ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সাত বছর পর সেই ইংল্যান্ডই সিরিজ হারালো বাংলাদেশকে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
সাত বছর পর সেই ইংল্যান্ডই সিরিজ হারালো বাংলাদেশকে ছবি: শোয়েব মিথুন

রান তাড়া কঠিন ছিল অবশ্যই। রেকর্ডই হয়ে যেতো জিতে গেলে।

কিন্তু বাংলাদেশ এমন রান তাড়া করতে নেমে যে ব্যাটিং করলো, তাকে ব্যাখ্যা করতে পারে ‘বিশ্রী’ শব্দটি। ব্যাটারদের তাড়না ছিল না এতটুকুও, কখনোই মনে হয়নি বাংলাদেশ খেলছে জয়ের জন্য।

লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর ডাক মেরে সাজঘরে ফেরায় শুরু হয়েছিল যে অসহায়ত্বের, সময়ের সঙ্গে তা কেবল আরও বেশি উন্মুক্তই হয়েছে। মাঝে সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল রান করেছেন, কিন্তু ক্ষতে এতটুকু প্রলেপও দিতে পারেননি। খুব বেশি কমাতে পারেননি হারের ব্যবধানও।

২০১৬ সালে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর বহু সময় আর জল গড়িয়েছে, একটু একটু করে নিজেদের ঘরের মাঠে ‘বাঘ’ হওয়ার বার্তা দেওয়া গেছে একের পর এক সিরিজ জয়ে। আবার ওই ইংলিশদের কাছে এসেই থামলো ঘরের মাঠে সিরিজ জয়ের রথ। এটা বোধ হয় বিশ্বকাপের আগে একটা বার্তাও দিয়ে গেল, বাংলাদেশ যে পথে হেঁটে বিশ্বকাপে উড়ার স্বপ্ন দেখছে, সে পথে এখনও কিছুটা গলদ আছে।

শুক্রবার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয়টিতে ১৩২ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান করেছিল ইংল্যান্ড। জবাব দিতে নেমে ১৯৪ রানের বেশি করতে পারেনি স্বাগতিকরা।

ম্যাচটিতে টস হেরে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। দলীয় ২৫ রানে তাদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে কাভার পয়েন্ট দিয়ে সজোরে ব্যাট চালান ফিল সল্ট। কিন্তু বল তার ব্যাটের কানায় লেগে সোজা চলে যায় স্লিপে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে, দারুণ এক ক্যাচ নেন তিনি। তাই ব্যক্তিগত ৭ রানেই থামতে হয় এই ওপেনারকে।

ফিল সল্ট ফিরে যাওয়ার পর আরও সাবলীল হয়ে উঠেন জেসন রয়। একের পর এক বাউন্ডারি আসছিল তার ব্যাট থেকে। অপর প্রান্তে ধীরেসুস্থে এগোচ্ছিলেন দাভিদ মালান। দুজনে মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ রয়কে সঙ্গে দিতে পারেননি মালান। মেহেদী হাসান মিরাজের ফাঁদে পড়ে অল্পতেই সাজঘরে ফিরতে হয় আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ানকে।

ইনিংসের ১৬ তম ওভারে দলীয় ৮৩ রানে দ্বিতীয় উইকেটটি হারায় ইংল্যান্ড। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে ফুল লেংথে পিচ করা মিরাজের বল শার্প টার্ন নিয়ে সোজা আঘাত হানে মালানের প্যাডে। আবেদনে সাড়া দিয়ে আউটের আঙুল তোলেন আম্পায়ার। মালানও রিভিউ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি।  

১৯ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়াই ১১ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। এরপর রয়ের সঙ্গে দারুণ জুটি গড়েন জস বাটলার। তাদের দুজনের জুটি বাংলাদেশের জন্য বিপদের হয়ে যাচ্ছিল বেশ। সেটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। শত রান করেও ছুটতে থাকা রয়কে থামান তিনি।  

সাকিবের আর্ম বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন রয়। এর আগে অবশ্য ১৮ চার ও ১ ছক্কায় ১২৪ বলে ১৩২ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। মাঝে উইল জ্যাকসকেও ফিরতে হয় দ্রুতই। তাকে ফেরান পেসার তাসকিন আহমেদ।  

এই পেসারের বল লেগ সাইডে টেনে খেলতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দেন সাকিবের হাতে। ৪ বল খেলে কেবল ১ রান করেন তিনি। রয়ের ফেরার পর বাংলাদেশের জন্য বড় দুশ্চিন্তা হয়েছিলেন জস বাটলার। ইংলিশ অধিনায়ক যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেও।  

মেহেদী হাসান মিরাজ নিজের বলে নিজেই দারুণ এক ক্যাচ নিলে বাটলারকে ফিরতে হয় সাজঘরে। ৫ চার ও ২ ছক্কায় এর আগে ৬৪ বলে ৭৬ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পর দলকে টেনে নেন মঈন আলী ও স্যাম কারান। তাদের কল্যাণেই তিনশ ছাড়িয়ে যায় ইংল্যান্ড। ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ বলে ৪২ রান করে মঈন ফিরলেও শেষ অবধি অপরাজিত থাকেন স্যাম কারান। তিনি ২ চার ও ৩ ছক্কায় ১৯ বলে করেন ৩৩ রান।

বাংলাদেশের বোলারদের প্রায় সবাই-ই ছিলেন খরুচে। ছয়ের নিচে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন কেবল তাইজুল ইসলাম। ১০ ওভারে ৫৮ রান খরচায় ১ উইকেট নেন তিনি। ১০ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট পান তাসকিন আহমেদ। এছাড়া মেহেদী হাসান মিরাজ ৭৩ রান দিয়ে দুই ও সাকিব ৬৪ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। ১০ ওভারে ৬৩ রান দিয়ে কোনো উইকেটের দেখা পাননি মুস্তাফিজুর রহমান।

জয়ের জন্য ২২৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করলে রেকর্ড গড়তে হতো বাংলাদেশকে। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছিল টাইগাররা। এমন সমীকরণ সামনে রেখে স্বাগতিকদের শুরুটা করতে হতো দারুণ, অথচ হলো কি না উল্টো।

প্রথম ওভার করতে আসেন স্যাম কারান, আগের ম্যাচে একাদশে ছিলেন না তিনি। এই বোলারের চতুর্থ বলে লিটন দাস ক্যাচ তুলে দেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে দাঁড়ানো জেসন রয়ের হাতে। ওটাই ছিল লিটনের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বল। এরপর ক্রিজে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

এই ব্যাটার আছেন দারুণ ফর্মে, আগের ম্যাচেও পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা। কিন্তু তিনিও মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে আউটসুইংয়ে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা তৈরি হয় স্যাম কারানের। যদিও তাকে সেই সুযোগ দেননি মুশফিকুর রহিম। কিন্তু এই ব্যাটারও পারেননি ইনিংস লম্বা করতে। তিনি আউট হন ৫ বলে ৪ রান করে।  

৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে বাংলাদেশ। এরপর অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে বেশ বড় এক জুটিই গড়েন সাকিব। তবে তাদের ওই জুটিতে রান উঠেছে ধীরগতিতে। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে। প্রথম ৩৩ বলে ২৪ রান করা তামিম পরের ৩৪ বল খেলে করেন ৩১ রান।

সব মিলিয়ে ৬৫ বলে ৩৫ রান করে তামিম মঈন আলিকে তুলে মারতে গিয়ে জেমস ভিন্সের হাতে ক্যাচ তুলে দেন। সাকিবের সঙ্গে তার ৭৯ রানের জুটি ভাঙে। বাংলাদেশের জয়ের ‘অলিক কল্পনা’ বেঁচে ছিল সাকিবের ব্যাটে। তিনিও ৬৯ বলে ৫৮ রান করে তুলে মারতে গিয়ে শিকার হন আদিল রশিদের।

এরপর বাংলাদেশের হার ছিল কেবল সময়েরই ব্যাপার। ৪৯ বলে ৩২ রান করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, ৩৩ বলে ২২ রান করে আফিফ হোসেন ও ২১ বলে ২১ রান করে তাসকিন আহমেদ কেবল কমিয়েছেন ব্যবধান। ইংল্যান্ডের পক্ষে ৪ উইকেট করে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও স্যাম কারান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।