চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আসন্ন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার (১২ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় উপাচার্যের দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি তুলে ধরেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, পাঁচটি অনুষদের ১৫টি কেন্দ্রে ৬০টি কক্ষে ভোট গ্রহণ হবে। প্রতিটি রুমে গড়ে ৪০০–৫০০ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। একজন শিক্ষার্থী মোট ৪০টি ভোট প্রদান করবেন। প্রতিটি রুমে গোপন বুথ স্থাপন করা হয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন বিভাগীয় চেয়ারম্যানরা, রিটার্নিং অফিসার হবেন সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিন এবং সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বে থাকবেন প্রভোস্টবৃন্দ।
প্রতিটি ভবনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি চারজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী প্রস্তুত থাকবে, যারা প্রয়োজনে তিন মিনিটের মধ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যরাও দায়িত্বে থাকবে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বলেন, “ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সব কেন্দ্রের বাইরে মোবাইল কোর্ট থাকবে। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসার জন্য পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ”
নির্বাচন উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। ১৪ অক্টোবর থেকে পরিচয়পত্র ছাড়া কেউ ক্যাম্পাসে প্রবেশ বা অবস্থান করতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১টি প্রবেশপথের মধ্যে ৭টি ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বাকিগুলোতে প্রবেশের জন্য আইডি কার্ড দেখাতে হবে।
ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, যা বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলেও ব্যাটারি ব্যাকআপে চালু থাকবে। প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমোদন ছাড়া কেউ কোনো কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রার্থীরা সরাসরি কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারলেও তাদের পোলিং এজেন্ট উপস্থিত থাকতে পারবে।
ভোট চলাকালে অনুপস্থিত ভোটারদের ব্যালট সিলগালা করে রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে ফেরত নেওয়া হবে—যা স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে করা হচ্ছে। ভোট গ্রহণ চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটকেন্দ্রে পানি, মেডিকেল টিম ও জেনারেটর সাপোর্টের ব্যবস্থাও থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, ক্যাম্পাসে কোনো অবৈধ শিক্ষার্থী যাতে অবস্থান করতে না পারে সে বিষয়ে অভিযান চলছে। প্রথম বর্ষ ছাড়া যাদের আইডি কার্ড নেই, তাদের ক্যাম্পাসে থাকতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনের দিন সাংবাদিকরা প্রেস কার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে যানবাহন ব্যবহার করতে পারবেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার প্রফেসর ড. মনির উদ্দিন, কমিশনার ও সদস্য সচিব প্রফেসর ড. একেএম আরিফুল হক সিদ্দিকীসহ কমিশনের অন্যান্য সদস্য ও আইন-শৃঙ্খলা কমিটির শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
এমএ/পিডি/টিসি