপ থাকতে পারি না। ”

তিনি বলেন, “আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি, লালন করি, বিশ্বাস করি, সেই চেতনায় বিশ্বাসীরা; আমরা চুপ করে বসে থাকতে পারি না। আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে। কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান। এখানে বেশিক্ষণ আপনাদের ধরে রাখতে চাই না। যার যার এলাকায় যান, আজকেও তাদের ভয়াবহ তাণ্ডব সৃষ্টির অ্যাজেন্ডা আছে, বিধ্বংসী এজেন্ডা আছে। ”

ওবায়দুল কাদের বলেন, “এখানে শুধু পুলিশের শক্তি নয়, আমাদের দল, দলের যে শক্তি। যে শক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ করেছে, যে শক্তি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খল মুক্ত করেছে, সেই শক্তি হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের এই শক্তিকে আজ কাজে লাগাতে হবে। আমাদের যার যার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। ”

দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমাদের সারাদেশের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, সারাদেশে সতর্ক হয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে এই অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে। কোনো অপশক্তির সঙ্গেও আপস করা যাবে না। ”

একই বছরের ২৫ জুলাই “ভেঙে দেয়া হলো ঢাকা মহানগর আ.লীগের ২৬ ইউনিট কমিটি” শীর্ষক আরেকটি সংবাদের সূত্র দেওয়া হয়। সেই সংবাদে বলা হয়, কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঘটা সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে না থাকার অভিযোগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ২৬টি ইউনিট কমিটি।

সূত্র জানায়, সভায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার ২৭টি ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা আন্দোলন মোকাবিলায় সরাসরি অংশ নেননি বলে অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এসব ইউনিটের কমিটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।

জুলাই আন্দোলনের পুরো ঘটনায় যৌথ দায় হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিবন্ধন (১২৭ নং) করা হয়। ওই অভিযোগের প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে তদন্ত করেন উপপরিচালক মো. আলমগীর (পিপিএম)। সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দেওয়া হয়। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনার মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় আগামী ৩ আগস্ট সূচনা বক্তব্য এবং ৪ আগস্ট প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।

৫ আগস্টের পর ট্রাইব্যুনালে গত ২৫ জুন পর্যন্ত ২৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। কারাগারে মৃত্যু হয়েছে এক আসামির।

ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।