ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

গফুর হালীর ‘সোনাবন্ধু’ গানের ‘বিকৃতি’, ক্ষোভ

সোমেশ্বর অলি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
গফুর হালীর ‘সোনাবন্ধু’ গানের ‘বিকৃতি’, ক্ষোভ আবদুল গফুর হালী, ‘বিকৃত’ গানের দুই নবাগত নায়ক-নায়িকা

নতুন প্রবণতা হলো, বিখ্যাত কোনো গানের এক বা দুই লাইন নিয়ে নতুন গান বানানো। বিষয়টিকে রীতিমত ট্রেন্ড করেছে টলিউড। এর শিকার হয়েছে বাংলাদেশের বিখ্যাত অনেক গানের কথা ও সুর। এই তালিকায় আছে ‘তোমার ঘরে বাস করে কারা’, ‘সাধের লাউ’ প্রভৃতি গানগুলো। 

এবার যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘নূর জাহান’-এ ‘বিকৃতভাবে’ উপস্থাপন করা হলো কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ প্রয়াত আবদুল গফুর হালীর বিখ্যাত গান ‘সোনাবন্ধু’। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন হালীর পরিবারের সদস্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই।

 

সম্প্রতি ইউটিউবে উন্মুক্ত করা হয়েছে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস, রাজ চক্রবর্তী প্রডাকশন ও জাজ মাল্টিমিডিয়া প্রযোজিত ছবিটির প্রথম গান, যার নাম ‘সোনাবন্ধু’। গফুর হালীর লেখা ও সুর করা শেফালী ঘোষের গাওয়া গানটির প্রথম দুই লাইন (সোনাবন্ধু তুই আমারে করলিরে দিওয়ানা/মনে তো মানেনা দিলে তো বোঝে না) ব্যবহার করা হয়েছে এতে। এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে নতুন কথা। হালীর দুই লাইনের ক্ষেত্রে মূল সুরকে অনুসরণ করা হয়নি বরং ‘বিকৃত’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবদুল গফুর হালী একাডেমির সেক্রেটারি ও সাংবাদিক নাসির উদ্দিন হায়দার। একই সঙ্গে এ নিয়ে ফেসবুকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই।  

২৩ জুলাই দুপুরে এ নিয়ে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কল্যাণী ঘোষ বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘আমি শুনেছি সুর বিকৃত করার ব্যাপারটি। আবদুল গফুর হালী জীবদ্দশায় শক্তভাবে আমাদের বলে গিয়েছেন যে, তার গান কেউ না গাইলে না গাইবে। কিন্তু কোনোভাবেই কথা বা সুর বিকৃত করা যাবে না। তার মৃত্যুর কিছুদিন পর তেমনটিই ঘটছে? আমি ব্যক্তিগতভাবে এর তীব্র নিন্দা জানাই। ’

নাসির উদ্দিন হায়দার বাংলানিউজকে বলেন,  ‘অাবদুল গফুর হালী চাটগাঁইয়া গানের প্রধানতম রূপকারদের একজন। সত্তরের দশকে গফুর হালী চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ছয়টি নাটক রচনা ও মঞ্চায়ন করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক ছিলো ‘গুলবাহার’। ১৯৭৬ সালে এই নাটক ঢাকা-চট্টগ্রামসহ সারা দেশে মঞ্চায়িত হয়। পংকজ বৈদ্য সুজন (সোনা মিয়া) ও  অঞ্জু ঘোষ (গুলবাহার)  ছিলেন এই নাটকের নায়ক-নায়িকা। নাটকে শেফালী ঘোষের কণ্ঠে ‘সোনাবন্ধু’ গানটি ছিলো সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের একটি। সেটি সত্তরের মাঝামাঝি শেফালী ঘোষের কণ্ঠে গ্রামোফোন রেকর্ডে বের হয়। সেই থেকে গানটি চিরসবুজ আঞ্চলিক গান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। পরে গায়ক সন্দীপনও এটি সুন্দরভাবে গেয়েছিলেন। এমন একটি সমাদৃত গানের বিকৃত উপস্থাপনা মেনে নেওয়া যায়না। ’

আবদুল গফুর হালী একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, ‘শেফালী ঘোষ, শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের মতো কালজয়ী শিল্পীর উত্থান হয়েছে গফুর হালীর গান গেয়ে। তার গান নিয়ে আমেরিকা-জার্মানিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণা হচ্ছে। তেমন একজন শিল্পীর গান অনুমতি ছাড়া গাওয়া, বিকৃত করা চরম ধৃষ্টতা। আমরা একাডেমি ও পরিবারের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছি, ভবিষ্যতে যাতে এভাবে কেউ কোনও শিল্পীর গান বিকৃত না করে। ’

আবদুল গফুর হালীর নাতি মাইনুল হক জুয়েল বলেন, ‘গানটি করার আগে জাজ কোনও রকম অনুমতি নেয়নি। আবদুল গফুর হালী তার প্রতিটি গানকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। বিকৃত করা তিনি কোনো মতেই সহ্য করতেন না। জাজ শুধু গান বিকৃত করেনি, গানে নতুন কথা বসিয়ে গানের গীতিকার ও সুরকার হিসেবে নতুন দু’জনের নামও দিয়েছে। ’

অভিযোগের ব্যাপারে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ বলেন, ‘আমরা অনুমতি নিয়েছি। এ ব্যাপারে গায়ক সন্দীপন ভালো বলতে পারবেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ’

গায়ক সন্দীপন বলেন, ‘আজিজ ভাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। যথাযথভাবে অনুমতি নেওয়ার জন্য আবদুল গফুর হালী একাডেমির সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিই। এরই মধ্যে সেখানে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পাঠানোর কথা। বাকিটা আমার জানা নেই। ’

নাসির হায়দার আজিজ ও সন্দীপনের বক্তব্য শুনে বলেছেন, ‘গান তৈরির আগে অনুমতি নিতে হয় বলে জানি। তারা মুক্তির দু’দিন আগে এ ব্যাপারে আমাদের জানিয়েছেন। ফল তো দেখতেই পাচ্ছেন! গানটি ছবিতে ব্যবহার হবে শুনে আমরা খুশিই হয়েছিলাম, তাই বলে এভাবে?’

* ‘নূর জাহান’ ছবিতে ‘সোনাবন্ধু’ গানের ভিডিও: 

* শেফালী ঘোষের গাওয়া ‘সোনাবন্ধু’: 

আরও পড়ুন>>>
প্রকৃতিই আমার গুরু, বললেন গফুর হালী

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭   
এসও 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।