ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতীয় প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, ভারতের সাবেক উইকেটকিপার দীপ দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, আইপিএল আবার শুরু হবে কিনা, তা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে “জাতীয় আবেগ” বা জনগণের মানসিক অবস্থার ওপর।
দীপ দাশগুপ্ত বিবিসি স্পোর্টকে বলেন, “ক্রিকেট ভারতের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কিছু বিষয় আছে যা তার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এই মুহূর্তে আইপিএল স্থগিত রাখাই সবচেয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। দেশবাসীর অনুভূতি এখন একেবারেই ভিন্ন রকম। ”
বিদেশি ক্রিকেটারদের ভারত ছাড়ার ঢল
সপ্তাহজুড়ে বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় অনেকেই ভারত ছেড়ে যাচ্ছেন। ইংল্যান্ডের অধিকাংশ ক্রিকেটার, অস্ট্রেলিয়ানরাও ভারত ছাড়ছেন বলে জানা গেছে। যদিও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা এখনো ভারতে রয়েছেন।
দীপ দাশগুপ্ত মনে করেন, “আইপিএল হয়তো এক সপ্তাহ পর পুনরায় শুরু করা সম্ভব, কিন্তু বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। যদি বিদেশি খেলোয়াড়রা না থাকেন, তাহলে টুর্নামেন্ট আবার শুরু করাটাই হবে প্রশ্নবিদ্ধ। ”
ধর্মশালার অঘটন: নাটকীয় মোড়
আইপিএল স্থগিতের মূল কারণ ধর্মশালায় ঘটে যাওয়া নিরাপত্তাজনিত ঘটনা। পাঞ্জাব কিংস ও দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যকার ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎ করে ফ্লাডলাইট নিভিয়ে দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তার কারণে খেলা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঠিক সেই সময় পাকিস্তান ভারতের পশ্চিম সীমান্তে একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় বলে অভিযোগ তোলে ভারত। ইসলামাবাদ অবশ্য এ দাবি অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের মতে, ভারতের বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে, গত মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলায় ২৬ জন বেসামরিক লোক প্রাণ হারান, যার পেছনে পাকিস্তানপন্থী জঙ্গিদের দায়ী করেছে ভারত।
আইপিএল না এশিয়া কাপ?
বর্তমানে আইপিএলের ১৬টি ম্যাচ বাকি আছে, যা ২৫ মে’র মধ্যেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে টুর্নামেন্টটি সেপ্টেম্বর মাসে পুনরায় আয়োজনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
এই সময়েই হওয়ার কথা ছিল এশিয়া কাপ, যা হয়তো বাতিল হতে পারে।
বিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে জিওস্টার সম্প্রচার সংস্থাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, তারা টুর্নামেন্ট স্থগিত করার সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। বিসিসিআই ২০২২ সালে আইপিএল সম্প্রচারের জন্য ৬.০২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে।
এদিকে, সেপ্টেম্বরে আইপিএলের জন্য সময় বের করলে, তা দ্য হান্ড্রেড টুর্নামেন্টের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে—এ নিয়ে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) উদ্বিগ্ন।
ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ভবিষ্যৎ অন্ধকার
দীপ দাশগুপ্ত বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে কথা বলাও অতিশয় অসংবেদনশীল। ভবিষ্যতে কী হবে, সেটা পরে দেখা যাবে। এই মুহূর্তে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা করাটাই অপ্রাসঙ্গিক। ”
এর আগেও দুই দেশের মধ্যে কেবল বহু–জাতি টুর্নামেন্টেই ম্যাচ হয়েছে। ভারত চলতি বছরের শুরুতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পাকিস্তান সফর করতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন আইসিসি জানায়, এমন পরিস্থিতিতে উভয় দেশের ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করা হবে।
এই বছরের নারী বিশ্বকাপ আয়োজন করবে ভারত। পাকিস্তান ইতোমধ্যে সেই টুর্নামেন্টে কোয়ালিফাই করেছে, তবে তারা ভিন্ন দেশে অবস্থান করবে। তবুও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আদৌ হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। আইসিসি বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
অন্যদিকে, পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) এর বাকি অংশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দলগুলো ইতোমধ্যে পাকিস্তান ছেড়েছে।
এমএইচএম