ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: কর্তব্য-কাজে অবহেলার জন্য ক্যান্টিন বয়দেরকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুক।
গত ২০ জুন তিনি এ নির্দেশ দিয়ে হলে একটি নোটিশ জারি করেন।
বেত্রাঘাতের বিষয়ে নোটিশ পেয়েছেন বলে জানান জিয়া হলের ক্যান্টিন পরিচালক মো. সাহাবুদ্দিন।
তবে তিনি এ বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আ ব ম ফারুকএ প্রতিবেদকের ওপর চটে গিয়ে বলেন, তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক। তোমাদের প্রটোকল বুঝতে হবে। কোনো বিষয় নিয়ে সরাসরি প্রভোস্টের কাছে ফোন দিতে পারো না। এটা রীতিমতো অভদ্রতা।
বেত্রাঘাতের নির্দেশ সম্বলিত নোটিশে প্রভোস্টের স্বাক্ষর ছিল।
এ বিষয়টিতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ছাত্রদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে অনেক কিছুই করতে হয়।
প্রভোস্টের অভিযোগ, সাংবাদিকরাও শুধু ‘ছিদ্র’ খোঁজার কাজে ব্যস্ত। ভালো কাজ তাদের চোখে পড়ে না।
প্রভোস্ট বলেন, হলে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। কই সেটা নিয়েতো কোন পত্রিকা রিপোর্ট করলো না। আর একটু ‘ছিদ্র’ পেয়েছো, অমনি প্রভোস্টকে ফোন দিয়েছো।
পরে অবশ্য তিনি নোটিশের কারণ ব্যাখ্যা দেন।
অধ্যাপক ফারুক বলেন, ক্যান্টিনে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করায় বারবার সতর্ক করা হয়েছে। জরিমানাও করা হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু তাতেও কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার জন্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের কর্মচারী ও ক্যান্টিনের কর্মচারীরা বলেন, ঘটনার দিন হল প্রভোস্ট ক্যান্টিন পরিদর্শনে যান। এ সময় ক্যান্টিন বয়দের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ক্যান্টিন বয়রা ক্যান্টিন পরিচালকের পক্ষ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর থেকে পরিচালকের পক্ষে কথা বললে বেত দিয়ে মারা হবে বলে ক্যান্টিন বয়দের জানান প্রভোস্ট।
পরিদর্শনের পর নিম্মমানের খাবার পরিবেশন করার অভিযোগে ক্যান্টিনের পরিচালককে ২ হাজার টাকা এবং বেসিনে সাবান না রাখায় আরও ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিয়া হলের ক্যান্টিনে ২০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মধ্যে ১০-১২ জনই শিশু।
বাংলাদেশ শিশু আইন’২০১৩ এর ৭০নং ধারা অনুযায়ী শিশুদের আঘাত করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার বিধান রয়েছে।
আঘাতের ফলে কোনো শিশু শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে পাঁচ বছর কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
একজন শিশু কর্মচারী বাংলানিউজকে বলে, আমরা পেটের দায়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখানে কাজ করি। ক্যান্টিন পরিচালকের বিরুদ্ধে কথা বললে চাকরি থাকবে না। আবার পরিচালকের পক্ষে কথা বললে প্রভোস্ট স্যার বেত দিয়ে মারার কথা বলেছেন। তাহলে আমরা কই যাবো।
ক্যান্টিনে শিশু শ্রমিক রয়েছে। এ বিষয়টি প্রভোস্টের জানা আছে কি-না, জানতে চাইলে প্রভোস্ট বলেন, বিষয়টি আমি জানি। কিন্তু ক্যান্টিনের পরিচালককে বারবার নিষেধ করার পরও শোনে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জিয়া হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ক্যান্টিনে যেসব শিশু কাজ করে, তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র। শিশুশ্রম বেআইনি হলেও তাই বিষয়টি সবাই মেনে নেয়। কিন্তু তাই বলে বেত্রাঘাতের নির্দেশ! বিষয়টি খুবই অমানবিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৪