ঢাকা, শুক্রবার, ১ কার্তিক ১৪৩২, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

ক্রিকেট

ক্রিকেটে আসছে চতুর্থ ফরম্যাট ‘টেস্ট টোয়েন্টি’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২৩, অক্টোবর ১৬, ২০২৫
ক্রিকেটে আসছে চতুর্থ ফরম্যাট ‘টেস্ট টোয়েন্টি’ সংগৃহীত ছবি

ক্রিকেট তার সবচেয়ে যুগান্তকারী বিবর্তনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। আজ ক্রিকেটের চতুর্থ ফরম্যাট ‘টেস্ট টোয়েন্টি’র যাত্রা শুরু হয়েছে।

নতুন ফরম্যাটের উদ্যক্তারা জানান, ‘টেস্ট টোয়েন্টি’ একটি বৈপ্লবিক নতুন ফরম্যাট, প্ল্যাটফর্ম এবং বৈশ্বিক আন্দোলন, যা বিশ্ব ক্রিকেটের ভবিষ্যৎকে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজাতে প্রস্তুত। কয়েক দশক ধরে ক্রিকেট প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করলেও, বিশ্বজুড়ে তরুণ খেলোয়াড়দের একসঙ্গে বিকশিত হওয়ার মতো কোনো একক, সমন্বিত মঞ্চের অভাব ছিল। টেস্ট টোয়েন্টি সেই চিত্র বদলাতেই তৈরি হয়েছে।  

ক্রিকেটের এই ভবিষ্যৎ রূপায়ণে ভারতীয় ক্রীড়া উদ্যোক্তা গৌরব বাহিরভানির পাশে দাঁড়িয়েছেন খেলাটির সবচেয়ে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তিত্ব- এবি ডি ভিলিয়ার্স, স্যার ক্লাইভ লয়েড, ম্যাথু হেইডেন এবং হরভজন সিং। তারা একসঙ্গে টেস্ট টোয়েন্টি উপদেষ্টা বোর্ডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন মাইকেল ফোর্ডহ্যাম (রাজস্থান রয়্যালস আইপিএল দলের প্রাক্তন সিইও)।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স এই পরিকল্পনার মূল উদ্ভাবক। তিনি বলেন, ‘টেস্ট টোয়েন্টি হলো উদ্দেশ্যমূলক উদ্ভাবন। এটি খেলাটির ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে আলিঙ্গন করে। এটি তরুণ খেলোয়াড়দের তাড়া করার জন্য একটি নতুন স্বপ্ন দেয় এবং ভক্তদের অনুসরণ করার জন্য একটি নতুন গল্প দেয়। ’

ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ও প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক স্যার ক্লাইভ লয়েড বলেন, ‘ক্রিকেটের প্রতিটি যুগের মধ্য দিয়ে জীবন কাটানোর অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি, খেলাটি সবসময়ই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এতটা বিচক্ষণতার সঙ্গে আগে কখনো নয়। টেস্ট টোয়েন্টি খেলাটির শিল্প এবং ছন্দ ফিরিয়ে এনেছে, এবং একই সঙ্গে এটিকে আধুনিক শক্তিতে বাঁচিয়ে রেখেছে। ’

সাবেক অজি ওপেনার ম্যাথু হেইডেন বলেন, ‘একজন খেলোয়াড় এবং একজন পিতা হিসেবে আমি এটিকে বিভিন্ন যুগের মধ্যে ক্রিকেটের সেতুবন্ধন হিসেবে দেখি। এটি এমন একটি ফরম্যাট যা পুরোনো বিশ্বের জ্ঞানকে নতুন বিশ্বের আগুনে নিয়ে আসে। তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য এটি শুধু ক্রীড়াবিদ হিসেবেই নয়, মানুষ হিসেবেও বিকশিত হওয়ার সুযোগ। ’

উদ্যোগটির মশালবাহক ও ভারতের কিংবদন্তি স্পিনার হরভজন সিং বলেন, ‘ক্রিকেটের একটি নতুন হৃদস্পন্দনের প্রয়োজন ছিল। এমন কিছু যা আজকের তরুণদেরকে খেলাটির আদি সত্তার সঙ্গে সংযুক্ত করে। টেস্ট টোয়েন্টি ঠিক সেই কাজটিই করে। ’

চতুর্থ ফরম্যাট কেমন হবে?

টেস্ট টোয়েন্টিতে টেস্ট ক্রিকেটের কৌশলগত গভীরতার সঙ্গে টি-টোয়েন্টির গতি ও বিনোদনকে একত্রিত করা হয়েছে। ম্যাচটি ৮০ ওভারের, যেখানে প্রতিটি দল ২০ ওভারের দুটি করে ইনিংসে ব্যাট করবে এবং এক ইনিংসের স্কোর পরের ইনিংসে যোগ হবে। টেস্ট ম্যাচের মতোই প্রতিটি দল দুবার ব্যাট করবে। নতুন ফরম্যাটের জন্য কিছু পরিমার্জিত সমন্বয়সহ টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি উভয় ক্রিকেটের নিয়মই প্রযোজ্য হবে। ম্যাচের ফলাফল জয়, পরাজয়, টাই বা ড্র হতে পারে।

টেস্ট টোয়েন্টি বিশ্বের প্রতিটি প্রান্ত থেকে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য সুযোগের দরজা খুলে দেবে। খেলোয়াড়দের দক্ষতা, ডেটা এবং মেধার ভিত্তিতে একটি বহু-স্তরীয়, বিশ্লেষণ-ভিত্তিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে, যা ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্বাচনের জন্য একটি এলিট নিলাম পুলে নিয়ে যাবে। যারা নির্বাচিত হবে না, তারাও টেস্ট টোয়েন্টি ইকোসিস্টেমের মধ্যে থাকবে এবং প্রতি মৌসুমে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসার জন্য প্রশিক্ষণ, মেন্টরশিপ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাবে। দ্বিতীয় মৌসুম থেকে নারী ক্রিকেটারদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

টেস্ট টোয়েন্টির প্রথম পূর্ণ মৌসুম ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হবে, যেখানে ছয়টি হাই-প্রোফাইল বৈশ্বিক ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকবে, যার মধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক (দুবাই, লন্ডন এবং আমেরিকার একটি শহর) এবং তিনটি ভারতীয় (ফ্র্যাঞ্চাইজি-নির্বাচিত শহর)। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির পেছনে থাকবেন একজন পরবর্তী প্রজন্মের সেলিব্রিটি। টুর্নামেন্টের জন্য প্রতিভা বাছাই করা হবে জুনিয়র টেস্ট টোয়েন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে, যা ৫০টিরও বেশি দেশে বিস্তৃত বিশ্বের বৃহত্তম যুব ক্রিকেট প্রতিভা অন্বেষণ প্ল্যাটফর্ম।

এই পর্যায় থেকে উঠে আসা সেরা ৩০০ জন খেলোয়াড় গ্লোবাল অকশন পুলে অগ্রসর হবে, যেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো উদ্বোধনী মৌসুমের জন্য প্রতিভা বাছাই করবে। প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি ১৬ জন খেলোয়াড়ের একটি স্কোয়াড গঠন করবে, যার মধ্যে আটজন ভারতীয় এবং আটজন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় থাকবে। নিলামে মোট ৯৬ জন খেলোয়াড়কে দলে নেওয়া হবে, বাকি ২০৪ জন ‘ওয়াইল্ডকার্ড পুল’র মাধ্যমে মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনের সুযোগ পাবে।

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।