ঢাকা: অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের অব্যাহত দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পরিবেশ।
এতে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হওয়াসহ শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রলীগের কোন্দলে গত দুই মাসে শিক্ষক, সাংবাদিক ও সাধারণ শিক্ষার্থীসহ আহত হয়েছে ২৫ জন। বহিষ্কার হয়েছে ১২ জন। শোকজ করা হয়েছে ৫ জনকে।
গত ১৩ মার্চ রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দ আলমকে পিস্তল ঠেকিয়ে টেন্ডার ছিনিয়ে আনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্র ও মাদক ব্যবসায়ী শ্যামল মোল্লাকে সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
সাধারণ সম্পাদক বহিষ্কার হওয়ায় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মফিজুল ইসলাম শিশিরকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
কিন্তু সাংগঠনিক কমান্ড না মানায় গত ৮ এপ্রিল শিশিরকে মারধর করেন একই সংগঠনের সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন।
এ ঘটনার ঠিক একদিন পর বিনা কারণে ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র রুদ্র ক্রান্তিকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান।
গত ২২ এপ্রিল ভর্তি জালিয়াতির টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতির অনুসারী ছোট কাননের ছুরিকাঘাতে আহত হন একই গ্রুপের কর্মী নাইম। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কাননকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং সোহেল, শেখ রাসেল ও ইব্রাহিমকে শোকজ করা হয়।
সভাপতির অনুসারীদের পর ২৮ এপ্রিল বাসে বসাকে কেন্দ্র করে সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত হন দুই ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল ও শাহরিয়ার।
ঘটনার জন্য উপ-প্রচার সম্পাদক আনিসুল তালুকদার শিশিরকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয় এবং দুই সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর ও আগুনকে শোকজ করা হয়।
এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ৩০ এপ্রিল এনএসআইয়ের রিপোর্টের ভিত্তিতে শিবিরের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে মেহেদিকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হলে একই সংগঠনের কর্মীরা তাকে বেধড়ক পেটায়।
ছাত্রলীগের পর গত ৪ মে দুই সাধারণ শিক্ষার্থীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষকে দুর্বল করতে হাতাহাতির জন্য সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী ও সংগঠনের দুই সাংগঠনিক সম্পাদককে দায়ী করে বিচার করতে গিয়ে সভাপতি প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতা-কর্মীদের হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হলে তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষুব্ধ হন।
এর ধারাবাহিকতায় গত ৫ মে সাংবাদিকরা প্রক্টর অফিসে শিবির কর্মী আটকের খবর সংগ্রহ করতে গেলে ‘সাংবাদিকদের উপর শিবির ভর করেছে’ বলে মন্তব্য করেন ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম। এ কথার প্রতিবাদ করলে সভাপতির নেতৃত্বে সাংবাদিকদের উপর দু’দফা হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। ঘটনাটি এখনও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্তাধীন।
ওই ঘটনার পর বাসে ওঠাকে কেন্দ্র করে গত ১১ মে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। পরদিন সংঘর্ষ বাঁধলে উপ-প্রচার সম্পাদক আনিছুর রহমান শিশিরকে দায়ী করে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে শাখা ছাত্রলীগ।
এ ঘটনায় গঠনতন্ত্রের ১৭ (ক)(খ)(গ) ধারা লঙ্ঘন করায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তোপের মুখে পড়ে সংগঠনটি।
এদিকে ১১ ও ১২ মে‘র ঘটনাকে কেন্দ্র করে আধিপত্য ধরে রাখতে ১৪ মে দু’গ্রুপের কর্মীরা আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে রাসেল, সাইফুল,আশরাফুল, কাননসহ উভয় পক্ষের ছয়জন আহত হন।
ঘটনার জন্য সাংগঠনিক কানন ওরফে বলদ কানন, আগুন, উপ-আইন সম্পাদক কানন ওরফে ছোট কানন, উপ-সম্পাদক মো. রায়হান, উপ-পাঠাগার সম্পাদক মো. ইব্রাহীম, সহ-সম্পাদক শরীফকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এ ধরনের বিতর্কিত ঘটনা এড়াতে জবি ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের এখনি সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ দরকার বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন-নীলদলের একাধিক শিক্ষক নেতা।
নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলাহীনতার বিষয়টি স্বীকার করে সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, সংগঠনের ভিতরে বিশৃঙ্খলা এড়াতে কর্মীদের সাংগঠনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, দলের মধ্যে বিরোধ এড়াতে ভবিষ্যতে সজাগ দৃষ্টি রাখা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৬ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৪