চট্টগ্রাম টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় যেন পুরনো এক ছবির পুনরাবৃত্তি। প্রথম টেস্টে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর বাংলাদেশ দল ফিরে গেল সেই পুরনো ছকে—স্পিন সহায়ক উইকেট, তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ, আর সফরকারী দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল।
পুরনো ছকে ফেরত
বাংলাদেশের হোম টেস্টে টানা ছয় ম্যাচ হারের পর এই জয় এল, কিন্তু সেটা এল বহু পরিচিত এবং পরীক্ষিত কৌশলে। তিন স্পিনার নিয়ে খেলা, উইকেট এমনভাবে প্রস্তুত করা যাতে প্রতিপক্ষ স্পিনে কাবু হয়ে পড়ে—এই কৌশল আমরা বহুবার দেখেছি। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে পেস আক্রমণের বিকাশের ইঙ্গিত মিলছিল।
প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্ত
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার স্পষ্ট করেই বলেছেন, “আশা করি এটা এক ম্যাচের পরিকল্পনা। আমরা একটি ম্যাচ জিততে চেয়েছি, তাই এমন কৌশল নিয়েছি। কিন্তু জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষে স্পিন উইকেটে তিন স্পিনার খেলা মানসিকভাবে পিছিয়ে যাওয়ার নামান্তর। ”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্বের শীর্ষ দলগুলোর বিপক্ষে স্পিন সহায়ক উইকেট তৈরি করা যৌক্তিক, কারণ তারাও নিজেদের মাঠে তেমন সুবিধা নেয়। কিন্তু দুর্বল দলের বিপক্ষে একই কৌশল গ্রহণ মানে আত্মবিশ্বাসের অভাব। আমরা তো ব্যাটারদের বিদেশের কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম, সেখানে প্রথম টেস্টে হারের পর যদি আবার পুরনো কৌশলে ফিরে যাই, তবে অগ্রগতির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। ”
কৌশল না আত্মরক্ষা?
বাংলাদেশ দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন অবশ্য এই কৌশলকে সোজাসাপ্টা কৌশলগত সিদ্ধান্ত বলেই ব্যাখ্যা করেছেন। তার কথায়, “চট্টগ্রামের আবহাওয়া ও পিচ সাধারণত ব্যাটিং সহায়ক। গরমের কারণে পেসাররা তেমন সুবিধা পান না। তাই আমরা দুজন পেসার খেলিয়েছি এবং একাধিক স্পিনার। জিম্বাবুয়েরাও একজন অতিরিক্ত স্পিনার খেলিয়েছিল। ”
তিনি আরও বলেন, “তাইজুল মূলত ফ্লাইটে বিভ্রান্ত করে উইকেট পেয়েছে, উইকেট অতটা টার্ন করছিল না। আমরা প্রথম ইনিংসে ধৈর্য্য ধরে বল করেছি, রান আটকে রেখে উইকেট নিয়েছি। তাই এটিকে শুধুই স্পিন উইকেট বানিয়ে জয় বলা ঠিক হবে না। ”
পেসারদের গতি ও আত্মবিশ্বাস
সালাউদ্দিন জানান, পেসারদের প্রতি দল এখনো আস্থা রাখে, তবে বিপিএল ও ডিপিএলের ক্লান্তি তাদের গতিতে প্রভাব ফেলেছে। “সঠিক অনুশীলনের মাধ্যমে তা ফিরে আসবে। দুই একটা ম্যাচ দিয়ে পুরো ক্রিকেটের অগ্রগতি বা পিছিয়ে পড়া বিচার করা ঠিক না,” বলেন তিনি।
সামগ্রিক ভাবনা
চট্টগ্রাম টেস্টে জয় নিঃসন্দেহে স্বস্তির, তবে ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়ার পথে তা কি যথেষ্ট? কৌশলগতভাবে একটি ম্যাচ জিতলেও ভবিষ্যতের জন্য কি সেই একই কৌশল মানানসই? বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কি সাহসের সঙ্গে সামনের দিকে তাকাবে, নাকি নিরাপদ অঞ্চলে ফিরে গিয়ে আবার পুরনো ছকে আবদ্ধ থাকবে?
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটাই বড় প্রশ্ন—আমরা কী শিখছি পরাজয় থেকে, এবং কীভাবে নিচ্ছি আমাদের ভবিষ্যতের প্রস্তুতি?
এমএইচএম