ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

ম্যারাডোনা থেকে মেসি: চমকে দিয়ে বার্সাকে বিদায় বলেছেন যারা

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
ম্যারাডোনা থেকে মেসি: চমকে দিয়ে বার্সাকে বিদায় বলেছেন যারা ছবি: সংগৃহীত

লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়তে চান এটা এখন পুরনো খবর। আগামী কয়েকদিন হয়তো কাতালুনিয়ায় এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের শেষ কয়েকদিন হতে যাচ্ছে।

 

ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা ও সফল এই ফুটবলারের বিদায়ের খবরে বার্সা সমর্থকদের মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা। তবে এমন চমকে দিয়ে সেরা তারকাদের ক্যাম্প ন্যু ছাড়ার ঘটনার মুখোমুখি সমর্থকরা আগেও হয়েছেন। তেমনই কয়েকজন কিংবদন্তির দুঃখজনক বিদায়ের দিকে নজর বুলিয়ে নেওয়া যাক-

দিয়েগো ম্যারাডোনা
মেসির চেয়ে বহু বছর আগে বার্সার জার্সিতে খেলেছেন ম্যারাডোনা। সেই ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত খেলেও এই আর্জেন্টাইন কিংদবন্তি ওই অল্প কয়েক বছরে যা করেছেন তাকে ‘ম্যারাডোনা যুগ’ বলা হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী তারকাও বোর্ডের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণেই বিদায় নিয়েছিলেন।  

কাতালুনিয়া ছেড়ে ম্যারাডোনা পাড়ি জমান ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলিতে। সেখানে গিয়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেন তিনি। একের পর এক সাফল্য এনে দিয়ে নাপোলিকে তিনি ইউরোপের জায়ান্টে পরিণত করেন। এজন্য সেখানে তাকে এখনও ‘ফুটবল ঈশ্বর’ বলে মানা হয়।

বার্ড শুস্টার
জার্মান মিডফিল্ডার তার ফুটবল জাদুতে বার্সা সমর্থকদের মোহিত করে রেখেছিলেন। তবে ১৯৮৬ সালে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায়। পেনাল্টি শুট আউটে প্রথম শটটি তার নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ৮৫তম মিনিটে তাকে তুলে নিয়েছিলেন কোচ টেরি ভেনাব্লেস। রেগে আগুন হয়ে মাঠে ছাড়েন শুস্টার এবং সেখান থেকে সোজা চলে যান টিম হোটেলে। পরে এই ঘটনার জেরে তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেন সেসময়ের ক্লাব প্রেসিডেন্ট হোসে লুইস নুনেস।

মাইকেল লর্ডুপ
কোচ ইউহান ক্রুইফের সঙ্গে খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিল না মাইকেল লর্ডুপের। পরে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদে 
পাড়ি জমান তিনি। সেখানে দুই মৌসুম কাটিয়ে ১৯৯৫ সালে লিগ শিরোপা জেতার স্বাদ পান।

রোমারিও
বার্সেলোনার ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলার ছিলেন রোমারিও। কিন্তু ক্লাবের আরও অনেক সেরা খেলোয়াড়ের মতোই এই ব্রাজিলিয়ানকেও বিষাদ সঙ্গী করে বিদায় নিতে হয়। ক্লাবের কিংবদন্তি কোচ ক্রুইফের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির ফল হিসেবে ১৯৯৪-৯৫ মৌসুম শেষে বিদায় বলে দেন তিনি।  

১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের জার্সিতে বিশ্বকাপ জেতার পর কিছুটা বিশ্রাম চেয়েছিলেন রোমারিও। দলের প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতে হাজিরও হননি তিনি। দেরিতে হাজির হওয়ায় যা হওয়ার তাই হয়েছিল।

রোনালদো
বার্সার সাবেক কোচ ববি রবসনের ব্যক্তিগত পছন্দ ছিলেন রোনালদো নাজারিও। ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী স্ট্রাইকার প্রথম মৌসুমেই ৪৯ ম্যাচে ৪৭ গোল করে ইংলিশ কোচের আস্থার প্রতিদানও দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্লাবের কাছ থেকে প্রাপ্য সম্মান পাচ্ছিলেন না বলে বিদায় বলে দেন। পরে ১৯৯৭ সালে ট্রান্সফার ফি’র রেকর্ড গড়ে ২৫ মিলিয়ন ইউরোয় তাকে কিনে নেয় ইন্টার মিলান। ইতালিয়ান ক্লাবটিতে গিয়েই তার কিংদবন্তি হওয়ার শুরু হয়েছিল।

লুইস ফিগো
রিয়াল মাদ্রিদের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছিল লুইস ফিগোর। তবে পর্তুগিজ কিংদবন্তির বার্সা ছাড়ার পেছনে কারণ ছিল ভিন্ন। ক্লাবের কাছ থেকে আরও ভালো একটি চুক্তি আশা করেছিলেন তিনি। ফলে অভিমান নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদে ফ্লোরেন্তিনো পেরেসের ‘গ্যালাক্টিকো’ প্রজেক্টে যোগ দেন তিনি। তার ট্রান্সফার ফি ছিল ৬১ মিলিয়ন ইউরো!

রোনালদিনহো
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ক্লাব ক্যারিয়ারে নিজের স্বর্ণযুগ কাটিয়েছেন বার্সেলোনায়। এমনকি একমাত্র বার্সা খেলোয়াড় যাকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের মাঠ এস্তাদিয়ো বার্নাব্যুর দর্শকরা দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত পার্টিপ্রীতির জন্য তাকে বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেন সেসময়ের কোচ পেপ গার্দিওলা। ২০০৮ সালে তাকে ২৫ মিলিয়ন ইউরোয় এসি মিলানের কাছে বিক্রি করে দেন তিনি।

জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ
২০০৯ সালে ৭৮ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি’র বিনিময়ে ক্যাম্প ন্যুয়ে আসেন ইব্রাহিমোভিচ। কিন্তু ওই মৌসুম শেষেই তাকে এসি মিলানের কাছে মাত্র ২৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে বেচে দেয় বার্সা। মূলত কোচ গার্দিওলার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতিই এই বিদায়ের কারণ। আরও একটা কারণ আছে। ওই সময় সুইডিশ তারকার পছন্দের সেন্টার স্ট্রাইকার পজিশনে নিয়মিত খেলা শুরু করেছিলেন মেসি।

নেইমার
বার্সেলোনায় নিজের ক্যারিয়ারের সেরা সময় কাটিয়েছেন নেইমার। মেসি ও সুয়ারেসের সঙ্গে তার ‘এমএসএন’ ত্রয়ী ছিল ইউরোপীয় ফুটবলের সবচেয়ে ভয়ংকর আক্রমণভাগ। সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেন এই ত্রয়ী। কিন্তু মেসির ছায়া থেকে বের হওয়ার জন্য এবং পিএসজির কাতারি পেট্রো ডলারের টানে ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে যান এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।  

সেই থেকে এই ২৮ বছর বয়সীকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু সফল হয়নি। নেইমার নিজেও ফেরার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু তার কোনো প্রচেষ্টাই আলোর মুখ দেখেনি। তবে সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে নেইমারকে পিএসজিতেই সুখী মনে হয়েছে। আপাতত তার প্যারিস ছাড়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।