ঢাকা: এসএসসি-এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ না থাকায় পুনঃনিরীক্ষণের কারণে আবেদন করেও কাঙ্খিত ফল পাচ্ছে না পরীক্ষার্থীরা। আর জিপিএ তথা গ্রেড পয়েন্ট এভারেজে ফল প্রকাশের রীতিতে পুনঃনিরীক্ষণে নম্বর বাড়লেও ফল পরিবর্তিত হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের।
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পুনঃনিরীক্ষণের ফল বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানিয়েছেন শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং শিক্ষার্থীরা।
গত ১৫ জুন ২০১৪ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে সারা দেশের ৪২৬ জন শিক্ষার্থী ফেল থেকে নতুন করে পাস করেছে, ফল পরিবর্তিত হয়েছে এক হাজার ৬৭৫ জনের।
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার বদলে পুনঃমূল্যায়নের।
গত ১৭ মে আটটি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ফল প্রকাশিত হয়। মোট ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করে ১৩ লাখ ৩৩১ জন। গড় পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন। ওই পরীক্ষা ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে চলে মার্চ ২২ পর্যন্ত।
ফল প্রকাশের পর প্রতি বিষয়ের জন্য ১২৫ টাকা ফি দিয়ে পরীক্ষার্থীরা টেলিটক মোবাইল থেকে গত ১৮ থেকে ২৪ মে পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে।
এবার ১০ শিক্ষাবোর্ডে এক লাখ ৫৯ হাজার ৯১০টি বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষার জন্য আবেদন পড়ে। ১২৫ টাকা হিসেবে বোর্ডগুলোর আয় হয়েছে ১ কোটি ৯৯ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা।
এর মধ্যে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে ২ হাজার ৩২৬ জনের ৫১ হাজার ২৩ আবেদন পড়ে। ফল পরিবর্তিত হয় ৫৯৪ জনের। পাস করে ৩৬ জন। আর নতুন করে জিপিএ-৫ পায় ১৬৪ জন।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে ৬ হাজার ৯২৬ পরীক্ষার্থীর ১৪ হাজার ৭৮০টি আবেদন পড়ে। ফল পরিবর্তিত হয় ১২০ জনের এবং পাস করে ২০ জন। নতুন করে জিপিএ-৫ পায় ২৮ জন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ১১ হাজার ৯২৭টি বিষয়ের আবেদনে ১১৩ জনের ফল পরিবর্তিত হয়। ১৪ জন পাস করে যাদের ২১ জন জিপিএ-৫ পায়।
সিলেট শিক্ষাবোর্ডে ৭ হাজার ১৩২টি আবেদনে পরিবর্তন আসে ৫৪ জনের ফল। পাস করে ৭ জন। আর ৯ জন নতুন করে জিপিএ-৫ পায়।
যশোর শিক্ষাবোর্ডে আবেদন পড়ে ২০ হাজার ৭২টি। পরিবর্তিত হয় ৯৪ জনের ফল। ১৯ জন পাস করে এবং জিপিএ-৫ পায় ১৭ জন।
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ১৪ হাজার ১৬৪টি আবেদনে পরিবর্তন আসে ১৬৪ জনের ফল। নতুন করে পাস করে ২৯ জন এবং ২৯ জন জিপিএ ৫ পায়।
বরিশালে ৪ হাজার ১৮০টি আবেদনে ৬১ জনের ফল পরিবর্তিত হয় এবং ২০ জন নতুন করে পাস করে। আর ১৮ জন জিপিএ-৫ পায়।
দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে ১০ হাজার ১৮৫টি আবেদনে ৮০ জনের ফল পরিবর্তিত হয়। ২১ জন নতুন করে পাস এবং ২৫ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত হয়।
কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে ৮ হাজার ৬০৯টি আবেদন জমা পড়ে। ১৬৭ শিক্ষার্থী ফেল থেকে পাস এবং ১৮৪ জনের ফল পরিবর্তিত হয়। আর জিপিএ-৫ পায় ৩ জন।
মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করে ২৫০ জনের ফল পরিবর্তিত হয়। আর নতুন করে পাস করে ৬৬ জন। ১৯ জনের নতুন করে জিপিএ-৫ এ ফল পরিবর্তিত হয়।
আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম বাংলানিউজকে জানান, পুনঃনিরীক্ষণে চারটি বিষয়ের ওপর নজর দেওয়া হয়।
উত্তরপত্রের নম্বর গণনা বাদ পড়েছে কি না, কভার পেজে ভেতরের নম্বর ওঠানো ভুল হয়েছে কি না, নম্বরের বৃত্ত ভরাট বাদ গেছে কি না- এসব বিষয় দেখা হয়।
আর কোনো শিক্ষার্থী আবেদন করে বেশি নম্বর পেলেও জিপিএ পদ্ধতিতে এক গ্রেড থেকে অন্য গ্রেডের নম্বরের দূরত্ব বেশি থাকায় ফল পরিবর্তিত হয় না- এ বিষয়টি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষায় দেখা গেছে বলে জানান একাধিক বোর্ডের কর্মকর্তা।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৬০ দিনের মধ্যে তাড়াহুড়ো করে ফল প্রকাশের কারণে উত্তরপত্র মূল্যায়নে অধিক সংখ্যক ভুল হচ্ছে। এতে পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ থাকছে উত্তরপত্র মূল্যায়ন।
পুনঃনিরীক্ষণে ত্রুটির কথা স্বীকার করেন আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম।
প্রতি বছর অধিক সংখ্যক পরীক্ষার্থী বৃদ্ধির কারণে উত্তরপত্র পুনঃমূল্যায়ন সম্ভব নয়, বলেন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এসএম ওয়াহিদুজ্জামান।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি তাসলিমা বেগম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৪