মিরপুর থেকে: বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে তোলা ২২০ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে সফরকারী ইংল্যান্ড ২৪৪ রান তুলে অলআউট হয়। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে স্বাগতিকরা ৩ উইকেট হারিয়ে তুলেছে ১৫২ রান।
সফরকারীদের থেকে ২৪ রানে পিছিয়ে থেকে টাইগারদের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করেন গত ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। ইনিংসের ১৩তম ওভারে তামিমের বিদায় বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। ৪৭ বলে ৪০ রান করতে তামিম সাতটি বাউন্ডারি হাঁকান। জাফর আনসারির বলে ইংলিশ দলপতি অ্যালিস্টার কুকের হাতে ধরা পড়েন তামিম। এটি আনসারির অভিষেক উইকেট। ওয়ানডে স্টাইলে খেলে ৭৭ বলে ৬৫ রানের উদ্বোধনী জুটি এনে দেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস।
পরের ওভারে বিদায় নেন মুমিনুল হক। বেন স্টোকসের লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো কুকের তালুবন্দি হন ১ রান করা মুমিনুল। দলীয় ৬৬ রানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায়।
এরপর জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং ইমরুল। দিন শেষে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ অর্ধশতক হাঁকিয়ে ইমরুল কায়েস ৫৯ রানে (৮১ বল) অপরাজিত আছেন। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৩তম অর্ধশতক তুলতে গিয়ে কিছুটা বোকামির পরিচয় দেন। দিনের একেবারে শেষ বলে জাফর আনসারিকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন। ৪৭ রানে বিদায় নিতে হয় রিয়াদকে। তার ৫৭ বলের ইনিংসে ছিল ৫টি চারের মার। রিয়াদ-ইমরুল মিলে স্কোরবোর্ডে ৮৬ রান যোগ করেন।
বৃষ্টির কারণে গতকাল (২৮ অক্টোবর) পুরোদিন খেলা সম্ভব হয়নি। ১২.৩ ওভার শেষে তিন উইকেটে পঞ্চাশ রান নিয়ে মাঠে ছাড়ে ইংলিশরা। অপরাজিত থাকেন জো রুট ও মঈন আলী। শুক্রবার স্বাগতিকদের ২২০ রানের জবাবে শুরুতেই বেন ডাকেটের (৭) উইকেট হারায় ইংলিশরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ও নিজের প্রথম ওভারেই উইকেট উদযাপনে মাতেন সাকিব অাল হাসন। পঞ্চম ওভারে ইংলিশ দলপতি অ্যালিস্টার কুককে এলবিডব্লুর ফাঁদে পেলেন চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজ।
পরে গ্যারি ব্যালান্সকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন ১৯ বছর বয়সী এ উঠতি অফস্পিন অলরাউন্ডার। ডাকেটের পর ব্যালান্সকেও গ্লাভসবন্দি করেন মুশফিক। দলীয় ৪২ রানের মাথায় তিন উইকেট হারায় তারা। দ্বিতীয় দিন ইনিংসের ৫৬তম ওভারে মঈনকে (১০) ক্লিন বোল্ড করে দিনের প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দেন আগের দিনের দুই উইকেট শিকারি মিরাজ। পরের ওভারেই বেন স্টোকসকে (০) মুমিনুল হকের ক্যাচে পরিণত করে উইকেটের খাতায় নাম লেখান তাইজুল। দলীয় ৬৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে চাপের মুখে পড়ে ইংলিশ শিবির।
ষষ্ঠ উইকেটে জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ৪৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন রুট। ৩৩তম ওভারের মাথায় দলীয় ১১৪ রানে মিরাজের চতুর্থ শিকারের বলটিতে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন বেয়ারস্টো (২৪)। দলীয় ১৪৪ রানে জো রুটের (৫৬) বিদায়ে অষ্টম উইকেট হারায় ইংলিশরা। সেখান থেকেই দলকে টেনে তোলে লিড এনে দেয় উকস-রশিদ পার্টনারশিপ। ৪৪তম ওভারে রুটকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন তাইজুল।
নবম উইকেটে ক্রিস উকস ও আদিল রশিদের ৯৯ রানের অনবদ্য জুটির সুবাদে ২৪ রানের লিড নিয়ে থামলো ইংল্যান্ড। লো-স্কোরিং প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২২০ রানের জবাবে ২৪৪ রানে অলআউট সফরকারীরা। একাই ইংলিশদের ছয় ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠান মেহেদি হাসান মিরাজ।
ইনিংসের ৮১তম ওভারে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি এনে দেন মিরাজ। শুভাগত হোমের হাতে উকস (৪৬) বাধার সমাপ্তি ঘটে। পরের ওভারেই স্টিভেন ফিনকে (০) মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি করে ইংলিশ ইনিংসের ইতি টানেন তৃতীয় উইকেট শিকারি তাইজুল ইসলাম। অপর প্রান্তে ৪৪ রানে অপরাজিত থেকে যান রশিদ। ২৪৪ রানেই গুটিয়ে যায় ইংলিশরা। ২৪ রানের লিড পায় সফরকারীরা।
চট্টগ্রাম টেস্টের পর ঢাকা টেস্টেও পাঁচ উইকেটের অভিজাত ক্লাবে নাম লেখান মিরাজ। ৪১তম ওভারে জাফর আনসারিকে (১৩) শুভাগত হোমের ক্যাচ বানিয়ে এমন কীর্তি স্পর্শ করেন ১৯ বছর বয়সী এ উঠতি অফস্পিন অলরাউন্ডার। ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে হাত ঘুরিয়ে তুলে নেন ৬টি উইকেট। তাইজুল তিনটি আর সাকিব নেন একটি উইকেট।
এর আগে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের প্রথম সেশনে একক আধিপত্য দেখায় টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর ক্রমেই যেন উইকেটের আচরণ বদলায়! দলীয় ১ রানে ইমরুল কায়েসকে (১) হারালেও মুমিনুল হককে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ১৭০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে শক্ত ভিত গড়ে দেন সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবাল।
তামিমের দুর্দান্ত ইনিংস সত্ত্বেও বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২২০ রানে। শুরুটা বাঘের মতো হলেও মিডঅর্ডারের ব্যর্থতায় বড় সংগ্রহ গড়া হয়নি। চট্টগ্রাম টেস্টের উইকেট যেন ফিরে আসে মিরপুরে। বল মন্থর হয়ে ব্যাটে আসার সঙ্গে টার্নও বাড়তে থাকে। এর পুরো সুবিধাই কাজে লাগায় বোলাররা। একদিনে দু’দলের ১৩ উইকেটের পতন তো তারই প্রমাণ।
শেষ ৪৯ রানে ৯ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শেষ ৩০ রানে আট উইকেট। ভাবা যায়! রীতিমতো ধসই নামের টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপে। ব্যাটিংয়ে হতাশার দিনে উজ্জ্বল ছিলেন তামিম ও মুমিনুল। অন্যদিকে, ইংলিশদের হয়ে একাই পাঁচ উইকেট দখল করেন অফস্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলী।
ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম (১০৪)। ৪২তম ওভারে মঈনের বলে এলবিডব্লুর শিকার হন দেশসেরা এ ওপেনার। মঈনের বলেই বোল্ড হয়ে ৬৬ রান করে আউট হন মুমিনুল। আর কেউই উইকেটে থিতু হতে পারেননি।
বাজে শট খেলে একে একে সাজঘরে ফেরেন সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ১৩, সাকিব অাল হাসান ১০, অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ৪, সাব্বির রহমান ০, শুভাগত হোম ৬, কামরুল ইসলাম রাব্বি ০ ও মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১। ৫ রানে অপরাজিত থাকেন তাইজুল ইসলাম।
৫ উইকেট নেওয়া মঈনের সঙ্গে বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন ইমরুলকে ফিরিয়ে উইকেটের সূচনা করা ক্রিস উকস ও বেন স্টোকস। উকস তিনটি ও বাকি দুই উইকেট নেন স্টোকস।
সিরিজ বাঁচাতে এ ম্যাচে মুশফিকদের জয়ের বিকল্প নেই। দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে সফরকারীরা। চট্টগ্রামে জয়ের কাছাকাছি গিয়েও শেষদিকের ছন্দপতনে ২২ রানের পরাজয় সঙ্গী হয়। মিরপুরে কী সেই আক্ষেপ মেটাতে পারবে টিম বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
এমআরএম/এমআরপি