ভুল তথ্য প্রদান করার কারণে দেশের টেলিভিশন রেটিং (টিআরপি) প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এমআরবি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তথ্য সরবরাহ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। টেলিভিশনের দর্শকপ্রিয়তা যাচাইয়ের উপায় হিসেবে এমআরবি সাপ্তাহিক ভিত্তিতে যে টিআরপি তথ্য প্রদান করতো তা এই আদেশের মাধ্যমে বন্ধ করা হলো।
ইতিপূর্বে টিআরপির নির্ভরযোগ্যতার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে আসছিলেন। এর মধ্যে একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন ঢাকা যুগ্ম জেলা জজ আদালত এই রায় প্রদান করেন। আদালতের রায়ের মাধমে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। গণমাধ্যমে সর্বস্তরের সংশ্লিষ্ট সবাই এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, দেশের টেলিভিশন শিল্প রক্ষায় এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৩০টি চ্যানেল আছে, আরও বেশকিছু চ্যানেল সম্প্রচারের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু কোন টেলিভিশনের অনুষ্ঠান সর্বাধিক জনপ্রিয়, তা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি। টেলিভিশন রেটিং পয়েন্টস বা সংক্ষেপে টিআরপি ধারণাটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের টিভি দর্শকদের কাছে এটি খুব একটা পরিচিত নয়। তবে দেশে টিআরপির ধারণাটি নতুন হলেও ইতিমধ্যে এটি বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং বিজ্ঞাপনদাতাদের দৃষ্টিতে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছিলো। পাশাপাশি টিআরপির ফলে বিজ্ঞাপনদাতা ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন বলেও অনেক টিভি চ্যানেল কর্তাব্যক্তির অভিযোগ ছিলো। এর মূল কারণ মিটারের স্বল্পতা, রিপোর্ট প্রদানের অসচ্ছতা এবং লিয়াজো স্থাপন করা।
এসব কারণে দেখা যাচ্ছিলো বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের অনেক মানসম্পন্ন অনুষ্ঠানও দর্শকপ্রিয়তা পাচ্ছে না। আবার একটি সাধারণ অনুষ্ঠানের দর্শক অকল্পনীয়। মাঝে মধ্যে এমনও হয়েছে, এক চ্যানেলে প্রচারিত নাটকের চেয়ে ওই সময়ে অন্য চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের দর্শক অনেক বেশি থাকে। ফলে এই প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা এবং নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার।
গত কয়েক বছরের জরিপ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের সঙ্গে টিআরপি বাড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছে। যে চ্যানেলের অনুষ্ঠান এক সপ্তাহে প্রথম হয়, পরের সপ্তাহে সেই একই অনুষ্ঠান দেখিয়ে সেই চ্যানেলের অবস্থান হয় ১৫ নম্বরে। আবার এরকম নজিরও দেখা যায়, পরপর ছয় ঈদে শীর্ষে থাকে যে চ্যানেলটি সপ্তম ঈদে তার অবস্থান ১০ নম্বরে।
এমআরবির জরিপ হাতে পেতে চাইলেও চ্যানেলকে গুনতে হয় টাকা। বার্ষিক গ্রাহক হওয়ার নাম করে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে ফি নিচ্ছিলো ভ্যাট ব্যতীত ১২ লাখ টাকা। আর অনুষ্ঠান নির্মাতা ও প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কাছে টিআরপি হলো বিভীষিকারূপী দৈত্য বিশেষ! কারণ এর উত্থান বা পতনই তাদের অনুষ্ঠানের দীর্ঘায়ু অথবা মৃত্যু ঘটাতে পারে। এ কারণে অনেক সময় দেখা যায়, খুব জনপ্রিয় একটি অনুষ্ঠানও টিআরপির অভাবে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।
এর বাইরেও বিদেশি চ্যানেল প্রীতির নিদর্শন তো আছেই। বাংলাদেশের টিভি দর্শক বছরজুড়ে টিভি অনুষ্ঠান কম দেখলেও বিভিন্ন উৎসবের অনুষ্ঠান রুটিন করেই দেখেন। তাদের উদ্ভট জরিপে এমনও দেখা গেছে ঈদের সময় পিক আওয়ারের বিরতিহীন অনুষ্ঠানের দর্শক থেকে একই সময়ে ভারতীয় বস্তাপচা অনুষ্ঠানের দর্শক বেশি। ফলে দেশীয় টিভির বিজ্ঞাপন মূল্য কমে যাচ্ছে। আর বিজ্ঞাপন মূল্য কমার কারণে মানহীন হচ্ছে দেশীয় টিভির অনুষ্ঠানগুলো। সর্বোপরি দর্শক হারাচ্ছে টিভি চ্যানেল।
গত ৩ জুন বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) এমআরবি তথা সিরিয়াসের এই জরিপ বর্জন করে। তাদের ভাষ্য, এমআরবি’র জনপ্রিয়তা যাচাই পদ্ধতি বিজ্ঞানসম্মত নয়। তবে ভালো কোনো জরিপ প্রতিষ্ঠান দেশে গণযোগাযোগের যে কোনো মাধ্যমের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে বলেও জানান তারা।
বাংলাদেশ সময় : ১৮২৭ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬
জেএইচ