ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সেই মিরপুর, এই মিরপুর

মহিবুর রহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০১৭
সেই মিরপুর, এই মিরপুর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যারা আগে এসেছেন তারা যদি এই মুহূর্তে আসেন, ঠিক চিনতে পারবেন না। বুঝেই উঠতে পারবেন না, মাত্র এক মাস আগেও এই মাঠেই খেলা করতো সবুজের সমারোহ। এই মাঠেই চার-ছক্কার ফুল-ঝুড়ি ছুটতো।

বর্তমানে মাঠের উপরিভাগের ছয় ইঞ্চি তুলে ফেলায় ঘাস নেই, ধুঁ ধুঁ মরুভূমির মতো পুরো মাঠই সাদা। বৃহদাকার মাটি কাটার যন্ত্র ও মাটি সমান করার রোলার মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।

শ্রমিকরা কাজ করছেন মাঠের বালুমিশ্রিত মাটি সরাতে। আর সেই মাটি কেটে মাঠের পাশে রাখা হয়েছে বড় বড় স্তুপ করে।

একথা শোনার পর চমকে উঠতে পারেন এই ভেবে যে তাহলে কি দেশের হোম অব ক্রিকেটে আর খেলা হবে না! শোনা যাবে না তামিম-ইমরুলদের ব্যাটের গর্জন! প্রতিপক্ষের স্ট্যাম্প গুঁড়িয়ে দিয়ে উল্লাসে মেতে উঠবেন না মাশরাফি, সাকিবরা! না এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। মিরপুর শের-ই-বাংলার এই মাঠে এখন চলছে সংস্কারের কাজ। আজ থেকে দশ বছর আগে মাঠের সব শেষ সংস্কারের কাজ হয়েছিল।

ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমচলতি মাসের শুরুতে দশ বছর পর আবার সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান পরামর্শক এসে মাঠ দেখেছেন। এরপর তার দেয়া প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতেই শুরু হয়েছে সংস্কারের কাজ। বাংলাদেশ ক্রিকেটের গ্রাউন্ডস অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিস কমিটির ম্যানেজার সৈয়দ আব্দুল বাতেন জানালেন, ‘পরামর্শক হিসেবে তিনি খুবই দক্ষ। ব্রাজিল বিশ্বকাপে স্বাগতিকদের প্রতিটি মাঠ এবং আসন্ন কাতার বিশ্বকাপেও কাতারের মাঠ তৈরির কাজ তিনিই করছেন। ’      

মাঠের কি ধরনের সংস্কার করছেন? উত্তরে বাতেন জানালেন, ‘আমরা মাঠের উপরিভাগের ছয় ইঞ্চি উঠিয়ে ফেলছি। কেননা সারফেসে ধুলো জমায় ভেতরে পানি যেতে পারছে না। তাছাড়া মাটির নিচের পাইপগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ফেঁটে গেছে, যা মাঠে পানি জমাতে সাহায্য করছে। তাই মাঠের যেসব জায়গায় পানি জমতো সেগুলো আগে থেকেই চিহ্নিত করে রেখেছি এখন খুঁড়ে আমরা সেগুলো ঠিক করে দিচ্ছি। ’

ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবাতেন আরও যোগ করেন, ‘সারফেসে আমরা ৬ ইঞ্চি সিলেট থেকে আনা বালু বসাবো। ৬ ইঞ্চি সারফেসের পুরোটাই বালু। মাটি থাকবে না, থাকলে সাকিং হবে না। ফলে ড্রেনেজে অসুবিধার সৃষ্টি করবে। আগেও ছয় ইঞ্চি সারফেসের পুরোটাই বালু ছিল। মাঠে যেন পানি জমতে না পারে সেজন্যই বালু দেয়া হয়। ’

ছয় ইঞ্চি সারফেসের পুরোটাই বালু! কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম। কেননা খালি চোখে যে সবুজ মাঠটি আমরা দেখি তাতে মনে হয় উপরিভাগটা সম্পূর্ণই মাটির। বাতেন ‘না’ সূচক উত্তর দিয়ে বিস্তারিত বললেন, ‘উপরিভাগের ছয় ইঞ্চির পুরোটাই বালু। ছয় ইঞ্চি বালুর পর যে স্তরটি শুরু হয়েছে সেখান থেকে ৮-৯ ইঞ্চি পর্যন্ত পাথরের স্তর। আর এই পাথরের সাথে আছে সিলেট থেকে আনা বালুর মিশ্রন। পাথরের ফাঁকে ফাঁকে আছে জিওটেক্স, তার সাথে আছে পারপোরেটেড পাইপ। জিওটেক্স হলো ছাঁকন যন্ত্র। উপরিভাগের ছয় ইঞ্চি থেকে এক ফিট নিচে গেলেই জিওটেক্স পাওয়া যাবে। পুরো মাঠের নিচে আট ইঞ্চি, ছয় ইঞ্চি লম্বা পাইপ আছে। এগুলো মাটির নিচের নির্দিষ্ট দূরত্বে। পাইপ লাইনের আবার সাব পাইপ লাইন আছে। পাইপ দিয়ে যাওয়া পানি গিয়ে পড়ে মাঠের চারপাশ জুড়ে থাকা ড্রেনে। ’

যা হোক, আবার ফিরে গেলাম মূল আলোচনায়। শুরুতেই বাতেন বললেন, জুলাইয়ে সংস্কারের কাজ অর্ধেক শেষ হয়ে যাবে। আর পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগবে আগস্ট মাস। খোঁড়া খুঁড়ি শেষ হয়ে যাবে। আগামী সপ্তাহেই উপরিভাগের ছয় ইঞ্চি সারফেস উঠানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর শুরু হবে নতুন সারফেস বসানোর কাজ। তার উপর লাগিয়ে দেয়া হবে বারমুডা ঘাস।

ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমবারমুডা হলো চিকন পাতা বিশিষ্ট ঘাস। খুলনা ও সিলেটে এই ঘাসগুলো বেশি জন্মায়। পাতা চিকন হওয়ায় পানি জমতে পারে না। খুব সহজেই গড়িয়ে পড়ে।

এদিকে সংস্কার কাজ শেষে মাঠের ড্রেনেজ সিস্টেম আগের চেয়ে অনেক ভালো হবে বলে বিশ্বাস করেন এই গ্রাউন্ডস ম্যানেজার, ‘ড্রেনেজ সিস্টেম আগের চেয়ে অবশ্যই ভালো হচ্ছে। ভারী বৃষ্টি হলেও মাঠ শুকাতে লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট। ’

আউটফিল্ডও আগের চেয়ে আরও দ্রুত হবে বলে জানালেন বাতেন। তবে ঘাস কতটা সবুজ থাকবে সেটা তিনি এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না, ‘ঘাস সবুজ থাকবে কি না সেটা নির্ভর করে আপনি কতগুলো ম্যাচ এখানে খেলবেন। বছরে দেড়শো ম্যাচ খেললে ঘাস সবুজ থাকবে কিভাবে? খেলা না হলে সার ও পানি দিলে দু’দিনের মধ্যেই ঘাস সবুজ হয়ে যাবে। ’

হোম অব ক্রিকেট হওয়ায় দেশের অন্যান্য সব ভেন্যুর চেয়ে শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের উপরেই চাপটি সব সময়ই বেশি থাকে। ফলে মাঠ যত্নে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আন্তর্জাতিক ম্যাচ তো বটেই, ঘরোয়া ক্রিকেটের প্র্রথম বিভাগের ম্যাচগুলোও এই মাঠেই গড়ায়। তাই যথাযথ সংরক্ষণের জন্য মিরপুরের উপর চাপ কমানোর কোনো বিকল্প নেই। আর তা না হলে আবার অচিরেই মাঠ নষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থেকেই যাবে। বিষয়টি এখন কর্তৃপক্ষ বুঝলেই হলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ০৯ মার্চ ২০১৭
এইচএল/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।