রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে দীর্ঘ এক যুগের সম্পর্কের ইতি টানলেন লুকাস ভাসকেস। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি আবেগঘন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বিদায় জানান এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।
২০০৭ সালে রিয়াল মাদ্রিদের যুব দলের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে যোগ দিয়েছিলেন এই তরুণ। সেখান থেকে ধাপে ধাপে উঠে এসেছিলেন কাস্তিয়া দলে, যেখানে তার সতীর্থ ছিলেন কারভাহাল, মোরাতা, হেসে, নাচো, সারাবিয়া ও হোসেলু—রিজার্ভ ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাচ হিসেবে বিবেচিত দলটির অংশ ছিলেন তিনি। ২০১২ সালে দ্বিতীয় বিভাগে সেই দলের উন্নতি তাকে প্রথম দলের নজরে নিয়ে আসে। এরপর এস্পানিওলে এক বছর ধারে খেলার পর ২০১৫ সালে মাত্র ১০ লাখ ইউরোয় রিয়াল মাদ্রিদ তাকে পুনরায় দলে ভেড়ায়—যা পরবর্তীতে এক ‘বড় সাইনিং’ হিসেবে মূল্য পায়।
রাফা বেনিতেসের অনুরোধে ভাসকেসকে ফিরিয়ে আনা হলেও, জিনেদিন জিদানের অধীনে তার প্রকৃত বিকাশ ঘটে। ২০১৬ সালে মিলানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে আতলেতিকোর বিপক্ষে টাইব্রেকারে ঠাণ্ডা মাথায় নেওয়া স্পটকিকে অনেকের চোখে ভাসকেস হয়ে ওঠেন মাদ্রিদের নির্ভরতার প্রতীক। সেই থেকে শুরু—২০১৬-১৭ মৌসুমে যখন রিয়াল লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে, তখন মাঠজুড়ে তার প্রভাব ছিল অসামান্য। গোলের অ্যাসিস্ট, প্রতিপক্ষের ওপর হাই প্রেসিং আর নিঃশ্বাসহীন ছুটে চলা—সব মিলিয়ে ছিলেন দলের 'ক্যাটালিস্ট'। পরে কারভাহালের ইনজুরির সময় রাইট-ব্যাক হিসেবেও নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন দক্ষতার সঙ্গে।
ভাসকেসের সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তার আত্মত্যাগ ও দায়িত্বপালনের মনোভাব। কখনও শুরু একাদশে, কখনও বদলি, আবার কখনও কৌশলগত সমাধান হিসেবে—তিনি নিজের ভূমিকা মেনে নিয়েছেন নির্ভরতার সঙ্গে। এমনকি যখন মাঠে প্রধান নায়ক ছিলেন না, তখনও দলের সাফল্যে ছিলেন সবচেয়ে প্রাণঢালা উদযাপনকারীদের একজন। তার এই নিঃশব্দ নিবেদন ও পেশাদার মনোভাব তাকে রিয়াল ড্রেসিংরুমে এক আদর্শ ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৩০০টিরও বেশি ম্যাচ খেলে ভাসকেস জিতেছেন ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৪টি লা লিগা, ৫টি ক্লাব বিশ্বকাপ, ৪টি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ, ৪টি স্প্যানিশ সুপার কাপ এবং একটি কোপা দেল রে—যা তাকে ক্লাব ইতিহাসের অন্যতম সফল খেলোয়াড়দের কাতারে স্থান দিয়েছে।
নিজের বিদায়ী ভিডিওবার্তায় ভাসকেস বলেন, “আমি রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ছি, কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদ কখনও আমাকে ছাড়বে না। যেখানে যাব, গর্বের সঙ্গে বলব—আমি পৃথিবীর সেরা ক্লাবের জার্সি গায়ে জড়ানোর সম্মান পেয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর যাত্রায় পাশে থাকার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। ”
এমএইচএম