আশুলিয়া থেকে ফিরে: স্থায়ী ক্যাম্পাসের নামে সাভারে একের পর এক সরকারি জমি দখল করেছে ড্যাফোডিলস ইউনিভার্সিটি। বেপরোয়া চলছে এ দখলবাণিজ্য।
কোর্ট অব ওয়ার্ড থেকে শুরু করে সরকারি খাস খতিয়ানের জমি পর্যন্ত গ্রাস করেছেন ড্যাফোডিলসের মালিক সবুর খান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে এই লেবাস দেখিয়ে অবৈধ জমির ওপরই গড়ে তুলছেন ড্যাফোডিলস ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস।
এদিকে জমি উদ্ধারে ড্যাফোডিলস ইউনির্ভাসিটি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে বেশ কয়েকটি। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি দখল বাণিজ্য।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে জমি দখলের এই বাণিজ্য।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া মৌজায় যে জমির ওপর স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলার প্রক্রিয়া চলছে তার অধিকাংশই কোর্ট অব ওয়ার্ডের জমি।
একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই জমির চারপাশে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় স্বভাবতই প্রতিষ্ঠানটির দখলে ছিলো এসব জমি। এক পর্যায়ে জমি নিয়ে কোর্ট অব ওয়ার্ডসের সাথে আবাসন প্রতিষ্ঠানটির ঝামেলা হয়। এ পর্যায়ে ঝোপ বুঝে কোপ মারেন সবুর খান।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে জমি নেওয়া হলে অনেক ঝামেলা এড়ানো যাবে এমন ভাবনা থেকে কোর্ট অব ওয়ার্ড প্রশাসনের জমিকে ড্যাফোডিলসের স্থায়ী ক্যাম্পাস গড়ে তোলায় উদ্যোগী হন তিনি।
এ পর্যায়ে জমি কেনা-বেচা নিয়েও চলতে থাকে নানা কৌশল।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এসময় আবাসন প্রতিষ্ঠানটিকে নাম মাত্র মূল্যে দিয়ে সবুর খান প্রথমে অল্প কিছু জমি কেনেন সেখানে।
প্রাথমিকভাবে বাধা আসে প্রশাসন থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমির নামজারী করাতে গেলে বিপত্তি আসে। কোর্ট অব ওয়ার্ডের জমির মালিকানা পরিবর্তন সম্ভব নয় বলে স্থানীয় ভূমি প্রশাসন সাফ জানিয়ে দিলে নিজেদের জমি রক্ষায় এগিয়ে আসে কোর্ট ওয়ার্ডস প্রশাসন। জবর দখলকারী হিসেবে মামলা দায়ের করা হয় ড্যাফোডিলস ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে।
এরপর শুরু হয় সবুর খানের অপতৎপরতা। মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমে যাতে না আসে সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হাবিব কাজল নেপথ্যে থেকে ভ’মিকা পালন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে অনেককে ম্যানেজ করতে না পারায় বেশ কয়েকটি দৈনিকে চলে আসে এ খবর।
সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সাংবাদিক ম্যানেজ করার নামে মোটা অংকের অর্থও হাতিয়ে নেন এই কাজল।
এদিকে, বিতর্কিত জমিতে স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রক্রিয়া শুরুর বৈধতা দিতে কখনো শিক্ষার্থীদের পিকনিক কখনো বা সমাবর্তনের নামে সেখানে নেওয়া হয় সরকারি কর্মকর্তা থেকে মন্ত্রী ও জনপ্রতিনিধির।
সূত্র মতে, যেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস করা হচ্ছে সেখানকার জমিই কেবল বিতর্কিত নয় পাশাপাশি যাতায়াত ব্যবস্থাও নাজুক। দুর্গম আর ভাঙ্গাচোরা রাস্তা পার হয়ে দ্বিতীয় বারের মতো সেখানে যেতে অতিথিদের অনেকেই অনীহাও প্রকাশ করেন।
এদিকে, স্থায়ী ক্যাম্পাসের নামে কেবল সরকারি জমি দখল করেই ক্ষান্ত হয়নি প্রতিষ্ঠানটি। পাশে থাকা অন্য খাসজমিগুলোও নিজেদের নামে বরাদ্দ দেবারও আবদার করেছে তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সরকারি ভূমি প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষার নামে জমি দখলের চেষ্টায় নেমেছে ড্যাফোডিল।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি জমিতে প্রতিষ্ঠানটি একের পর এক অবৈধ স্থাপনা গড়ে যাচ্ছে তা প্রশাসনের জানা। তবে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় ও জনপ্রতিনিধিদের ম্যানেজ করায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
তার ভাষায়, সকলেই উল্টো তদবির করে বলেন, সরকারি জায়গায় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মন্দ কি! তবে শিক্ষা বাণিজ্যের জন্যে সরকারি জমি কোনভাবেই হাতিয়ে নেয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী নজরুল ইসলাম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নৈতিক বিষয়টি উপেক্ষা করে সমাজের দুর্নীতিবাজরা সরকারি জমি দখল করে প্রথমে জনস্বার্থের কথা বলে জনগণের সহানুভূতি আদায় করেন। পরে সেখানে বাণিজ্য ফেঁেদ বসেন।
অন্য একটি সূত্র বাংলানিউজকে বলেছে, বিতর্কিত এসব জমিতেই স্থায়ী ক্যাম্পাসের নামে যেসব স্থাপনা গড়ে তুলেছে ড্যাফোডিলস ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তার কোনটিরই অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
যোগাযোগ করা হলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের একজন সদস্য বাংলানিউজকে জানান, সাভারে কোনো ইমারত এমনকি সাধারণ কোন স্থাপনা করতে হলে তার আগে অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। অনুমোদন না নেওয়া হলে তা অবৈধ হবে।
নান্দনিক স্থাপনার আড়ালে শিক্ষা বাণিজ্যের ফাদ পাতা হচ্ছে-এমন মন্তব্য করে স্থানীয় একজন ইউপি সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, কোন খাত থেকে কিভাবে কার জমি কেনা হলো তার তদন্তের সময় এসেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে এভাবে সরকারি জায়গা জমি দখলের মহোৎসব এখনোই বন্ধ করা উচিৎ।
এদিকে স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যম কর্মি বাংলানিউজকে জানান, সরকারি জায়গা জমি নিয়ে রিপোর্ট করার জন্যে যোগাযোগ করা হলে কোন তথ্য না দিয়ে বরং নানা হুমকি ধমকি দিয়ে সাংবাদিকদের প্রতিহত করেন ড্যাফোডিলস ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক আনোয়ার হাবিব কাজল। এর সঙ্গে কাজলের ‘খাম বাণিজ্য’ও চলছে।
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের ডেকে তাদের যাতায়াত খরচ দেবার কথা বলে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ তুলে তা নিজেই লোপাট করেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিক।
বাংলাদেশ সময় ১৪৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৪
** আত্মীয়করণে মান হারাচ্ছে ড্যাফোডিল!
** অব্যবস্থাপনা ঢাকতে শিক্ষার্থীদের হাতিয়ার করছে ড্যাফোডিল!
** ড্যাফোডিল কোচিং সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়!