ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১২ রমজান ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত চন্দনপুরা মসজিদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৫
মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত চন্দনপুরা মসজিদ ...

চট্টগ্রাম: দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ আর ১৩ মণ রুপা-পিতলে গড়া বর্ণিল গম্বুজে সমৃদ্ধ ‘চন্দনপুরা মসজিদ’। দেশ-বিদেশে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া এ মসজিদের মূল নাম ‘হামিদিয়া তাজ মসজিদ’।

নগরের প্রাণকেন্দ্রে মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মসজিদটি দেখতে পর্যটকেরা ছুটে আসেন প্রতিদিন।  

মসজিদের সুউচ্চ মিনার, দেয়াল, দরজা-জানালা থেকে শুরু করে সব কিছুতে দৃষ্টিনন্দন সূক্ষ্ম কারুকাজ মুগ্ধ করে।

বড় গম্বুজের চারপাশে আহলে বায়তে রাসূলসহ দুনিয়ায় জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবির নাম লেখা রয়েছে। লোকমুখে এ মসজিদের বেশ কয়েকটি নাম ছড়িয়ে পড়েছে- মসজিদই সিরাজ-উদ-দৌলা, চন্দনপুরা বড় মসজিদ, তারা মসজিদ ইত্যাদি। দোতলা মসজিদ ও উত্তর পাশের গলি, সিরাজ-উদ-দৌলা সড়ক মিলে প্রায় ৩ হাজার মুসল্লি এখানে জুমার নামাজ আদায় করেন।

মসজিদ সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৫০ সালে এ মসজিদ পুনর্নির্মাণ হয়। এ মসজিদে রুপা-পিতলের প্রাচীন অনেক কারুকাজ ছিল। বৈরী আবহাওয়ায় এসব জিনিস যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি সংস্কারের সময়ও অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। আবদুল হামিদ মাস্টার যখন এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন তখন এটি ছিল মাটির ঘরের ওপর টিনের ছাউনির। তখনো এটি নকশা ও স্থাপত্যশৈলীতে অনন্য ছিল। এরপর উনার ছেলে আবু সাইয়্যিদ দোভাষ ১৯৪৬ সালে এটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেন। কলকাতা থেকে কারিগর এবং ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে নির্মাণসামগ্রী ও নকশাসহ বিভিন্ন উপকরণ আনা হয়েছিল। কাজ শেষ হয় পঞ্চাশের দশকে।

এ মসজিদের বড় গম্বুজটি ছিল চাঁদি (রুপা) ও পিতলের তৈরি। কালের বিবর্তনে বৈরী আবহাওয়ার কারণে এগুলো বিবর্ণ হয়ে পড়ে। তখন সবুজ, গোলাপি ও হলুদ রং করে দেওয়া হয়। ৫-৬ বছর পর পর রং করা হয়। যখন মাইকের ব্যবহার ছিল না তখন চার তলা সমান উঁচু মিনারে উঠে আজান দেওয়া হতো। এ রকম দুইটি মিনার এখনো টিকে আছে।  

মসজিদে নিয়মিত নামাজ পড়তে আসেন আজিজুল হক। তিনি জানান, অনন্য স্থাপত্যশৈলীর কারণে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক এ মসজিদ দেখতে আসেন। এ মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী টিকিয়ে রাখার জন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। সড়কের পাশের বৈদ্যুতিক তার ও আশপাশের বিবর্ণ ভবনগুলোর কারণে মসজিদের সৌন্দর্য ম্লান হচ্ছে।  

স্থপতি আশিক ইমরানের কাছে মসজিদটি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলানিউজকে বলেন, এটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপনা। অসাধারণ নির্মাণশৈলী, কারুকাজ রয়েছে এখানে। এটি সংরক্ষণ করতে হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশে এ ধরনের স্থাপনা সরকারিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার করা হয়। এ ধরনের স্থাপনায় কেউ হাত দিতে পারে না।  

তিনি বলেন, এখনো মসজিদটির অনেক গুরুত্বপূর্ণ  নকশা, ডিজাইন, কারুকাজ, ধাতব উপকরণ অক্ষত আছে। বৈজ্ঞানিক পন্থা, ইঞ্জিনিয়ারিং মেথড অনুসরণ করে প্রাচীন মসজিদটি সংরক্ষণ করা গেলে এটি দেশের মূল্যবান সম্পদ হবে। হাজার হাজার পর্যটক আসবে মসজিদটি দেখতে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৫
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।