ঢাকা: সব শিক্ষকই পরিমলের মতো নীচ নন। এক পরিমলকে দিয়ে গোটা শিক্ষক সমাজকে বিচার করা অযৌক্তিক।
রাজধানীর ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা এভাবেই তাদের মতামত তুলে ধরলেন।
তারা বলেন, ছাত্রী নিপীড়নকারী শিক্ষক পরিমল জয়ধর কখনোই শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। তার কারণে শিক্ষক সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে গেছে বলেও ভাবার কোনো কারণ নেই।
শনিবার এসএসসি ফলপ্রকাশের পর ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কতটা গুরুত্ব দেন, তা দেখা যায়, শনিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পরে।
কৃতি ছাত্রীরা ছুটে প্রিয় শিক্ষকদের সালাম করে দোয়া নিচ্ছিলেন। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগমের কক্ষের সামনে রীতিমত লাইন ধরে দাঁড়ালো তারা।
সেখানে দাঁড়ানো বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী মতিয়ার নূরের মা শাহানারা পারভীন বাংলানিউজকে বলেন, পরিমলকে শিক্ষক বলা যায় না, বলা উচিৎ সে শিক্ষক সমাজের কলঙ্ক।
ভিকারুনি্নসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা শাখার বাংলা বিভাগের শিক্ষক পরিমল জয়ধরের নামও উচ্চারণ করতে চান না কোনো কোনো শিক্ষার্থী।
তাদের মতে, শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জীবনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি পালন করেন। তাই একজন বিচ্যূত মানুষকে দিয়ে সব শিক্ষককে বিচার করা যাবে না।
তবে শিক্ষক নিয়োগে আরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে বলেও তাদের অনেকের মত।
তিন ছাত্রী বলেন, নিয়োগের আগেই সেই শিক্ষকের যোগ্যতা, কোথায় পড়ালেখা করেছেন তিনি, আগে কোথায় কাজ করতেন সেসব দেখতে হবে।
তারা বলেন, পরিবার ও পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে তার অতীত জানার চেষ্টা করে যদি সন্তুষ্ট হওয়া যায়, তবেই তাদের নিয়োগ দেওয়া উচিত।
নিজেদের সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব প্রিয় শিক্ষকদেরই দিয়ে দিলেন স্কুলের ইংরেজি মাধ্যমের এই তিন ছাত্রী।
পরীক্ষায় ফলাফলে যেমন তাদের মিল রয়েছে। কথা শুনে তাদের মনেরও মিল বোঝা যায়। একে অন্যের কথায় সুর মেলাচ্ছিলেন। তিনজনই বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছেন।
তাদের একজন নুসরাত আফরিন ফারিয়া ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষকরা খুব উৎসাহ দেন। তারা নিজেরা যখন খুব উৎসাহ নিয়ে পড়ান, তখন আমাদের উৎসাহও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখা ছাত্রী তাসফিয়া তাসলিম প্রিয়া বলেন, কেউ কেউ টেক্সট বুক নির্ভর পড়ায় বিশ্বাস করেন না। তারা নিজেদের মতো করে গুছিয়ে পড়ান আমাদের। এতে খুব বেশি উপকার পাই।
এতক্ষণ বান্ধবীদের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছিলেন সারিকা সাইয়ারা। প্রকৌশলী হতে চাওয়া এই শিক্ষার্থী বলেন, যে শিক্ষক আমাদের দুর্বলতা নিয়ে হাসিঠাট্টা না করে দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেন, তিনিই একসময় আমাদের প্রিয় হয়ে যান।
তিন জনই জানান, নিজেদের প্রিয় শিক্ষকের নাম। শবনম জামান, ফয়জুন আজিম ও শুক্লা দে’সহ আরও কয়েকজনের নাম বললেন প্রায় চেঁচিয়ে।
ছাত্রীরা জানান, এই শিক্ষকদের সবচে বড় গুণ হল- তারা শিক্ষার্থীদের মেধা ও মননের নিজস্বতাকে গুরুত্ব দেন ও তা বিকাশে সহায়তা করেন।
‘বিজনেস ওম্যান’ হতে চান বানিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রী ইকরা বিনতে হাসান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষকই শিক্ষার্থীদের কাছে আদর্শ। তাই তাদের নিয়োগ দেওয়ার আগেই দেখা উচিত তিনি আসলে কেমন। আসলেই তিনি ‘আদর্শ’ হওয়ার যোগ্য কিনা।
বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী নন্দিতা সরকার প্রিয়ার মা প্রণীতা সরকার বলেন, ছাত্রীরা অনেক সময় নির্যাতিত হলেও ভয়ে লজ্জায় মুখ ফুটে নাও বলতে পারে। তাই শিক্ষকই এমন দেখেশুনে নিতে হবে যে, যাকে বিশ্বাস করতে পারি।
তিনি বলেন, যে শিক্ষক আমাদের বাচ্চাকে সত্যিকার অর্থেই নিজের বাচ্চার মতো স্নেহ করবে, সেই শিক্ষক প্র্রয়োজন। যাতে এই শিক্ষক সমাজের বদনাম না হয়, আমরাও একটু নিশ্চিন্ত থাকি।
ভিকারুন্নিসা এবছর সেরাদের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এবারও স্কুলের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
স্কুলটির বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এক হাজার ১৩০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক হাজার ১২৪ জন।
মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ২২ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৪৪ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯৫ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৪