ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

নারী খেলোয়াড় তৈরির কারিগর যে একাডেমি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৪
নারী খেলোয়াড় তৈরির কারিগর যে একাডেমি

পঞ্চগড়: গত রোববার (১০ মার্চ) নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে টাইব্রেকারে ৩-২ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী দল। এই দলে খেলে কৃতিত্ব অর্জন করেছে পঞ্চগড়ের চার নারী খেলোয়াড়।

দাপটের সঙ্গে খেলে বিজয় ছিনিয়ে আনায় আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের নাম। তাদের সফলতার গল্পের পেছনে রয়েছেন পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা ফুটবল একাডেমির ফুটবল কারিগর মোফাজ্জল হোসেন বিপুল।

জানা গেছে, সম্প্রতি নেপালে অনুষ্ঠিত এই চাম্পিয়নশীপে অংশগ্রহণকারী পঞ্চগড়ের চার নারী ফুটবলারের মধ্যে বোদা উপজেলা ফুটবল একাডেমির রয়েছে তিন নারী খেলোয়াড়। তারা হলেন- আলপী, বৃষ্টি রায় এবং শিউলী রায়। আরেকজন সাফে সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জেতা ইয়ারজান বেগম।

পঞ্চগড়ের নারীরা ক্রীড়াঙ্গনে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের এগিয়ে নিতে ২০১৮ সালে এই একাডেমি চালু করেন মোফাজ্জল হোসেন বিপুল। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে অনুর্ধ-১৯ সাফ চাম্পিয়নশিপে খেলেছিলেন বোদা ফুটবল একাডেমির তৃষ্ণা রানি ও নুসরাত জাহান মিতু।

বোদা উপজেলা ফুটবল একাডেমির ফুটবল কারিগর (কোচ) মোফাজ্জল হোসেন বিপুল বাংলানিউজকে বলেন, নিজের আত্মবিশ্বাস গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে ফুটবল খেলায় তরুণীদের এনেছি। কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
 
ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়তে বেশ কাঠখড় পোহাতে হয়েছে শিউলী রায়, আলপী ও বৃষ্টি রায়কে। শুরুর দিকে পরিবারকে তেমনভাবে পাশে পাননি তারা। এছাড়া প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর কটু কথারও শিকার হয়েছেন। তবু হাল না ছেড়ে, ছুটেছেন স্বপ্নের পেছনে।

বোদা ফুটবল একাডেমিতে এখন প্রায় শতাধিক নারী ফুটবলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হলেও নিজ স্বপ্নের পথে হাঁটছেন এই নারী ফুটবলাররা।  

বিপুল বাংলানিউজকে বলেন, আমার এই একাডেমি থেকে অনেক খেলোয়ার জাতীয় থেকে শুরু দেশ ও বিদেশের মাঠে খেলছে। এতে আমাদের ও জেলার নাম উজ্জল হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের পথচলার প্রথম ধাপ অনেক কষ্টের ছিল। স্থানীয়রা ও অভিভাবকরা মেয়েদের খেলাকে ভালো চোখে দেখতেছিল না। তবে অভিভাবকেরা আমার উপর বিশ্বাস রেখে তাদের সন্তানদের একাডেমিতে পাঠাতো। আর আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন আমাদের এই একাডেমিতে বর্তমানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি হয়ে পড়েছে।

একাডেমিটি নিয়ে স্থানীয়দের মুখে কেবলই প্রশংসার বাণী। উম্মে হাবিবা হীরা বাংলানিউজকে বলেন, আসলে আমরা যে যুগে আছি সেখানে ছেলে মেয়ের কোন তফাৎ নেই। আমার সন্তান এই একাডেমিতে খেলে। আমি দেখেছি বিভিন্ন সময় এখানকার মেয়ে খেলোয়াড়রা স্থানীয়দের কাছে বিভিন্ন কথা শুনেছে। মূলত গ্রামের মানুষ মেয়েদের খেলাকে ভালো চোখে দেখতো না। তবে এই একাডেমির হাত ধরে জাতীয় পর্যায়ে ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় মেয়েরা খেলে দেশের নাম উজ্জ্বল করায় এখন সকলের নাম উজ্জ্বল হয়েছে।

পঞ্চগড় জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা গৌতম কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি সময়ে নারী ফুটবল জাগরণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে আমাদের পঞ্চগড়ের মেয়েরা। এ সমস্ত মেয়েরা বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলছে। সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে আমাদের প্রমীলা ফুটবল একাডেমি বোদা ও পঞ্চগড় সদরের টুকু ফুটবল একাডেমিসহ বিভিন্ন একাডেমি। আর এসব মেয়ে খেলোয়ারদের তৃণমূল পর্যায় থেকে বের করে আনতে আমরা সবসময় কাজ করে যাচ্ছি।  


বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০২৪

এএইচএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।